সূচীপত্র
-
গল্প কিছু – অল্প কথায়: শ্রীপর্ণা নিয়োগী শিকদার/ শিশিরকুমার নিয়োগী
-
তিতাস একটি নদীর নাম, একটি নিবিড় পাঠ /অলোক কুমার সাহা
-
Haraprasad Shastri, A study on creative works and literary criticism/ অলোক কুমার সাহা
-
উত্তরবঙ্গের কৃষিজীবন/ডঃ নৃপেন্দ্র লস্কর
-
মেঘ মুলুকের কথা/সুপর্ণা পালচৌধুরী
-
অখিলম্ মধুরম্/লক্ষ্মী নন্দী
-
বসন্তের প্লাটফর্ম/বেলা দাস
-
আমার রূপনগরে লাল ওড়না/সঞ্জয় সোম
-
আমার দ্রোহ আত্মদ্রোহ ও অন্যান্য/সঞ্জয় সোম
-
বিষন্ন সময়/নীলাদ্রি বিশ্বাস
-
শুধু তোমারই জন্য/সমীর কুমার দাস
-
জলজ্যোৎস্নার মেয়ে/মানিক সাহা
-
উত্তরজনপদবৃত্তান্ত/সুবীর সরকার
-
সুরমা কলিং/শৌভিক রায়
পাঠকদের কলম নিঃসৃত কিছু শব্দ যখন সবার অগোচরে মাধুকরীর পাতায় ঝরে পড়ে, ঠিক তখনি প্রবাসী বাঙালিদের সঙ্গে কোথায় যেন একটা সম্পর্কের সূত্রপাত ঘটে। ভৌগোলিক দূরত্বের সীমানা ছাড়িয়ে এমন একটা বাতাবরণ তৈরি হয় যে আমরা পাঠকেরা কাছাকাছি আসি, পরিচিতি ঘটে। অনুপম সৃষ্টির পাশাপাশি সাহিত্য রসের অমৃত ধারায় আমরা অবগাহন করি।
আমরা বাঙালি। তাই বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত আমাদের সত্ত্বা। কর্মসুত্রে আমরা আজ বিচ্ছিন্ন। সারা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকলেও বাংলা সাহিত্যের রূপ-রস-গন্ধে আমরা কিন্তু একই সুত্রে বাঁধা।
এখনো আমাদের সত্ত্বায় রবীন্দ্রনাথ, মাইকেল, বঙ্কিমচন্দ্র, নজরুল বিরাজমান। সুনীল, শীর্ষেন্দু, সঞ্জীব, সমরেশ, জয়-দের সৃষ্টিধর্মী লেখনীর সঙ্গে আমরা যুক্ত। বর্তমান প্রজন্মের শ্রীজাত বাংলা সাহিত্য জগতে এক নতুন সংযোজন।
আমাদের সকলেরই একটু আধটু লেখার অভ্যাস হয়ত আছে। তাই মাধুকরীর মূল লক্ষ্য সাহিত্যের মাধ্যমে এই লেখকদের সঙ্গে প্রবাসী বাঙালিদের একটা মেলবন্ধন তৈরী করা। মানুষে মানুষে হৃদ্যতা বাড়ানোর মূল মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে মাধুকরীর প্রাণশক্তি নিহিত রয়েছে আপনাদের সৃষ্টি, সদিচ্ছা ও ভালবাসায়। আশা রাখি আপনাদের শুভেচ্ছা ও ভালবাসায় আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সাফল্যমণ্ডিত হয়ে উঠবে।
মাধুকরীর এই আড্ডায় রয়েছেন....
-
লোপামুদ্রা মিত্র (শিল্পী)
-
জয় সরকার (সুরকার)
-
মৃণাল বসুচৌধুরী (কবি)
-
রেহান কৌশিক (কবি)
-
বীথি চট্টোপাধ্যায় (কবি ও লেখিকা)
-
বিভাস রায়চৌধুরী (কবি ও সাহিত্যিক)
-
রাজিয়া সুলতানা (কবি)
-
অমিত গোস্বামী (কবি ও লেখক)
-
সোনালি (কবি)
-
শাশ্বতী নন্দী (গল্পকার ও ঔপন্যাসিক)
-
শ্রীকান্ত আচার্য্য (শিল্পী)
-
উপল সেনগুপ্ত (শিল্পী - চন্দ্রবিন্দু)
-
সৌমিত্র রায় (শিল্পী - ভূমি)
-
অর্চন চক্রবর্তী (শিল্পী - এ ফাইব),
-
গৌতম-সুস্মিত (গীতিকার)
-
মিস জোজো (শিল্পী)
-
প্রসেনজিত মুখার্জী (প্রসেন) গীতিকার
-
শাশ্বতী সরকার (সঞ্চালিকা, আবৃত্তিকার)
-
কুণাল বিশ্বাস, তিমির বিশ্বাস (শিল্পী - ফকিরা)
গৌতম সুস্মিত
সাক্ষাৎকার
প্রায় ১৫০ এর বেশী বাংলা ছবিতে গান লিখেছেন, ১৫টি পুরষ্কার ওনার ঝুলিতে, অসংখ্য বাংলা গানের হিট গানের কথাই গৌতমবাবুর। সেটা তরুণ পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর ছবিই হোক বা আর এক সফল বাঙালি সংগীত পরিচালক জিৎ গাঙ্গুলীই হোক। গৌতমবাবুর এই সফলতার কাহিনী শুনতেই হাজির হয়েছিলাম ওনার হাওড়ার ফ্লাটে। অমায়িক গৌতমবাবুর সঙ্গে কথাতেই জানা গেল অনেক অজানা কাহিনী। মাধুকরীর পুরানো সংস্করণে বেশ কয়েক বছর আগে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। নতুন সংস্করণে সাক্ষাৎকারটি আবার প্রকাশিত হল।
পুজো কেমন কাটল –
এবারের পুজোটা আমার খুবই ভাল কেটেছে। পুজোতে যা টুকটাক উদ্বোধন করার থাকে সেগুলো তো করেছি। তাছাড়া পুজো পরিক্রমাতে কলকাতা টি ভি আর কলকাতা কর্পোরেশনের জয়েন্টলি শ্রেষ্ঠ শারদ সম্মানের যে আয়োজন করেছিল তাতে বিচারক হিসাবে পঞ্চমী, ষষ্টী, সপ্তমী মিলিয়ে প্রায় ৩২টা পুজো কভার করেছি। কলকাতা পুজোর বেশীরভাগই এখন থিমের ওপর চলে এসেছে। কিছু কিছু সাবেকি পুজোও আছে। আমরা বিশেষ করে বারোয়ারী পুজো কভার করেছি। থিমের মধ্য পরিবেশ, গ্লোবাল ওয়ার্মিং কিছু কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার ওপর পেয়েছি। ওভারঅল পুজোটা আমার খুব ভালই কেটেছে।
গান লিখছো কত বছর?
গান লেখাটা আমার একটা কো-ইন্সিডেন্ট বলতে পারো। বম্বেতে আমার এক প্রতিবেশী ছিলেন। যদিও ওখানে এখানকার মত পাড়া কালচার নেই। তবুও আমার পাশে এক বাঙালি পরিবার ছিল। কলকাতা থেকে ত্রিদিব চৌধুরী নামে এক ভদ্রলোক সুরকার হতে বম্বে গিয়েছিলেন। ওনাকে আমি আমার গড ফাদার হিসাবেই দেখি। যেহেতু ছোটবেলা থেকে একটু একটু লেখালেখির কাজ করি তাই আমাকে ডেমো তৈরী করার জন্য কিছু গান লিখতে বললেন। তা গান কি করে লিখতে হয় তা আমি জানতাম না। কিছু দিন উনি দেখিয়ে দেবার পর ব্যাপারটা আয়ত্ব করলাম। সেই থেকে শুরু। সালটা ৯৩-৯৪ হবে ।
এই প্রফেশনে এলে কি এইভাবেই –
ঠিক তাই। ঐ লিখতে লিখতে। উনি সুর করতেন আর আমি লিখতাম। এইভাবেই কেটে যেত।
গানের কথা নিয়ে আজকাল একটু চর্চা হচ্ছে – তোমার কি মতামত
আসলের গানের কথা তো কিছুটা সময়ের ওপর নির্ভর করে। তুমি তো দেখছ এখনকার কথাগুলো কত আলাদা। যে সব কথা আগেকার সময় ছিল না এই যুগের কাছে আছে। বলতে গেলে অনেক কিছুই তো নেই। সেই শিল্পী কোথায়, সেই উত্তম কুমার নেই। এমন তো নয় শুধু গানের কথার মান নেমে গেছে আর সব ঠিক আছে। সেই পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌরিপ্রসন্ন –রা নেই। একটু খেয়াল করে দেখ ইংরাজী গানের ক্ষেত্রেও হয়েছে। পুরোন দিনের কথায় যে ডেপথ ছিল এখন তা নেই। আমার তো মনে হয় যুগ অনুযায়ী গানের কথা ঠিক আছে।
জিৎ গাঙুলীর সুরে তোমার বেশ কিছু হিট গান। তুমি থাক হাওড়ায় আর জিৎ বম্বে, কর্ডিনেট করো কি করে?
হ্যটস অফ জিৎ। স্যালুট করা উচিত। জিৎ একটা মরা গাঙে জোয়ার এনেছে। একটা ট্রেন্ড সেট করেছে। মাঝখানে বাংলা ছবির গান শ্রোতারা শুনতেন না । জিৎ আসাতে এই ব্যাপারটা অনেকটার পরিবর্তন ঘটেছে। জিৎ বম্বে থাকলেও আমি কলকাতায় ওর সঙ্গে বসি। আমার লেখা নিয়ে ও বম্বে গিয়ে ট্র্যাক তৈরি করে। যখন বম্বে যাই ওর সঙ্গে রোজই কন্ট্যাক্ট থাকে। কোন পরিবর্তন করতে হলে একসঙ্গে করতে এক সঙ্গে করে ফেলি।
কাজ করতে করতে এমন কোন সিচুয়েশন এসেছে যে তোমাকে ইমিডিয়েট কিছু একটা করতে হবে, আর পুরো প্রজেক্ট তো তোমার জন্য অপেক্ষা করছে – একবার তো শুনেছিলাম...
পুজোর একটা অ্যালবামে এরকম একটা সিচুয়েশন হয়েছিল। এই অবস্থা আগেকার দিনের মানুষ ভাবতেই পারতেন না। আমার কাছে একটা বম্বের মিউজিক কম্পানির ফোন এসেছিল। দু-ঘন্টার মধ্যে ১২টা গান চেয়েছিল। ভেবে দেখ তুমি মাত্র!!! ২ ঘন্টা ... গান গাইবেন কুমার শানু, সুরকার বাবুল বোস।
"সুর করেছিলেন বাবুলদা, বাবুল বোস। উনি বাবুলদাকে বললেন – ‘কেমন লাগছে তোর’? বাবুলদা বলল – ‘না তো দিদি ঠিকই তো আছে’। আশাজী বলে উঠলেন – ‘যাঃ তোদের সব কান খারাপ হয়ে গেছে। আমি ভুল গেয়েছি আমি আবার গাইব’। উনি আবার ফ্লোরে গেলেন, বাবুলদা আমাকে বলল – দেখলি কি ডেডিকেশন। এর যদি শতকরা পাঁচ ভাগও আজকালকার শিল্পীদের থাকে না সে উতরে যাবে। গানটা যা ভুল আছে বলে দিদি বলছিলো না, সেটা কোন ভুলই না"
অ্যালবামটা নাম কি?
‘উল্টোপুরাণ’। এটা টি সিরিজ থেকে বেরিয়েছিল। যে সময় ফোনটা এসেছিল তখন আমি কলকাতায়, বাবুলদা ছিলেন বম্বেতে আর শানুদা ছিলেন মিডিল ইষ্টে, কাতারে। শুধু তাই নয় শানুদা আরো কয়েকটা দিন কাতারে থাকবেন। ভাবতে পারো দু-দিনের মধ্যেই আমাদের প্রজেক্টটা শেষ হয়। শানুদা কলকাতায় এসে ডাব করেন আর সেই অ্যালবাম ‘উল্টোপুরাণ’ পুজোতে রিলিজ করে। পরে কলকাতায় প্রেস কনফারেন্সে শানুদার পাশে বসে এই কথা বলেছিলাম। আজকালকার দিনে সিস্টেমটা এত ডেভালপ্ট হওয়াতে এটা সম্ভব।
এ তো গেল তোমার বাংলা আধুনিক গানের কথা, শুনেছি বাংলা সিনেমার গানের ক্ষেত্রেও তাই হয়...
হয় তো প্রচুর হয়। আমি একটা ঘটনার কথা বলছি। এই বছরেই রিলিজড ছবি ‘বল না তুমি আমার’ ছবির টাইটেল সং ‘মানে না মানে না, মানে না কোন বারণ’ এর গল্পটা বলি। গানটার ডাবিং হয়ে গেছে। পুরো ইউনিট সিংগাপুরে শুটিং এ চলে গেছে। দেব হল ছবির নায়ক। রাত্রি বারোটা নাগাদ সুরকার জিৎ গাঙুলী ফোন করে জানালো – পুরো মুখরাটাই চেঞ্জ করতে হবে। আমি লিখে ওকে ফোনে জানালাম। ও শিল্পী ডেকে আনলো। রাত তিনটের সময় সেই গান চলে গেল শুটিং এর জন্য। পরেরদিন শুটিং হল। মাঝে মধ্যেই এই ধরনের চাপে কাজ করতে হয়।
এখন কি করছ?
কিছু কিছু ছবির কাজ চলছে। নামগুলো বলতে পারছি না। কারণ সবগুলো আন টাইটেল্ড অবস্থায় রয়েছে। পরপর প্রায় দশ বারোটা ছবি বেরবার কথা। তামিল ছবি ‘পকিজম’ এ আমার একটা বাংলা গান আছে। বাঙালি মেয়ে একটা তামিল ছেলেকে ভালবাসে। ছবিতে ঐ নায়িকা একটা বাংলাতে গান গাইবে। সুর করেছেন সাবেশ মুরলি বলে একজন।
বাংলা গান লিখছ তো বেশ কয়েক বছর – ভবিষ্যৎ কেমন?
আমার তো মনে হয় বেশ ভাল। কিছু কিছু গান মানে জীবনমুখী এসেছিল আবার চলেও গেছে। ব্যান্ডের বাজার চললেও সেই ভাল বাংলা মেলোডি গান, মিষ্টি মিষ্টি গানের কথা কিন্তু সারাজীবন থেকে যাবে।
বাংলা গীতিকারদের মধ্যে কার লেখা তোমাকে অনুপ্রাণিত করে? হিন্দীতে কাকে গুরু মানো?
কিছু কিছু লেখা সবারই তো ভাল। গৌরিপ্রসন্ন মজুমদার আই লাইক মোস্ট। হিন্দীতে বলতে পারো আনন্দ বক্সী।
"পুজোর একটা অ্যালবামে এরকম একটা সিচুয়েশন হয়েছিল। এই অবস্থা আগেকার দিনের মানুষ ভাবতেই পারতেন না। আমার কাছে একটা বম্বের মিউজিক কম্পানির ফোন এসেছিল। দু-ঘন্টার মধ্যে ১২টা গান চেয়েছিল। ভেবে দেখ তুমি মাত্র!!! ২ ঘন্টা ... গান গাইবেন কুমার শানু, সুরকার বাবুল বোস
গান লেখার বাইরে কিছু করো?
ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই রে ভাই। অনেকটা সময় গানের পিছনেই চলে যায়। ছবির স্ক্রিপ্টের অফার এলেও হাতে সময় থাকে না।
তোমার লেখা কয়েকটা অ্যালবামের নাম বল?
শানুদার ‘উল্টোপুরাণ’, কবিতার ‘অনুরাগী আমি’। তাছাড়া নতুন কিছু শিল্পীদের আছে। তাছাড়া ‘পালটে গেল দিন’ বলে একটা অ্যালবাম করেছি। শিল্পী তাপসী চৌধুরী। উনি অভিনেত্রী হিসাবে পুরোনো। গানটা ওনার একটা ট্যলেন্ট বলতে পারো। ওনার সঙ্গে অনেক বড় শিল্পীই গেয়েছেন। শানুদাও আছেন।
সুরকার জিৎ গাঙুলী সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা –
ওকে আমি সুরকার জিৎ গাঙুলী হওয়ার আগে থেকেই চিনি। আমরা খুবই ফ্রেন্ডলি পরিবেশে মধ্যেই কাজ করি। আর ওর সঙ্গে সিটিং করতে গেলে ও এত খাওয়ায় যে কি বলবো। পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর বলে গৌতম এটা খাবে ওটা খাবে। গুড হিউম্যান বিং।
আর পরিচালক ‘রাজ চক্রবর্তী’..
রাজের প্রথম তিনটে ছবিতে আমি কাজ করেছি। ও খুব ভাল পরিচালক। ওর মধ্যে একটা ভাল কিছু করার খিদে আছে। ও কি করতে চাইছে সেটা ওর কাছে খুবই পরিষ্কার। কয়েকটা ছবির সিটিং এ ওকে দেখেছি, ও খুবই ভাল ছেলে। ওর মধ্যে কোন কনফিউশন দেখিনি।
আশা ভোঁসলের সঙ্গে ও তো কাজ করেছ, তোমার লেখা গানও তো উনি গেয়েছেন...
আশাজীর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা ভালই। ওনার সঙ্গে আমি প্রথম কাজ করি প্রসেঞ্জিত আর রচনার ‘অন্ধ প্রেম’ ছবিতে। উনি দুটি গান গেয়েছিলেন। শানুদার স্টুডিও তে রেকর্ডিং হচ্ছিল। তা আশাজী আসবেন বলে অন্য শিল্পীদের ডাকা হয় নি। উনি আসার পরই সবার সঙ্গে আলাপ করে দিলেন। আমার প্রথম গানের কথা ছিল – ‘ভালবাসি কথাটা সোনা মুখে বলতে নেই, চোখে চোখে যা দেখা, মনে মনে যা বোঝা বুঝে নিলে যেই, ভালবাসি কথাটা সোনা মুখে বলতে নেই’। শানুদার সঙ্গে ডুয়েট। গানটা রেকর্ড হওয়ার পর আশাজী গানটা পুরোটা শুনলেন। তারপর উঠে স্টুডিওর দরজাটা একটু ফাঁক করে বাইরে গিয়ে বললেন আবার চালাও গানটা। ফিরে এসে সুরকারকে বললেন –
সুরকার কে ছিলেন –
সুর করেছিলেন বাবুলদা, বাবুল বোস। উনি বাবুলদাকে বললেন – ‘কেমন লাগছে তোর’?
বাবুলদা বলল – ‘না তো দিদি ঠিকই তো আছে’। আশাজী বলে উঠলেন – ‘যাঃ তোদের সব কান
"আসলের গানের কথা তো কিছুটা সময়ের ওপর নির্ভর করে। তুমি তো দেখছ এখনকার কথাগুলো কত আলাদা। যে সব কথা আগেকার সময় ছিল না এই যুগের কাছে আছে। বলতে গেলে অনেক কিছুই তো নেই। সেই শিল্পী কোথায়, সেই উত্তমকুমার নেই। এমন তো নয় শুধু গানের কথার মান নেমে গেছে আর সব ঠিক আছে"
খারাপ হয়ে গেছে। আমি ভুল গেয়েছি আমি আবার গাইব’। উনি আবার ফ্লোরে গেলেন, বাবুলদা আমাকে বলল – দেখলি কি ডেডিকেশন। এর যদি শতকরা পাঁচ ভাগও আজকালকার শিল্পীদের থাকে না সে উতরে যাবে। গানটা যা ভুল আছে বলে দিদি বলছিলো না, সেটা কোন ভুলই না।‘ সত্যি কথা বলতে কি আশাজী নিজের ওপর এতটাই নির্মম ছিলেন যে তিনি আবার সেটা গাইলেন। তবে আমাদের একটা ভয় ছিল। আশাজী ধূপের গন্ধ একদম সহ্য করতে পারতেন না। আমরা সেদিন ফ্লোরে কোনরকম রুম ফ্রেসনার ব্যবহার করি নি। শানুদার স্টুডিওটা নতুন হওয়াতে একটা নতুন কাঠের গন্ধ ছিল। শানুদারও এটা নিয়ে একটু দ্বিধা ছিল যে আশাজী আবার চলে না যান। তবে তেমন কিছু ঘটে নি।
শানুদাকে নিয়ে কিছু বল?
শানুদা আমার খুবই প্রিয় শিল্পী। আমি শানুদাকে ব্যক্তিগতভাবে খুব ভালভাবেই জানি। শানুদার সুরে ‘বেশ করেছি প্রেম করেছি’ ছবিতে আমিই গান লিখেছি। মানুষ হিসাবে শানুদা খুবই ভাল। ভীষণ আবেগ প্রবণ। চট করে সবাইকে ভালবেসে ফেলেন। জীবনে হয়ত অনেক আঘাত পেয়েছেন। ভগবান অন্যদিকে শানুদাকে হাত খুলে দিয়েছেন। শানুদার মধ্যে আমি ‘কুমার শানু’ ব্যাপারটা দেখি নি। যদি তুমি ওনার কাছে যাও তোমার কখনই মনে হবে না যে এত বড় এত সফল একজন শিল্পীর সঙ্গে বসে আছ। গানের ব্যপারে আর কি বলব বল তো, সে তো তুমিও জানো। কথা বলে বোঝানো যাবে না।
আটলান্টায় শানুদা একবার শিল্পী প্রিয়া ভট্টাচার্য্যের সঙ্গে প্রোগ্রাম করছিল। ‘শাস ভি কভি বহু থি’ সিরিয়ালে গান গেয়ে প্রিয়া বেশ নাম করেছিলেন। উনি বলছিলেন শানুদা যখন স্টেজে গাইছিলেন তখন মনে হচ্ছিল প্রতিটি শব্দেই যেন রোমান্স উথলে পড়ছে। এতটাই আবেগপ্রবণ মানুষ শানুদা।
আর একটা ঘটনার কথা বলছি। বম্বেতে জলাসাঘর বলে শানুদার একটা অ্যালবাম বেরিয়েছিল। অ্যালবামটাতে রতন সাহার লেখা একটা গান ছিল ‘জানি না তোমার সাথে হবে না আর দেখা’। রিলিজের আগে আমি একটা কপি পেয়েছিলাম। এই সময় শানুদাও তার ব্যাক্তিগত জীবনে একটা ঝড় সামলাচ্ছেন। ডিভোর্স চলছে। ছাড়াছাড়ির পর্যায়ে চলে গেছে। মিডিয়াও এইটা নিয়ে মুখর। শানুদার এই গানটা শুনে মনে হল যে এই মানুষটার চেয়ে দুঃখী বোধহয় আর আর কেউ নেই। শানুদার সামনে দিয়েই যেন সব চলে গেল। মাসিমা মানে আমার বন্ধুর মা ছিলেন একজন কিংবদন্তী নাট্যকারে বোন। গানটা শুনেই মাসিমা বলেই ফেললেন – ‘এই গানটা শুনেও কি ওর বউটা ওর কাছে ফিরে আসতে পারে না? আরে ও তো একটা পাগল”। শানুদা কুমার শানু হয়েছে এই অনুভব, এই আবেগের জন্য। কোথায় নোট কম লেগেছে, কোথায় সুর কম লেগেছে এ তো পৃথিবীর সব শিল্পীরই আছে। একটা সময় যা গেয়েছেন সবই তো হিট। এখন না হয় শানুদার গান নেই। যারা সমালোচনা করেন তাদের বলতে চাই শানুদা যা হিট দিয়েছেন তার শতকরা দশ ভাগ করে দেখান। আগে তো শানুদার দশটা গানের মধ্যেই দশটা গানই হিট হত, এখন তো শিল্পীদের দু-তিনটে গান হিট করলেই মাটিতে পা পড়ে না।
শানু-অলকা ইয়াগ্নিকের জুটি তো বেশ হিট...
একদম ঠিক। ওদের দুজনের একটা অদ্ভুত ভয়েস পেয়ার ছিল। যেটা অসম্ভব হিট করেছে। ঐ সময় ওই রকম একটা জুটি খুব কমই এসেছে। দে আর মেড ফর ইচ আদার।
বাংলার নতুন হিরো দেবকে কেমন লাগল – তোমার গানে তো দেব ভালই করছে দেখলাম ।
দেবের আসল নাম দীপক অধিকারী। দেব তো পরে হয়েছে। টালিগঞ্জে একটা কথা চালু আছে। আমি নাকি দেবকে ইন্ট্রোডিউজ করেছি। একদিন কলকাতার এক স্টুডিওতে একজন বর্ষীয়ান এডিটর স্বপন গুহ দেবকে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। সঙ্গে ছিলেন সুরকার অশোক ভদ্র। দেবকে দেখে ভাল লাগল। দেখ লম্বা চওড়া, দেখতে সুন্দর। তারপর আলাপ শুরু হল। ও তখন অলরেডি একটা বাংলা বইতে কাজ করে ফেলেছে। থাকত উত্তর কলকাতায়। যাতায়াত শুরু হল। যখন বন্মেতে থাকত, আমি গেলে এক ডাকে চলে আসত। তা একদিন ভেঙ্কটেশ ফ্লিমসের শ্রীকান্তর সঙ্গে কথা বলতে বলতে ওর কথা বলি। উনি বললেন – ‘ঠিক আছে, আমাকে ছেলেটাকে একবার দেখিয়ে দিও তো’। দেব তখন বম্বেতে কিছু শো করছিল। তারই একটা অ্যালবাম শ্রীকান্তকে দেখাই। তারপর আমার থেকে ফোন নাম্বার নিয়ে দেব শ্রীকান্তর সঙ্গে দেখা করে। ‘আই লাভ ইউ’ বলে একটা ছবিতে সাইন করে। এখন তো বেশ নাম করেছে।
"শান তো গাইছেই। তাছাড়া নতুনদের মধ্যে জাভেদ আলি (এ আর রহমানের সুরে ‘যোধা আকবর’ ছবিতে ‘কহেনা কো যশনে বাহারা হ্যায়’ গেয়ে বেশ নাম করেছেন) আছে। বম্বেতে যারা আছেন সবাই ভাল। কলকাতার একটি নতুন ছেলে সুজয় ভৌমিক ভাল গাইছে। রাঘবও আমার কথায় গান গেয়েছে"
দেব অভিনীত ‘চ্যালেঞ্জ’ তো বেশ হিট –
‘চ্যালেঞ্জ তো আছেই। তাছাড়া ‘মন মানে না’, ‘বলো না তুমি আমার’ ওর হিটের তালিকায় আছে। রিসেন্ট ছবি ‘দুই পৃথিবী’ অবশ্য অতটা হিট হয়। দেব এখন ইয়ং ছেলেমেয়েদের হার্টথ্রব। ভেরী সাকসেসফুল। মনের দিক থেকে ও খুবই বাচ্চা ছেলে, ছেলেমানুষিতে ভরা। বড্ড কাইন্ড হার্টেড। সোজা জিনিষকে সহজ করে দেখা ওর মহত্ব। চোখের সামনেই উঠল। আরো বড় হোক।
শানের জন্য তো প্রচুর গান লিখেছ, তাই না?
হ্যাঁ, তা তো লিখছিই। প্রথম যখন ওকে দেখি ও শান হয় নি। শানকে আমি এখনও এটা বলি। ওর বোন সাগরিকা আমার কাছে একটা অ্যালবামের ব্যাপারে এসেছিল। দেখি একটা ছেলে বারবার দরজা দিয়ে উঁকি মারছে। কে জিজ্ঞাসা করাতে সাগরিকা বলল – ‘ও আমার ভাই, শান। বড্ড লাজুক। ওকে হাজার ডাকলেও ভিতরে ঢুকবে না। তা আমি সিগারেট ধরাতে গিয়ে দেখি এক লম্বা চুলের অল্প বয়স্ক ছেলে দাঁড়িয়ে। ভিতরে যাও না – লজ্জা পেয়ে শান বলল – না, না, ঠিক আছে। কে জানতো এই লাজুক ছেলেটাই একদিন বলিউডে গান গাইবে। শান ইজ এ ভেরী গুড বয়। খুব সরল, সোজা মনের ছেলে। আর ওর মত স্টাইলিশ সিঙ্গার এখন কোথায়। রেগুলার কিছু না কিছু গাইছে আমার কথায়। যেটা না তো না। একবার চেন্নাই থেকে আমার গানের জন্য ওকে ডাকলাম। বলল – ‘দেখো, গৌতমদা তুমি গানটা কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দাও। একটাও পয়সা নেব না। কিন্তু আমাকে প্লিজ চেন্নাই গিয়ে গাইতে বল না। আমি চেন্নাই গিয়ে গান গাই না।‘ এত পরিষ্কার কথা আজকাল কেউ বলে না।
শান ছাড়া আর কারা ভাল গাইছে –
শান তো গাইছেই। তাছাড়া নতুনদের মধ্যে জাভেদ আলি (এ আর রহমানের সুরে ‘যোধা আকবর’ ছবিতে ‘কহেনা কো যশনে বাহারা হ্যায়’ গেয়ে বেশ নাম করেছেন) আছে। বম্বেতে যারা আছেন সবাই ভাল। কলকাতার একটি নতুন ছেলে সুজয় ভৌমিক ভাল গাইছে। রাঘবও আমার কথায় গান গেয়েছে। বাকিরা বড় শিল্পীরা অন্য ধরনের গান গান। আমি যে ধরনের গান লিখি তাতে ওনারদের সঙ্গে ম্যাচিংটা কম হয়।
শুনেছি গান লিখতে গিয়ে তোমাদের কিছু কিছু অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়...
বাবু যত বলে পারিষদগণ বলে তার শতগুণ –তোমার মনে পড়ে ‘দুই বিঘা জমীন’ এর লাইনটা। আমাদের লাইনটাও তাই। কিছু লোক আছে বুঝুক না বুঝুক কিছু না কিছু চেঞ্জ করতে বলবে। এই ধরণের পরিস্থিতি প্রতি পদে এখানে ফেস করতে হয়। অনেকই তো বাংলা গানের কথা নিয়ে সমালোচনা করেন, কিন্তু তারা এই গল্পগুলো জানেন না। পুরনো দিনের এক নামী সুরকার অজয় দাস খুব অসুস্থ। তা উনি বললেন – ‘তুমি এদের সঙ্গে কাজ কর কি করে ভাই?’
তা চালিয়ে যাচ্ছ কি করে?
চালিয়ে যেতেই হয়। আর উপায় কি। একটা অ্যাডজাস্টমেন্টের মধ্যেই চলতে হয়। তবে এইভাবে তো কাজের মান তো আর বাড়বে না।
তুমি তো এত বছর ধরে গান লিখে আসছ। আমাদের এই বাঙালি সমাজে গান লেখার প্রফেশনটা কোন চোখে দেখে –
এটা একটা খুব ভাল বোল্ড প্রশ্ন করেছ। একটা ঘটনা বলি। আমি বম্বে গেছি। এক বন্ধু ফোন করে বলল – ‘তুই চলে আয়। কলকাতা থেকে বাবা, মা এসেছে, আলাপ করিয়ে দেব।‘ আমার বন্ধুটি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। একটু খামখেয়ালি গোছের। মাঝে মাঝে কাজ করে, মাঝে মাঝে করে না। তা আলাপের পর উঠি উঠি করছি। নিচে নেমে দেখি মেসোমশায় দাঁড়িয়ে। হেসে বললেন – ‘তোমার সঙ্গে আলাপ হয়ে ভাল লাগল। তা বাবা এই গান লেখার বাইরে কি কিছু কর?’ –না বলাতে ভীষণ অবাক হলেন। গলা নামিয়ে বললেন – ‘গান তো লেখো পয়সা টয়সা পাও তো?’ তোমার চলে কি করে? ইত্যাদি ইত্যাদি। ব্যসিক্যালি জানতে চাইলেন যে চারবেলা খেতে পাই কিনা। মধ্যবিত্ত ফ্যামিলিতে প্রথম দিকে সমস্যা এসেছে। আমার পরিবারের এক গুরুজন বলেছেন তুই গান লিখলে আমি লোকের কাছে মুখ দেখাবো কি করে। আজ আমি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হই নি তবে পরিবার থেকে আর কোন অভিযোগ নেই। অ্যাকচুয়ালি নাও দে আর প্রাউড অফ মি।
তোমার পরিবার-
আমি ব্যাচেলার। আমি আর মা থাকি এই ফ্ল্যাটে। আমার ভাল নাম গৌতম ভট্টাচার্য্য। কি করে গৌতম সুস্মিত হলাম তার গল্প তোমায় বলি। বম্বেতে থাকার সময় বাবা মারা গেলেন। ফলে কলকাতায় যাতায়াতটা বেড়ে গেল। হুগলীতে এক সাধুবাবা যাকে আমি গুরু বলে মানি, নামে কম্বিনেশনটা চেঞ্জ করতে বললেন। একদিন খেলার ছলে বোনের নামটা আমার নামের পাশে জুড়ে দি। আমার বোনের নাম সুস্মিতা। হয়ে গেলাম গৌতম-সুস্মিত। এই ঘটনাটা প্রথম জানাই বাবুল সুপ্রিয়কে।
অনেক ধন্যবাদ, গৌতমদা...
তোমাকেও অনেক ধন্যবাদ। মাধুকরী ডট কমের সকল পাঠককে সবার জন্য রইল শুভ কামনা। বাংলা গান শুনবেন, উৎসাহিত করবেন। সবই তো আর খারাপ হয় না, কিছু ভাল গান নিশ্চয়ই পাবেন। তাছাড়া যারা বাইরে আছেন আপনারাও তো ওখানে একটা বাংলা তৈরী করছেন। তা এই দুই বাংলার আত্মিক যোগটা যেন বজায় থাকে। আমরা তো আছি প্লিজ আপনারাও থাকুন।
গৌরব সরকার
বিবিধ ।। মতামত ।। সূচীপত্র
সাক্ষাৎকার
এই মুহুর্তে কলকাতা তথা বাংলার এক অত্যন্ত প্রতিভাবান তরুণ সঙ্গীত শিল্পী গৌরব সরকারের একটি খোলামেলা, প্রাণবন্ত সাক্ষাৎকার আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। কিছুদিন আগেই সময় কাটল ওর বাড়িতে। সময় কাটল হাসি ঠাট্টা আর গল্পের মধ্যে দিয়ে, জানা গেল বেশ কিছু অজানা তথ্য। অতুলনীয় আতিথেয়তার পাশাপাশি ভরে উঠল আমার তথ্যে-ভান্ডার। আশা করি মাধুকরীর সকল পাঠকদের ভাল লাগবে এই সাক্ষাৎকারটি। এই মুহুর্তে গৌরব বাংলার জনপ্রিয় সিরিয়াল নির্মাতা জি বাংলার "সা রে গা মা পা তে" অংশগ্রহণ করেছেন। যারা নিয়মিত বাংলা দূরদর্শনের পর্দায়, জি বাংলার অন্দরমহলে নজর রাখছেন তাদের কাছে এ খবর আর অজানা নয়। মাধুকরীর তরফ থেকে গৌরবকে জানাই অভিনন্দন। ওর সাফল্য কামনা করি।
ছোটবেলা, স্কুল জীবন…
সেট্রাল কলকাতায় পার্ক সার্কাসেই আমার জন্ম ও ছোটবেলা কেটেছে। খুব ছোটবেলা মানে আড়াই বছর বয়স থেকেই গানের প্রতি একটা ভালবাসা জন্মে যায়। তার পিছনে আমার ঠাকুরমার অবদান রয়েছে।
আমার ঠাকুরমা রত্না সরকার সেই সময়ের একজন নামকরা শিল্পী ছিলেন। উনি হেমাঙ্গ বিশ্বাস, নির্মলেন্দু চৌধুরীর সঙ্গে গান গাইতেন। তাছাড়া অনেক ছায়াছবিতে, নাটকেও গান গেয়েছেন। সেই সুবাদেই ঠাকুরমার কাছে অনেক ছাত্র-ছাত্রী আসতেন গান শেখার জন্য। এই গানের পরিবেশেই থাকতে থাকতে আমার গানের প্রতি একটা আগ্রহ জন্মায়। আমার ঠাকুরমার কাছে গান শেখা শুরু। খুব ক্যাজুয়ালভাবে একটা স্নেহের বাতাবরণের মধ্যেই দিয়েই আমার গান শেখা শুরু। ঠাকুরমার বাড়ি খুব কাছে থাকাতে আমার খুব মজা হত। ছুটির দিন সারাদিনই নানা মজা, গানের মধ্যেই কেটে যেত।
আমার পড়াশোনা শুরু হয় পার্কসার্কাসের মডার্ন স্কুলে। ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছি। তারপরে এগারো-বারো পড়েছি সংস্কৃত কলিজিয়েট স্কুলে। সেই ছোটবেলার স্কুলের মজাটা এখনও খুব মিস করি। তাই বছরে একবার না একবার স্কুলে যাওয়ার চেষ্টা করি। শিক্ষকদের সাথে দেখা করি, সোসাল মিডিয়ার দৌলতে বন্ধুদের খুব পাশেই পেয়ে যাই। বাইরে কোথাও মিট করে প্রচুর গল্প গুজব এখনো করি। সেই ভালবাসাতে কিন্তু এখনও টান পড়ে নি। এখন খুব ইচ্ছে করে ছোট হয়ে আবার ঐ স্কুলে চলে যাই।
গানের শিক্ষাগুরু…
আমি ঠাকুমাকে নিয়েই শুরু করি। আধুনিক গানের পাশাপাশি ঠাকুমা নির্মলেন্দু চৌধুরীর সঙ্গে লোকগীতি গাইতেন। আবার তার পাশাপাশি হেমাঙ্গ বিশ্বাসের সঙ্গে গাইবার সময় গণসংগীত গাইতেন। কাজেই বিভিন্ন রকমের গান ঠাকুমার সঙ্গে থাকতে থাকতে শুনেছি, পরে বড় হবার সঙ্গে সঙ্গে নানা জোনের নানা সময়ের গানের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। ঠাকুমার কাছেই বেসিক গান মানে আধুনিক গান শেখা শুরু। কারোর কাছে গিয়ে যে আধুনিক গান শিখতাম তা কিন্তু নয়। ঠাকুমা কিছু কিছু গান শিখিয়ে দিতেন। কখনো বা কোন ক্যাসেটে গানটা শুনে ঠাকুমাকে গিয়ে শোনাতাম। এইভাবেই আধুনিক গানটা শুরু হয়। তাছাড়া আমি ঠাকুমার কাছে প্রচুর ফোক গানও শিখেছি। বিভধীরদ ধারার, বিভিন্ন ভাষার ফোক গান বলতে পারো। বিভিন্ন রাজ্যের বিহার, ওড়িষা, আসাম, পাঞ্জাব এদের নিজস্ব লোকগীতি, এদের স্টাইল। তাই সেই ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন ধারার গান শেখার আগ্রহ আমার খুবই ছিল। সব রকমেরই গান শুনতে খুব ভাল লাগত।
এরপর আমার যখন সাত-আট বছর বয়স আমি রাগ সঙ্গীত শিখতে আরম্ভ করি পন্ডিত আনন্দ গুপ্তার কাছে। প্রায় সাত বছর আমি শিখেছি ওনার কাছে। আমার ক্লাসিকাল বেসটা একদম ওনার হাতে তৈরী। খুবই যত্ন করে শিখিয়েছেন আমাকে। তারপর ধীরে ধীরে কিছু রিয়েলিটি শো-তে গান করা শুরু হয়। পন্ডিত আনন্দ গুপ্তার কাছে শেখা কালীন আমি আই টি সি সংগীত রিসার্চ অ্যাকাডেমীতে অডিশন দিয়ে স্কলারশিপ পাই এবং গান শেখা শুরু হয় পন্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কাছে। ওখানে প্রায় তিন বছর আমি ওনার কাছে গান শিখি। তারপর এক রিয়েলিটি শোতে আমার সাথে আলাপ হয় একজন জনপ্রিয় কম্পোজার গৌতম ঘোষালের সঙ্গে। ঐ রিয়েলিটি শোতেই গ্রুইং চলাকালীন ওনার কাছেই আবার আমার গান শেখা শুরু। তখনই বুঝতে পারলাম যে শুধুমাত্র ক্ল্যাসিকাল গান শিখলেই হবে না, এর পাশাপাশি আমাকে আধুনিক গানটাও শিখতে হবে। মনে হয়েছিল গৌতমবাবুর কাছে আধুনিক গান গাওয়ার টেকনিকগুলো শিখে ফেলতে হবে। প্রায় আট-নয় বছর হয়ে গেছে আমার ওনার কাছে এই আধুনিক গান শেখার চর্চা। এর ফল্রে আমি অনেক কিছু ডিটেলস-এ শিখেছি ওনার কাছে। কিভাবে গাইতে হবে, গানের মানে বুঝে কোথায় থামতে হবে, কোন শব্দের ওপর দম নিতে হবে, গলার ভয়েস কেমন হবে ইত্যাদি ইত্যাদি, নানান খুটিঁনাটি। ক্লাসিকাল রাগ সংগীতের ক্ষেত্রে একটা বন্দিশ যখন কেউ শুনতে বসেন তখন তিনি তার পারদর্শিতা, তার রাগের চলন, তিনি কি রকম সরগম করবেন, কি ভাবে সেটা বিস্তার করবেন এই বিষয়গুলি শোনেন। তাতে অনেক ভাবেই অনেক স্টাইলে গাওয়ায় যায়। আধুনিক গানের সময় সীমা কম থাকায় সুর, কথার গুরুত্ব অনেকটাই থেকে যায়। একজন শিল্পীর কাছে এই অল্প সময়ের মধ্যে গানটা ঠিক করে গাইতে পারছে কিনা সেটাই বড় কথা। সত্যি কথা বলতে কি গৌতমকাকুর কাছে গান শিখতে গিয়ে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। শুধু আমি নই অনেকেই আমারই মত ভীষনভাবে উপকৃত হয়েছেন।
গজলের ক্ষেত্রে আমাকে গুলাম আলি, হরিহরনজী, জগজিৎ সিং ভীষনভাবে ছুঁয়ে যান। গজল, সুফিতে আমি আকৃষ্ট হয়েছি। মন্সুর ফতে আলি খানই প্রথম সুফি গান নিয়ে আসেন বলিউডে। সুফি গানের সঙ্গে পাকিস্তানের শিল্পীদের একটা আত্মিক যোগ রয়েছে। কাজেই আমার কিন্তু সবরকম গানই শিখতে বা গাইতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে একবার পাকিস্তান গিয়ে ওনাদের কাছে শিখে আসি, না হলেও এবার দেখা করে আশীর্বাদ নিয়ে আসি।
কোন ধরনের গান গাইতে তুমি সবচেয়ে পছন্দ কর?
সব রকম গান গাইলেও আমার কিন্তু নতুন বাংলা বা হিন্দী আধুনিক গান গাইতে খুব ভাল লাগে। তার কারণ নতুন কোন গানের কোন রেফারেন্স থাকে না, যেহেতু কেউই গানটা গান নি। যখন আমি গাইছি আমি দেখি আমি কতটা ভাল করে প্রেজেন্ট করতে পারছি। যখন কোন সুরকার কোন নতুন গান তা সিনেমার জন্যই হোক কিংবা অ্যালবাম, টেলি ফিল্ম, বা সিরিয়ালের জন্য গেয়ে শোনাচ্ছেন তখন দুটি জিনিষ আসে - ১) ঠিক ওনার মত গাওয়া বা ২) সুরকার বলে দিলেন এইভাবে গাও, কিংবা দেখ কিভাবে আরো ভাল করা যায়। দ্বিতীয়টাতে অনেক বেশী লিবার্টি থাকে তবে যেহেতু কিছু রেফারেন্স থাকে না, তাই এতে চ্যালেঞ্জটা অনেক বেশী থাকে। গাইতে গিয়ে তখন ঠাকুরমা, গৌতমকাকুর কাছে শেখা গানের খুটিঁনাটি বিষয়গুলো খুবই কাজে লাগে। আমার এই নতুন গান তৈরীর ব্যাপারটা খুব ভাল লাগে।
সাজদা বয়েজ এর কন্সেপ্ট...
২০১৩ সালে সুফি মিউজিক নিয়ে কাজ করার জন্য 'সাজদা বয়েজ' নামে এই সুফি গানের ব্যন্ডটা করা হয়। কারণ আমার মনে হয় সুফি গানের মধ্যে একটা দারুন অ্যাাপিল আছে। শ্রোতারাও খুব পছন্দ করেন। বলিউড, টলিউডের এই গানের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। পাকিস্তান থেকেও শিল্পীরা এসে গাইছেন। যেহেতু ছোটবেলা থেকে ফোক গান শিখেছ্ গেয়েছি তাই একটা শিকড়ের টান তো রয়েই গেছে। তাই ভাবছিলাম যদি সুফি গান নিয়ে যদি কিছু করা যায়। আমার কো আর্টিষ্ট কৌশিকদা (কৌশিক রায় চৌধুরী) আর একজন মিজশিয়ানকে নিয়ে 'সাজদা বয়েজ' শুরু করি। এখন আমাদের দলের ছয়জন সদস্য। ঠিক করলাম মেইনলি সুফি গাইবো, কিছু বলিউড, রেট্র থাকবে। সুফিই হবে আমাদের মেইন ফোকাস। এইভাবেই ছয়জন মিলে আমাদের প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেল। আমাদের একটি নতুন সুফি গান আসছে। আমাদেরই কম্পোজ করা ও গাওয়া। মিউজিক ভিডিওটা খুব তাড়াতাড়ি আসছে। আশাকরি তোমাদের ও খুব ভাল লাগবে।
তোমার গানের অ্যালবাম?
ছোটবেলা থেকেই মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, লতা ম্যাঙ্গেশকার, আরতি মুখোপাধ্যায়, হৈমন্তী শুক্লা এনাদের গান শুনে বড় হয়েছি। তখন মনে হত যদি ওনাদের মত পুজোর সময় কিছু গান করার সুযোগ আসে কোনদিন। ২০১৫ সালে হঠাৎই সোসাল মিডিয়াতে খুব অদ্ভুতভাবে আলাপ হয় প্রদ্যুত মুখোপাধ্যায় বলে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে।উনি থাকেন সুদূর রাশিয়াতে। উনি বললেন - 'একটা নতুন গানের অ্যালবাম করতে চাই, তোমাকে দিয়ে গাওয়াতে চাই, কিভাবে শুরু করা যাবে'। তখন আমার গুরুজী গৌতম ঘোষালের সঙ্গে আলোচনা করে একটা পরিকল্পনা করা হল। কারা লিখবেন, সুর করবেন, কোন কম্পানীর সঙ্গে আমরা যাব, লে আউট কেমন হবে, সি ডির কভার কে করবে... ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপর আমার "ডাকনাম" নামে অ্যালবামটি প্রকাশিত হয়। আমি খুবই ভাগ্যবান যে এই অ্যালবামে সুর করেছিলেন রূপঙ্করদা, শ্রীকান্তকাকু (শ্রীকান্ত আচার্য্য), গৌতমকাকু, দেবগৌতমদা, সৌরিশদা। লিখেছিলেন গৌতমকাকু, অর্ণা কাকিমা (অর্ণা শীল), শ্রীজাতদা। সৌরিশদাও লিখেছিলেন একটি গান। আমার নিজেরও একটা কম্পোজিশন ছিল। 'ডাকনামের' গানগুলো অনেকেই পছন্দ করেছিলেন। এরপর ২০১৬ সালে আমার দ্বিতীয় অ্যালবাম রিলিজ করে। দিল্লীতে থাকতেন এক ভদ্রলোক, নাম কল্পকুমার ঘোষ, মেডিক্যাল ফিল্ডে আছেন। উনি আমার গান শুনে উদ্যোগ নেন। সত্যি বলতে কি এই সময় বাংলা আধুনিক গান আমাকে দিয়ে কেউ করাবেন আমি তো কোন আশাই করি নি। কাজেই ওনাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। এই অ্যালবামেও কাজ করেছেন গৌতমকাকু। আরো বড় প্রাপ্তি ছিল যে আমি সৈকত কুন্ডু ও অমিত বন্দোপাধ্যায়, ওনাদের থেকে দুটি গান পেয়েছিলাম। বাংলা আধুনিক গানে এনাদের দুজনের হিট গান রয়েছে।
সৈকত কুন্ডুর লেখা অনেক গানই রূপঙ্কর গেয়েছেন...
হ্যাঁ, সৈকতদার প্রচুর গান রূপঙ্করদার গলায়। আমি তো রূপঙ্করদার ডাই হার্ট ফ্যান। তাই অনেক অ্যালবাম যারা অনেকেই শোনেন নি, তা আমার কাছে আছে। তাই সৈকতদার লেখা আমার খুব পছন্দের, অমিতদার সুর খুব ভাল লাগত। আমার দ্বিতীয় অ্যালবামের নাম 'উড়ান'। এই অ্যালবামে অর্ঘ ব্যানার্জী নামে এক অল্প বয়সী ছেলে খুব সুন্দর কাজ করেছে। দারুন কম্পোজিশন করেছে। উড়ানের টাইটেল সং টা ওরই লেখা ওরই সুর করা। খুব সুন্দর পরিচ্ছন্ন কাজ। আর একজন হলেন অরুনাশীষ রায়। অরুনাশীষদা নিজেও একজন ভাল শিল্পী, গজল নিয়ে কাজ করেন। ওনার থেকে আমি একটা গান নিয়েছিলাম, লেখেছিলেন রাজীব চক্রবর্তী। রাজীবদা 'একলব্য' ব্যান্ডের জন্য প্রচুর গান লিখেছেন। রাজীবদা, টুনাইদা এক অসাধারণ জুটি। টুনাইদার সঙ্গে এখনো কাজ করা হয় নি। হয়ত পরের অ্যালবামে কাজ করব। সৌরিশদা কম্পোজ করলেন, আমার নিজেও গান ছিল। ভাল লাগল যে দ্বিতীয় অ্যালবামের গানগুলোও শ্রোতাদের ভাল লেগেছে। এই ভাবেই চলছে। আমার তো অ্যালবাম করার খুব ইচ্ছা, কিন্তু ফরম্যাটই যে চেঞ্জ হয়ে গেছে। ডিজিট্যাল মিডিয়াম এসে গেছে, সেই ছোটবেলার ক্যাসেট, সি ডির কন্সেপ্ট আর এখন নেই। গোটা অ্যালবামটাই ইউটিউব বা কোন সোস্যাল মিডিয়াতে শুনে ফেলছে। কাজেই অ্যালবামটা একটা ডিজিট্যাল ফরম্যাটে ফেলে শ্রোতাদের কাছে পৌছে দিলে সেটাই ভাল হবে। ২০১৯ এ আবার একটা অ্যালবাম করার ইচ্ছা আছে। নতুন নতুন গান তো সারা বছর গাইতে থাকি, বিভিন্ন কম্পোজারদের গান। খুবই উপভোগ করি।
প্লেয়ারে, তখন থেকেই রেডিওতে পুজোর গান বাজত। গুরুজনদের মুখেই শুনেছি তারা অপেক্ষা করতেন - মান্না দে, লতা ম্যাঙ্গেশকারের কোন কোন গান আসছে। কয়েকবার শুনেই তারা মনে
"একটা নতুন বাংলা গানের স্লট আসুক, স্ক্রিনিং হোক, অডিশন হোক। যে গানগুলো ভালো সেই গানগুলোই রাখা হোক, কিন্তু রেডিও - টিভিতে নতুন গান শোনানো হোক। কারণ সবাই তো আর ছবির গান গায় না। তাদের গান কি কেউ শুনতে পাবে না। তাহলে সেইসব শিল্পী, সুরকার, গীতিকার রা কোথায় যাবে। "
- গৌরব সরকার
করতে পারতেন, গাইতেন। এখনকার মত তো আর ওনাদের অপশন ছিল না। আজ আমরা যেখান থেকে খুশি যখন খুশি গান শুনতে পারছি। ঐ সময় গান শোনার প্রতি মানুষের তাগিদটা এক অন্যরকমের গুরুত্ব পেত। রেডিও থেকে বিষয়টা এবার এফ এম এ এল। কবীর সুমন, লোপাদি, রূপঙ্করদা, রাঘবদা, শ্রীকান্ত কাকু, আরও অনেক শিল্পীর গান আমি শুনতাম কিন্তু ঐ এফ এম থেকেই। তখন টেলিভিশনেও খুব একটা পেতাম না। এফ এম এই ওনারদের গান শুনতাম। মনে আছে আমি ব্ল্যাঙ্ক ক্যাসেটে গানটা রেকর্ড করে নিয়ে, গানটা লিখে নিয়ে ক্যাসেটের দোকানে গিয়ে কিনে নিতাম। রেকর্ডিংটা খুব একটা ভাল হত না। তাহলেই ভেবে দেখ এফ এমের একটা বিশাল বড় ভূমিকা রয়েছে। একটা নামও করতে চাই্ আমি এ ব্যাপারে শিল্পী শমীক সিনহা। শমীকদার রেডিও স্টেশনে নতুন গানকে জনপ্রিয় করার পিছনে অনেক অবদান রয়েছে। নামী শিল্পীদের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের জনপ্রিয় করে তোলার পিছনে শমীকদার হাত রয়েছে। বর্তমান সময়ে নতুন গানের জন্য কোন জায়গা নেই। নতুন গান তো শোনানোই হয় না বললে চলে। যা চলছে বাংলা সিনেমার গান, ভাল হোক খারাপ হোক চালানো হয়। আমাদের গান বাদ দাও আমাদের আগের প্রজন্ম শ্রীকান্তকাকু, রূপঙ্করদা, রাঘবদা, লোপাদি এনাদের গানও শোনানো হচ্ছে না। হলেও হয়ত খুব কম।
তোমার কি মনে হয় কেন এমন হল...
আগে তো হত, এখন আর হয় না। আসলে ছবিতে প্রচুর পয়সা, প্রায়রিটি তাই ছবির গানগুলিই পায়। তাই তারা বিভিন্ন স্লট কিনে রেখেছেন ছায়াছবির গানের। একটা গানই তুমি বারবার শুনতে পাবে। বলিউডের গানও প্রচুর শোনানো হচ্ছে। কাজেই বাংলা নতুন গানের ফান্ডিং কোথায়। একটা অ্যালবাম করে প্রচুর অর্থের বিনিময়ে এফ এমকে দেওয়ার মত সামর্থ তাদের নেই। আগেকার দিনে তো এমনিই গানটা বাজানো হত। এইদিকটাতে সরকার বা সকলেরই একটু এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে হয়। একটা নতুন বাংলা গানের স্লট আসুক, স্ক্রিনিং হোক, অডিশন হোক। যে গানগুলো ভালো সেই গানগুলোই রাখা হোক, কিন্তু নতুন গান শোনানো হোক। কারণ সবাই তো আর ছবির গান গায় না। তাদের গান কি কেউ শুনতে পাবে না। তাহলে সেইসব শিল্পী, সুরকার, গীতিকাররা কোথায় যাবে।
শিল্পী, সুরকারদের সঙ্গে কাজ করার কোন অভিজ্ঞতা...
অমিত বন্দোপাধ্যায়ের সুরে ছোটবেলায় অনেক গান গেয়েছি। কিন্তু এখন যখন উড়ানের জন্য অমিতদার সুরে গাইলাম তখন বেশ মজা লাগল। ছোটবেলায় মেয়েদের মত গলায় ঐ গানগুলো গেয়েছি, আর এখন গলার পরিবর্তনেই নিজেরই মজা লাগে।
একবার শ্রীকান্তকাকু (শ্রীকান্ত আচার্য্য)র বাড়িতে গেছি ওনার কম্পোজিশনে গাইব বলে। তা উনি দেখে শুনে বললেন ঠিক আছে তোর এই স্কেলে আমি করে নেব। আবার ডাকলেন পরে। তবে একটা কথা বলে রাখি শ্রীকান্তদা কিন্তু ভীষন দেরী করেন গান দিতে। যদি পরের বছর প্ল্যান থাকে তো এই বছর বলে রাখি তবেই আমি পাবো (হাসি)... তারপর একদিন আমাকে ডেকে কাকু বলল দেখ তো সুরটা এইরকম বানিয়েছি, গা তো। আমি তো গাইলাম। সেটা ছিল পুজোর আগে। প্রথম অ্যালবামের ক্ষেত্রে 'ডাকনামে'। কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৪ তেই পুজোর আগে, তাড়াহুড়ো করে আর ২০১৪ এ রিলিজ না করে ২০১৫ এই করি। পরে গিয়ে শুনলাম সেই সুরটা নেই, একটা সম্পূর্ণ অন্য নতুন একটা গান। শ্রীকান্তদা বলল - না রে ওটা ভাল হয় নি। এইটা ভাল লাগছে। সত্যি খুব ভাল গান। তারপর স্টুডিওতে রেকর্ডিং এ শ্রীকান্তদার ভাল লাগার উচ্ছাস দেখে এত ভাল লেগেছিল যে কি বলব। দু একটা জায়গা উনি বলে দিলেন এই রকম উচ্চারণ কর। এত সুন্দর সহজ করে বলে দিলেন সেটা একটা দারুন ব্যাপার। এত বড় একজন মানুষ, ওনার ভাল লাগাটাই আমার কাছে এক বিশাল ব্যাপার।
গ্রাম কেন্দ্রিক শ্রোতা ও শহরের শ্রোতারদের মধ্যে কোন তফাৎ ধরা পড়ে...
হ্যাঁ, তফাৎ তো থাকেই। এখন যদি বল কলকাতায় শ্রোতা যেরকম আগে পেতাম এখন আর পাই না। আগে যেমন কলকাতায় প্রোগ্রাম করে আনন্দ পেতাম সেটার কোথায় যেন একটা ঘাটতি নজরে পড়ছে। যেহেতু গান খুবই সহজলভ্য ওদের কাছে, গান শোনার অভ্যাসটাও আর নেই মনে হচ্ছে। একটা নতুন গান শোনালে বলছে এটা তো চেনা গান না। তারপর একটা জনপ্রিয় গান শোনালেই তারা খুশি হয়ে যাচ্ছেন। খারাপ লাগছে যে ভাল গানের ঘরানা থেকে সরে গিয়ে বাজারের চলতি গান শুনতে চাইছে। আমি সেগুলোও গাইছি, আমার কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু অডিয়েন্সের ভাল গান শোনার কোয়ালিটি যেন কম পাচ্ছি আগের তুলনায়। কিছু কিছু জায়গায় খুবই ভাল লাগে। অনেক ভাল গান গাইতে পারি। গ্রাম বা মফঃস্বলে কিন্তু গান শোনার অভ্যাসটা অনেকটাই উল্লেখযোগ্য মনে হয়েছে। ওনারা ভাল গানের পাশাপাশি বাজারের চটজলদি গান দুটোই কিন্তু খুব সুন্দরভাবে আডপ্ট করেন। যদিও গ্রাম বা শহর যাই বল না কেন, শ্রোতাদের মধ্যে ভাল-মন্দ গান শোনার অভ্যাস রয়েছে বলতে দ্বিধা নেই যে ভাল গান শোনার অভ্যাসটা গ্রাম বা মফঃস্বলের লোকের মধ্যেই বেশী।
শিল্পী , সুরকারদের সঙ্গে কাজ করার কোন অভিজ্ঞতা...
অমিত বন্দোপাধ্যায়ের সুরে ছোটবেলায় অনেক গান গেয়েছি। কিন্তু এখন যখন উড়ানের জন্য অমিতদার সুরে গাইলাম তখন বেশ মজা লাগল। ছোটবেলায় মেয়েদের মত গলায় ঐ গানগুলো গেয়েছি, আর এখন গলার পরিবর্তনেই নিজেরই মজা লাগে।
একবার শ্রীকান্তকাকুর (শ্রীকান্ত আচার্য্য) বাড়িতে গেছি ওনার কম্পোজিশনে গাইব বলে। তা উনি দেখে শুনে বললেন - 'ঠিক আছে তোর এই স্কেলে আমি করে নেব'। তারপর আবার একদিন ডাকলেন। একটা কথা বলে রাখি শ্রীকান্তদা কিন্তু ভীষন দেরী করেন গান দিতে। যদি পরের বছর প্ল্যান থাকে তো এই বছর বলে রাখি তবেই আমি পাবো (হাসি)... আমাকে ডেকে কাকু বললেন - 'দেখ তো সুরটা এইরকম বানিয়েছি, গা তো'। আমি তো গাইলাম। সেটা ছিল পুজোর আগে। প্রথম অ্যালবামের 'ডাকনাম' কাজ করার সময়।কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৪তেই পুজোর আগে, কিন্তু তাড়াহুড়ো না করে রিলিজ ২০১৫তে করি। পরে গিয়ে শুনলাম সেই সুরটা আর নেই, একটা সম্পূর্ণ নতুন একটা সুর। শ্রীকান্তকাকু বললেন - 'না রে, ওটা ভাল হয় নি, বুঝলি। এইটা ভাল লাগছে, এটাই গা'। গেয়ে দেখলাম সত্যিই খুব ভাল গান। তারপর স্টুডিওতে রেকর্ডিং এর দিন কাকুর ভাল লাগার উচ্ছাস দেখে এত ভাল লেগেছিল যে কি বলব। দু একটা জায়গা উনি বলে দিলেন এই রকম ভাবে উচ্চারণ কর। এত সুন্দর সহজ করে বলে দিলেন সেটা আমার কাছে একটা দারুন ব্যাপার। এত বড় একজন মানুষ, ওনার ভাল লাগাটাই আমার কাছে এক বিশাল ব্যাপার।
গ্রাম কেন্দ্রিক শ্রোতা ও শহরের শ্রোতারদের মধ্যে কোন তফাৎ ধরা পড়ে...
হ্যাঁ, তফাৎ তো থাকেই। কলকাতায় শ্রোতা যেরকম আগে পেতাম এখন আর পাই না। আগে কলকাতায় প্রোগ্রাম করে আনন্দ পেতাম সেটার কোথায় যেন একটা ঘাটতি ল,এ আসছে। যেহেতু গান খুবই সহজলভ্য ওদের কাছে, গান শোনার অভ্যাসটাও আর নেই মনে হচ্ছে। একটা নতুন গান শোনালে বলছে এটা তো চেনা গান না। তারপর একটা জনপ্রিয় গান শোনালেই তারা খুশি হয়ে যাচ্ছেন। খারাপ লাগছে যে অনেকেই ভাল গানের ঘরানা থেকে সরে গিয়ে বাজারের চলতি গান শুনতে চাইছে। আমি সেগুলোও গাইছি, আমার কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু অডিয়েন্সের ভাল গান শোনার কোয়ালিটি যেন কম পাচ্ছি আগের তুলনায়। কিছু কিছু জায়গায় খুবই ভাল লাগে। অনেক ভাল গান গাইতে পারি। গ্রাম বা মফঃস্বলে কিন্তু গান শোনার অভ্যাসটা অনেকটাই উল্লেখযোগ্য মনে হয়েছে। ওনারা ভাল গানের পাশাপাশি বাজারের চটজলদি গান দুটোই কিন্তু খুব সুন্দরভাবে আডপ্ট করেন। যদিও গ্রাম বা শহর যাই বলো না কেন, শ্রোতাদের মধ্যে ভাল-মন্দ দুটো গানই শোনার অভ্যাস রয়েছে। তবে বলতে দ্বিধা নেই যে ভাল গান শোনার অভ্যাসটা গ্রাম বা মফঃস্বলের লোকের মধ্যেই বেশী।
বাঙালি শ্রোতা - এলিট গ্রুপ।
আমি দুভাবে বলি। একটা হল কলকাতার মধ্যে বিভিন্ন এলিট জায়গায় গিয়ে গান আর দুই হল দেশে মধ্যে বা দেশের বাইরে। কলকাতার আসেপাশে বেশীরভাগ আর্টিষ্টই থাকেন বলে কলকাতার লোকজনের গান শোনা বা প্রোগ্রাম দেখার সুযোগ সুবিধা অনেক বেশী। শহর ছেড়ে আমরা যতই দূরে যাই, ততই নতুন গানের খবর রাখা ওখানকার শ্রোতাদের পক্ষে বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ নতুন গানের তো কোন প্রচার নেই। রাজ্যের বাইরে যখন আমরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাই তখন সেখানে সি ডি বা রেকর্ডের দোকান তো ছেড়েই দাও, সেখানে হয়ত এত অনুষ্ঠানই হয় না। সেখানে বছরের কোন একটি নির্দিষ্ট দিনে, কোন অনুষ্ঠানে এই গান প্রচারের সুযোগ হয়। আর দেশের বাইরে তো কোন এক নির্দিষ্ট দিনে কোন এক শহরে এই অনুষ্ঠান হচ্ছে। কাজেই সেখানে গান পৌঁছে দেওয়া আরও কঠিন।
বিদেশে শিল্পীদের গুরুত্ব আরো বেশী যে এক শিল্পী এক শহরে হয়ত গান গাইতে একবারই গেছেন। তাই স্বশরীরে তার গান শোনার অভিজ্ঞতা কেউই মিস করতে চান না। কলকাতার এলিট ক্লাবে যখন বাঙালি শ্রোতারা আসেন তাদের বেশীরভাগটাই হয়য় আড্ডা, গান শোনার ইচ্ছা বা তাগিদটা অনেক কম। কারণ বছরে একই শিল্পীকে তারা বারবার দেখে আসছেন, বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন শোতে। দেশের মধ্যে অন্যান্য রাজ্যে বা দেশের বাইরে যারা থাকেন তারা গানটা খুব সিরিয়াসলি শোনেন। কাজেই রাজ্যের বাইরে দেশেই হোক বা বিদেশে গান গেয়ে অনেক আনন্দ পাই। অনেক ভাল গানের অনুরোধ আসে।
ভবিষ্যতের ভাবনা...
খুব যে ভাবছি, তা কিন্তু নয়। যেমন চলছে চলুক। ভাল কাজ করার ইচ্ছা আছে, আরো ভাল গান গাইবার ইচ্ছা আছে। যে সমস্ত কম্পোজারদের সঙ্গে কাজ করিনি তাদের সঙ্গে কাজ করার, নিজেও কিছু কম্পোজিশন করার ইচ্ছা আছে। আমার সুরে আমার কিছু পছন্দের কিছু শিল্পীকে দিয়ে গাওয়াবার স্বপ্ন আছে। নতুন বাংলা বা হিন্দী গানের কাজটা আমি চালিয়ে যাব সেটা বলতে পারি।
বাংলা ছায়াছবি...
নতুন কিছু ছায়াছবিতে গান গাওয়ার সুযোগও হচ্ছে। খুব যে বড় ব্যানারের ছবি তা কিন্তু নয়। তবে সব রকমই পাচ্ছি। তারপর কম নামী সুরকাররা যখন আমাকে দিয়ে গাওয়াচ্ছেন তাতে অনেক গুরুত্ব পাচ্ছি, সেটা আমার খুবই ভাল লাগছে। অনেক নামী সুরকাররা কাউকে ভেবে সুর করেন না। সেক্ষেত্রে অনামী সুরকাররাই আমার কথা ভেবে গানটা বানাচ্ছেন। নতুন গান তো আছেই, তারপর সুফি নিয়ে আগামী দিনেও চালিয়ে যাব বলে তো মনে হয়।
তোমার পছন্দের বাংলা ও হিন্দী -শিল্পী ও সুরকার...
এত কঠিন প্রশ্ন করলে তুমি... (হাসি)। বাংলা গানের পছন্দের সুরকার - হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষাল, নচিকেতা ঘোষ, রাহুল দেব বর্মন, সলিল চৌধুরী। পছন্দের গায়ক - মান্না দে, শ্যামল মিত্র, রূপঙ্করদা, শ্রীকান্ত আচার্য্য, জয়তিদি, শুভমিতা দি। হিন্দীতে কম্পোজারদের মধ্যে আর-ডি-বর্মন, মদনমোহন, শঙ্কর এহেশন লয়, অমিত ত্রিবেদী, এ আর রহমান। শিম্পী বলতে হরিহরণ, লতা ম্যাঙ্গেশকার, মহঃ রফি, জগজিত সিং, আশা ভোঁসলে, শঙ্কর মহাদেবন, সনু নিগম, কে কে, শান, উদিত নারায়ণ। আর অরিজিৎ সিং। অরিজিৎ একজন অসাধারণ দক্ষ এক শিল্পী। এখন যারা গান গাইছেন তারা অরিজিৎ-এর ধারে কাছে কেউ নেই।
সুরজিৎ সেনগুপ্ত
বিবিধ ।। মতামত ।। সূচীপত্র
সুরজিৎ সেনগুপ্ত
কিংবদন্তী ফুটবলার
সাক্ষাৎকার
'৭০ - '৮০ এর দশকে কলকাতার ময়দানে ফুটবল পাগল দর্শকের মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছিলেন যে সকল খেলোয়াড় তাদের মধ্যে সুরজিৎ সেনগুপ্তের নাম একেবারে যে ওপর সারিতে থাকবে তা নিয়ে আর বলার কোন অবকাশ থাকে না। সিনিয়ারদের মুখেই শুনেছি - 'কি যে খেলা খেলা করিস, সুরজিৎ সেনগুপ্তের খেলা দেখেছিস!' হ্যাঁ আজও প্রায় ত্রিশ-চল্লিশ বছর বাদেও এই নামটি বাংলা তথা ভারতীয় ফুটবলে মহা সমারোহে টেবিলজুড়ে আড্ডায়, ঐকান্তিক আলোচনায় কিংবা কোলাহলরত ধূমায়িত কাপে স্থান পেয়েছে। যারা ওনার খেলা দেখেছেন তারা সত্যিই কত ভাগ্যবানই না ছিলেন! আজও তাই অনেককেই বলতে শুনি - ইশ! ওনার খেলা দেখা হয় নি'। ভারতের সর্বসেরা উইঙ্গার হিসাবে সুরজিৎ সেনগুপ্তের খ্যাতি নিয়ে কিছু উপস্থাপনা করাটা আমার পক্ষ থেকে অনেকটাই ধৃষ্টতা হয়ে দাঁড়ালেও একবার মুখোমুখি বসার লোভ সংবরণ করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই আমারই এক দাদা-সম (অশোক) ও বৌদির (ঐন্দ্রিলা) সহযোগিতায় যখন এই সুযোগটা পেয়ে গেলাম তখন আমার এক কথায় 'হ্যাঁ'। বেশ খোলামেলা আড্ডায় সুরজিৎবাবুর সঙ্গে অনেকটা সময় কাটলো। অত্যন্ত বিনয়ী, মৃদুভাষী এই শ্রদ্ধেয় মানুষটির সঙ্গে ভবিষ্যতে আবার আড্ডায় ফিরবো এই আশা রাখি।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ সুরজিৎ সেনগুপ্ত, স্নিগ্ধদেব সেনগুপ্ত, অশোক দে, ঐন্দ্রিলা ব্যানার্জ্জী দে
ছোটবেলা ও স্কুল...
থাকতাম কলকাতা শহরতলী থেকে অনেকটা দূরেই হুগলী জেলার শহর হুগলীতে। সেখানে আমার স্কুল 'হুগলী ব্রাঞ্চ স্কুল' ছিল বাড়ি থেকে হাঁটা পথ। সেখানেই আমি ছোটবেলা থেকে পড়েছি। দৈনন্দিন রুটিনও ছিল আর পাঁচজনের মতই। সকালে পড়াশোনা, তারপর স্কুল, আর স্কুল থেকে ফিরেই মাঠ। মাঠে গিয়ে ক্রিকেটের সময় ক্রিকেট আর ফুটবলের সময় চুটিয়ে ফুটবল, সব রকম খেলাই চলত। পাড়ার মাঠে ফুটবল খেললেও স্কুল টিমে আমি অনেক পরে খেলার সুযোগ পেয়েছি। তার কারণ আমার খেলার বুট ছিল না। একদিন ফিজিক্যাল এডুকেশনের টিচার বাবাকে ডেকে বললেন যে আমাকে একটা বুট কিনে দিতে। তখন আমি ক্লাস টেনে পড়ি। সেই প্রথম আমার বুট পড়া আর তার সাথে সাথে স্কুল টিমে খেলার সুযোগ।
আমাদের বাড়িতে খেলাধূলার পাশাপাশি পড়াশোনাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হত। তাছাড়া গান বাজনারও চল ছিল। হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা দেবার পর প্রায় মাস তিনেকের একটা লম্বা ছুটি ছিল আমার হাতে। তখনকার দিনে জয়েন্ট এন্ট্রান্স বলে কিছু ছিল না। নাম্বারের ভিত্তিতে ডাক্তারী বা ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি করা হত। এই সময় আমি শ্রদ্ধেয় ভোলাদার কাছে ফুটবল শিখেছি, উনি ঐ মাঠেই খেলতেন। পরে সিনিয়র হয়ে যাবার পর আমাদের কোচিং করাতেন, ভুল ভ্রান্তি ধরিয়ে দিতেন। তবে খুব সিরিয়াসলি খেলাটা শেখার চেষ্টা করতাম। আমি বাঁ পায়ে সট নিতে পারতাম না। বাঁ পাটা খুব আড়ষ্ট ছিল। তা আমার শিক্ষাগুরু ভোলাদা আমাকে বাঁ পাটা তৈরি করে দিয়েছিলেন। তার জন্য অনেক কানমোলা বরাদ্দ ছিল এবং বকাঝকাও শুনতে হয়েছে। হায়ার সেকেন্ডারী পরীক্ষার পর ভোলাদাই জোর করে কলকাতার একটা সেকেন্ড ডিভিশন টিম 'রবার্ট হাডসন-এ' খেলতে পাঠিয়ে দেয়। সেই টিমেই খেলতে খেলতে হঠাৎই মাঝপথে 'খিদিরপুর স্পোর্টিং ক্লাব' থেকে আমাকে ডেকে পাঠায়। সেখানেই আমি ১৯৭০ সালে সই করলাম। '৭০ আর '৭১ এ আমি খিদিরপুর স্পোর্টিং ক্লাবের হয়েই খেলি। তারপর '৭১ সালের শেষের দিকে একদিন হঠাৎই কলকাতার এক দোতালা বাসের দোতালায় শৈলেন মান্নার সঙ্গে দেখা হয়। শৈলেনদাই বললেন - ' খেলবি আমার ক্লাবে? '
কোচ অচ্যুত ব্যানার্জী ...
খিদিরপুরে জয়েন করার পরেও মাঝেমাঝে আমি ভোলাদার কাছে যেতাম। ভোলাদাও যত্ন সহকারে আমাকে দেখিয়ে দিতেন। খিদিরপুরে থাকার সময় আমি অচ্যুত ব্যানার্জী নামে এক বিখ্যাত কোচকে পেলাম। আধুনিক ফুটবলের সঙ্গে আমার পরিচিতি ঘটে এই অচ্যুত ব্যানার্জ্জীর হাত ধরেই। উনি শিখিয়েছিলেন কিভাবে আধুনিক ফুটবল এগোচ্ছে, কিভাবে আমি আমার ক্ষমতা আমি কাজে লাগাবো। অনেক খুঁটিনাটি ভুল ভ্রান্তি উনিই ধরিয়ে দিতেন, যেগুলো আমাকে পরবর্তী সময় ইষ্টবেঙ্গল বা মোহনবাগানে খেলতে অনেক সাহায্য করেছে, সম্মৃধ্য করেছে। এরপর আমি দু-বছর মোহনবাগানে খেলি তারপর ১৯৭৪ সালে ইষ্টবেঙ্গলে যোগ দিই।
ফুটবল ও বই পড়া এই দুই নেশাকে পাশাপাশি সময় দেওয়া...
আমার বই পড়ার নেশাটা বলতে পারো ঐ হায়ার সেকেন্ডারী পরীক্ষার ঠিক পর থেকেই।তার আগে স্কুলের পড়াশোনা, খেলাধূলা আর আড্ডা ছাড়া খুব একটা কিছু করি নি। তেমন একটা তাগিদও ছিল না। বাড়িতে আমার মা, দিদা খুব গল্পের বই পড়তেন। দাদা লাইব্রেরীর সদস্য হয়ে প্রচুর বই আনতেন। সেই থেকেই বইএর নেশা চেপে ধরে। তবে বাংলা সাহিত্যই বেশী পড়েছি। বিভুতিভূষণ পড়ে বলতে পারো ওনার ফ্যান হয়ে গেলাম। তারপর শরদিন্দু, পরবর্তীকালে সুকুমার রায়ের কবিতা পড়ে অনুপ্রাণিত হয়েছি। সঙ্গে ছিল রবীন্দ্র সাহিত্য, বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের গান। এই সব নিয়েই ছিলাম। পরিবারের থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছি বলেই আজও সেই বাতাবরণের মধ্যেই আমার সময় কাটে।
আপনার দেখা সেরা বিদেশী কোচ...
আমার সময় যদি বলো তাহলে বলব একমাত্র বিদেশী কোচ এসেছিলেন ইংল্যান্ডের রন মিডস, তাও মাত্র সাত দিনের জন্য।
রন মিডসের রণকৌশল...
খুবই ভাল। খুব ভাল কোচ ছিলেন। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই আমাকের ভালবেসে ফেলেছিলেন। এত অল্প সময় কিন্তু তার মধ্যেও একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তুমি যার কথা ভাবছো মিলোভান এসেছিলেন তারও পরে।
মাত্র সাত দিন কেন...
ফিফার একটা একটা প্রোজেক্ট-এ রনকে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়াতে হয়েছিল।বিভিন্ন দেশ, শহর ঘুরে ঘুরে কোথাও সাত দিন কোথাও পনেরো দিন উনি কোচিং করাতেন। আমাদের ভাগে পড়েছিল মাত্র সাত দিন। উনি যদি আরো কিছুদিন থাকতেন তাহলে খুবই ভাল হত। আরো কিছুদিন ওনাকে পেলে...
কোচ মিলোভান...
কোচ মিলোভানকে আমি দূর থেকে দেখেছি। আমি তখন দেশের হয়ে খেলা ছেড়ে দিয়েছি। মিলোভান ছেলেদের সঙ্গে একটা সুন্দর সম্পর্ক তৈরী করে ফেলেছিলেন। আধুনিক ফুটবলের সঙ্গে আমাদের ছেলেদের একটা পরিচিতি ঘটিয়েছিলেন। তার ফলস্বরূপ সেই সময়ে ভারতীয় ফুটবলের তুলনামূলকভাবেও কিছুটা সাফল্য এসেছিল। আমাদের ভারতীয় ফুটবলের সাফল্য বলতে গেলে '৬২তে এশিয়াড জেতা, আর ৭০ সালের এশিয়ান গেমস এ ব্রোঞ্জ, আর তো উল্লেখযোগ্য বিশেষ কিছুই নেই। তবে মিলোভানের সময় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারত যে ফুটবল খেলতে পারে সেই পরিচয়টা জনসমক্ষে আনতে উনি সক্ষম হয়েছিলেন। তাই আমাদের দেশে আসা সমস্ত বিদেশী কোচেদের মধ্যে আমাকে মিলোভানকেই সবচেয়ে সেরা মনে হয়।
বাংলার ফুটবল...
বাংলার ফুটবল ব্যাপারটা একটু ডিফাইন করা দরকার। বাংলার ফুটবল বলতে কি বোঝাতে চাইছো যে কতজন 'বাঙালি' ফুটবলার খেলছে আর ফুটবলার হিসাবে তাদের মান কতটা উঠেছে বা নেমেছে। ধরো, এটা হল একটা ডেফিনেশন। আর একটা দিক হল বাংলায় যে খেলাই হচ্ছে সেটাই বাংলার ফুটবল। সেক্ষেত্রে আমরা দুই জাতীয় দল ইষ্টবেঙ্গল বা মোহনবাগান এদের পারফর্মেন্সের ওপরই সব বিচার করি।
সেইখানে বাঙালি ফুটবলার আর নেই বললেই চলে। নর্থ ইষ্টের ছেলেরা কলকাতায় এসে ভীড় করছে। তাছাড়া নানা জায়গা থেকে ছেলেরা এসে খেলছে। আর তা না হলে বিদেশীরা খেলছে। চার-পাচঁজন বিদেশী তো খেলতেই পারে। কাজেই বাঙালি হিসাবে যে ফুটবল খেলা ছিল সেটা উঠে যেতে বসেছে। তুমি একবার আমাদের দুই দল ইষ্টবেঙ্গল বা মোহনবাগানের খেলোয়াড় লিস্ট দেখো তাহলেই বুঝতে পারবে আমি কি বলতে চাইছি।আমাদের বাঙালিদের মধ্যে খেলাধূলার থেকে পড়াশোনার গুরুত্ব চিরকালই ছিল। আর ফুটবল খেললেই তো হবে না, সেটাকে তো পার্সু করতে হবে, খুব সিরিয়াসলি নিতে হবে।সেক্ষেত্রে কিছুটা পড়াশোনার ক্ষতি করেই করতে হবে। খেলার জন্য সময় দিতে হবে। সেটা আর এখনকার দিনে কোন বাড়ি থেকেই বা সমর্থন করবে। কিছু খেলোয়াড় হয়ত আসে, যে কোন কারণেই হোক পড়াশোনার সুযোগ ওদের কাছে হয়ত কম, তাই ফুটবল খেলাটাকে একটা পেশা হিসাবে বেছে নেওয়ার একটা তাগিদ আছে। তবে সে সংখ্যা খুবই কম। কাজেই বাংলার ফুটবল যে খুব একটা ভাল জায়গায় আছে, তো আমার মনে হয় না।
আপনি তো সর্বকালের সেরা উইঙ্গারদের মধ্যে পড়েন। এখনকার দিনের খেলায় স্কিলের তুলনামুলক বিচারে আপনার ধারে কাছে যাওয়া তো দূরের কথা, কোন উইঙ্গারই তো খেলার মাঠে চোখে পড়ে না ......
একটা ভাল বিষয় তুলে ধরলে। আমরা ধীরে ধীরে আধুনিক ফুটবলের সাথে পরিচিত হচ্ছি। কিন্তু আধুনিক ফুটবলের যে মূল উপাদান, সেগুলোকে গ্রহণ করতে পারছি না। তার মধ্যে একটা হল উইং প্লে। আমরা যদি আন্তর্জাতিক ফুটবল বা বিশ্বমানের ফুটবলের দিকে তাকাই তাহলে দেখব যে আজকের বিখ্যাত খেলোয়াড়রা উইং থেকে মুভ করছে। সাম্প্রতিককালে রোনাল্ডো, নেইমার বা মেসিরা কিন্তু উইং থেকেই অপারেট করে, কেউ ডানদিক থেকে কেউ বা আবার বাঁ দিক। উইং প্লে-টা কিন্তু বিশ্বমানের ফুটবলে আছে, আমরাই কিন্তু অ্যাডপ্ট করতে পারছি না। আমরা সেই মাঝখানটা ব্যবহার করে বলটা পেনাল্টি বক্সের মুখে তুলে দি, উদ্দেশ্য থাকে কাউকে দিয়ে বক্সের মধ্যে হেড করানো, এর বাইরে উইংএর ব্যবহার তো করাই হয় না। উইংটা ব্যবহার করে সেন্টার করা, ড্রিব্লিং করে পেনাল্টি বক্সে মারাত্বক পাস বাড়ানো আজকাল এগুলো দেখতে পাচ্ছি না। তার একটা কারণ হল সেই রকম ফুটবল প্রতিভাও চোখে পড়ছে না। যারা আছেন তাদের দিয়ে করানোর চেষ্টাও করা হচ্ছে না। উইং থেকে খেলা মানে একটা দিকে মাঠ, অন্য দিক তখন ফাঁকা। খেলাটাকে একদিকে নিয়ে আসার টেকনিক। এট কিন্তু বেশ আক্রমনাত্বক, যদি পরিকল্পনা মাফিক খেলা যায়।
আপনার পরে বিদেশ বসু, উলাগানাথন, হারজিন্দার সিং, সুভাষ ভৌমিক পরে চিবুজার... উইং দিয়ে দৌড়ে এসে বিপক্ষের রক্ষণভাগে কাঁপুনি লাগিয়ে ছাড়তেন? এখন আর নজরে পড়ে না।কিছুদিন আগেও ইষ্টবেঙ্গলের দু-ঘন্টার অনুশীলনে আমার এই ধরণের একটা মুভও নজরে পড়ে নি...
উইংটা তো ব্যবহার করতে হবে। কখনো দৌড়ে, কখনো ড্রিবিল করে ভিতরে কেটে ঢুকে আসা এই ধরনের কিছু পদ্ধতি তো আমাদের সময় দেখা যেত, এখন আর কোথায়। আমাদের সময় বিদেশ, মানস যেভাবে দেখিয়েছে তা এই সাম্প্রতিককালের খেলায় আর দেখতে পাই না। আসলে এখন পৃথিবী জুড়ে প্লেসিং ফুটবল বা পাসিং ফুটবল চলছে সেইটা আমরা রপ্ত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই পদ্ধতিটা রপ্ত করতে গেলে এক বিশেষ ধরণের প্রস্তুতি বা অনুশীলনের প্রয়োজন আছে। দলের প্রত্যেককেই কম বেশী সম প্রতিভাধর হতে হয়। কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বল ছাড়লে সেই বলকে সঠিকভাবে সতীর্থদের কাছে পৌঁছে দিতে হয়, এটা কিন্তু মোটেই সোজা না। খুব অল্প জায়গার মধ্যে অসম্ভব বল কন্টোল আর নিখুঁত পাস দেবার ক্ষমতা রাখতে হয়। এটা আমরা ভেবে দেখছি না। শুধু ফলো করলেই তো হবে না, তাতে সাফল্য আসছে কিনা দেখতে হবে তো। আর এতেই আমরা ব্যর্থ হচ্ছি।
মারডেকার অভিজ্ঞতা...
১৯৭৪ এ মালয়েশিয়া খেলতে যাই। মালয়েশিয়ার সঙ্গে খেলা ছিল। সচিনান নামে বিপক্ষের একজন খেলোয়াড় অবৈধভাবে আমাকে আঘাত করে। আমাকে ধরে রাখতে পারছিল না। কানে আঘাত পাই, পরে অপারেশ করতে হয়। অনেক্ষণ ধরেই আমাকে আটকানোর চেষ্টা করছিল। এর পরেই ঘটনাটি ঘটে যায়। আমার খুব ভাল লেগেছিল যে প্রচুর ভারতীয় সমর্থকরা খেলার মাঠে ভীড় করেছিলেন। প্রচুর সমর্থনও পেয়েছিলাম আমরা। আমাকে ভালবেসে ওরা "আলফা রোমিও" বলে একটা নামও দিয়েছিল। "আলফা রোমিও" নামে একটা ইটালিয়ান গাড়ি ছিল, খুব দ্রুত চলত। যেহেতু আমি খুব দ্রুত ছুটতাম, তাই ওরা আমাকে ঐ নামে ডাকতে আরম্ভ করে। যদিও আমরা সেমিফাইনালেই পৌঁছতে পারি নি, পাঁচ-কিংবা ছয় নম্বরে শেষ করেছিলাম, কিন্তু ওদের অফুরন্ত ভালোবাসা পেয়েছিলাম। এই অভিজ্ঞতাটা খুবই ভাল ছিল।
আপনাদের সময় দল-বদল মানেই ছিল প্রচন্ড উত্তেজনাপূর্ণ একটা অধ্যায়।খেলোয়াড় ছেনতাই, মাঝপথে তাদের গাড়ি হাওয়া করে দেওয়া, শহরের আসেপাশে লুকিয়ে রাখা, কখনো বাংলার বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার রীতি ছিল... এই রকম নানা লৌমহর্ষক ঘটনার সাক্ষী আপনাদের মত নামী খেলোয়াড়রা কোন না সময় হয়েছেন...তারই কিছু স্মৃতি।
এখনকার সময় অনেকটা আলাদা। টাকা বেশী পেলেই চলে যাবে। আগে তো আর তা ছিল না, টাকা পয়সাও খুব একটা ভাল ছিল না। তাই তখনকার দিনে কর্মকর্তারা যে খেলোয়াড়দের রাখতে চাইতেন তাদের বড্ড কড়া নজরে রাখতেন। যাতে অন্য রাইভেল ক্লাব তাদের নিয়ে না চলে যেতে পারে। তাই তাদের লুকিয়ে রাখা, তাদের খবর কাউকে না দেওয়া এই সব চলত। নানা চার্ম ছিল, থ্রিল ছিল, লুকোচুরি ছিল। আই এফ এ অফিসের সামনে যেখানে দল বদল হত প্রায় দু-সপ্তাহ ধরে সকাল দশটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত প্রচুর সমর্থকের ভীড় লেগে থাকত। একটা গাড়ি ঢুকলেই সবাই চিৎকার করে উঠত, সে এক দারুন রোমাঞ্চকর উন্মাদনা। আমি যখন মোহনবাগান ছেড়ে ইষ্টবেঙ্গলে এলাম তখন মোহনবাগান আমাকে রাখতে চেয়েছিল। ডায়মন্ডহারবারে সাগরিকা বলে একটা হোটেলে আমাকে নিয়ে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল এক মোহনবাগান কর্মকর্তার নির্দেশে। তখন আমি বম্বেতে রোভার্স কাপ খেলতে যাচ্ছিলাম।
তখন মোহনবাগান কর্মকর্তা কে ছিলেন... শৈলেন মান্না?
হ্যাঁ। শৈলেনদাই ছিলেন। রোভার্সকাপে আমাকে না নিয়ে গিয়ে আটকে দেওয়া হল হাওড়া স্টেশনে। সেখান থেকেই আমাকে নিয়ে ডায়মন্ডহারবারে সাগরিকা হোটেলে লুকিয়ে রাখলেন। পরদিন বিকেলবেলা আমাকে ছাড়া হল কারণ আমি হাঙ্গার স্ট্রাইক করে বসলাম। বললাম একদম বাড়ি গিয়েই খাব। তাছাড়া বাড়ি থেকে শৈলেনদার বিরুদ্ধে থানায় একটা ডাইরিও করা হয়েছিল। এটা
১৯৭৪ সালের ঘটনা। মোহনবাগান আমার সঙ্গে আমাকে রাখার ব্যপারে কথাই বলছিল না, তাই বাধ্য হয়েই আমি ইষ্টবেঙ্গল যোগাযোগ করায় ওদের কথা দিয়ে ফেলি। কাজেই ব্যাপারটা একদম ফেয়ার ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই ব্যাপারটা ঘটে। শৈলেনদা স্নেহপ্রবণ মানুষ ছিলেন, ব্যাপারটা বুঝে উনি পরের দিন নিজেই বললেন - "ঠিক আছে। বাড়ি চলে যাও। "
শৈলেন মান্নাকে আপনি স্নেহপ্রবণ মানুষ বললেন...
ভাল, ভাল মানুষ ছিলেন। মোহনবাগান অন্ত প্রাণ। মোহনবাগানের জন্য যে কোন কাজ ভাল হোক, খারাপ হোক শৈলেনদা নিঃস্বার্থ ভাবে করবেন। মোহনবাগানের জন্য খারাপ কাজও আর দ্বিতীয়বার ভাববেন না।
এবার আসি ইষ্টবেঙ্গলে ... জীবনবাবু, ল্টুবাবু, স্বপন বাবু (স্বপন বল), এদের অবদান কতটুকু...
জীবনদা, পল্টুদাকে জীপ বলে ডাকা হত। জীবনের 'জী' আর পল্টুদার 'প'। জীবনদা অ্যাক্টিং, একজিকিউটিং এর ব্যাপারটা দেখতেন আর পল্টুদার ছিল প্ল্যানিং, কাকে কোথায় রাখা হবে, কিভাবে নিয়ে যাওয়া হবে, কিভাবে প্রোটেক্ট করা হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। অনুশীলনের পর খেলোয়াড়রা কি খাবেন, কিভাবে অফিস যাবে, কে কিভাবে বাড়ি ফিরবেন এইসব খুঁটিনাটি প্ল্যানিং পল্টুদা করতেন। ক্লাবের সেক্রেটারী নৃপেন দাসের মানে ডঃ দাসের সময় থেকেই জীবনদা, পল্টুদা তাদের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এরা দুজনেই ক্লাবের জন্য যে কোন ঝুঁকি নিতে রাজী ছিলেন। পরে পল্টুদা ক্লাবের অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি হয়েছিলেন। আজ যে ক্লাব আধুনিকতার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে তার পিছনে পল্টুদার অবদান অনস্বীকার্য। তিনিই প্রথম ইষ্টবেঙ্গল ক্লাবের সঙ্গে ইউ বি গ্রুপের চুক্তি ব্যপারে বিশেষ ভুমিকা গ্রহণ করেন। সব মিলিয়ে ক্লাবের অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে যতটুকু আধুনিকিকরণ সম্ভব হয়েছে তা কিন্তু পল্টুদার জন্যই। আর স্বপন বল টিমের সঙ্গে থাকতেন, খেলোয়াড়দের সঙ্গে একটা আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সুখে দুঃখে ওদের পাশে থাকতেন। ফলে সমর্থকদেরও খুব কাছের হয়ে গিয়েছিলেন। তবে তিনি ক্লাবের কর্মী হিসাবেই ছিলেন, কখনও অ্যাডিমিস্ট্রেশনে ছিলেন না।
ফুটবল উন্মাদনার নিন্মমুখী প্রভাব...
তখনকার দিনে ইষ্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের যে কোন খেলাতেই খুবই ভীড় হত। এমন কি প্র্যাক্টিস দেখতেও সমর্থকরা আসতেন। এখন শুধুমাত্র ইষ্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান খেলাতেই ভীড় হয়, আর কোন খেলাতেই হয় না। কারণ বাঙালি তো আর ফুটবল খেলে না, তাই উৎসাহ অনেকটাই কমে গেছে। আর এমন কোন প্রতিভাও নজরে পড়ে না যে তাকে দেখতে মাঠ ভরবে। তাই কেউ আর মাঠে যায় না।
ইষ্টবেঙ্গল বা মোহনবাগানের তরফ থেকে আপনাকে কোচ হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলে আপনার স্ট্র্যাটিজি ...
আমরা যে ধরণের প্র্যাক্টিস করতাম সেই ধরনের প্র্যাক্টিসে গুরুত্ব দেব। জিমে যাওয়া বা ফিজিক্যাল ট্রেনিং যে রকম হচ্ছে হোক, কিন্তু ফুটবল মাঠে যে প্র্যাক্টিস, যেগুলো আমরা করতাম, সেইগুলোই করতে চাইব। সবচেয়ে বড় কথা ইষ্টবেঙ্গল বা মোহনবাগান যে ক্লাবই হোক না কেন, তাদের জার্সির রঙএর মূল্য বোঝানোর চেষ্টা করব। সবুজ মেরুন বা লাল হলুদ দুটোর রঙেরই মূল্য বুঝতে হবে। ধর আমি ইষ্টবেঙ্গলের কোচ হলাম, তাহলে লাল-হলুদ সেই রঙের মহিমা বোঝানোর সাথে সাথে টিমকে মোটিভেট করার খুব চেষ্টা করব। এটা খুব জরুরী, টিমের যে ক্ষমতাই থাক না কেন, একবার মোটিভেট করতে পারলে টিমের চেহারা কিন্তু পালটে যায়। যেটা প্রদীপদাকে কাছ থেকে দেখে শিখেছি।
আপনার দেখা বাংলার সেরা কোচ...
প্রদীপদাই - প্রদীপ বন্দোপাধ্যায়। প্রদীপদার কোচিং এ আমি অনেক কিছু শিখেছি। উনি টেকনিক্যালি যতটা স্ট্রং ছিলেন তার পাশাপাশি ম্যান ম্যানেজমেন্টে অসাধারণ দক্ষ ছিলেন। টিমকে অসম্ভব মোটিভেট করতে পারতেন। সাধারণ মানের খেলোয়াড়ের কাছে থেকে ঠিক সেরা খেলাটাই বার করে আনার চেষ্টা করতেন। আসলে কোচিং এর দুটি ভাইটাল দিক থাকে একটা টেকনিক্যালিটি আর ম্যান ম্যানেজমেন্ট। দুটোতেই উনি সেরা ছিলেন তাই কোচিং করাটা ওনার কাছে বেশ সহজ ছিল।
আপনার সমসাময়িক খেলোয়াড়...
ইষ্টবেঙ্গলে খেলার সময় পিন্টুদা - সমরেশ চৌধুরীর কথা বলতে হয়। পিন্টুদার সঙ্গে আমি অনেকদিন খেলেছি। অসাধারণ দক্ষতা ছিল তার। অসাধারণ পাসিং করতেন, ওর পাস থেকে অনেক গোলও করেছি। সুধীর কর্মকারের কথা না বললেই নয়। আমার সময়কার আমার দেখা এশিয়ার সেরা ডিফেন্ডারের নাম হচ্ছে সুধীর কর্মকার। এ নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। একটা ঘটনার কথা বলি। ১৯৭০ সালে ইরানের টিম 'পাস' ক্লাবের সঙ্গে খেলাতে শেষ হবার তিন মিনিট আগে গোল করে ইষ্টবেঙ্গলকে আই-এফ-এ শিল্ড এনে দিয়েছিল পরিমল দে। এই ম্যাচে সুধীর কর্মকার অসাধারণ খেলেছিলেন। বিপক্ষ দলে 'আসগার সরাফি' নামে একজন নামী খেলোয়ার ছিলেন। সরাফি, তখন ইউরোপের খুব দামী খেলোয়াড়। ম্যাচে ওনাকে আটকানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সুধীরকে। অসাধারণ দক্ষতায় ও ম্যাচে সরাফিকে নড়াচড়া করতে দেয় নি। অসম্ভবকে সম্ভব করেছিল তুলেছিল সুধীর।
টি ভির পর্দায় আন্তর্জাতিক ফুটবল দেখা অনেক সহজলভ্য, তাই দু -পা এগিয়ে ইষ্টবেঙ্গল - এরিয়ান কিংবা মোহনবাগান - চার্চিল দেখার আগ্রহ দর্শকদের মধ্যে এখন অনেকটাই কম ... আপনার মতামত...
হ্যাঁ, অনেকটাই। আন্তর্জাতিক ফুটবল আমাদের কাছে যত এসেছে ততই আমরা বুঝতে পেরেছি আমরা কতটা পিছিয়ে, তাতে উৎসাহে ঘাটতি হবে অনস্বীকার্য। কাজেই পিছিয়ে থাকা দলগুলোর খেলা দেখে সময় নষ্ট করব কেন। তবুও যাদের মধ্যে ইষ্টবেঙ্গল - মোহনবাগানের বংশানুক্রমিক ক্রেজটা রয়ে গেছে তারাই পাগলের মত মাঠে আসেন। তবে এদের সংখ্যাটা নেহাতই নগণ্য। মনে আছে গড়িয়াহাটের দোকানিরা খেলার সময় দোকান বন্ধ করে মাঠে যেতেন, খেলা শেষ হলে আবার দোকান খুলতেন। ঐ সময় ব্যবাসায়ীরা নিজের ব্যবসার ক্ষতি করে ফুটবল খেলা দেখতে যেতেন, এখন আর তো সে সব ভাবাই যায় না। আর যাবেই বা কেন।
আপনি যখন উইঙ্গারের খেলতেন তখন বিপক্ষের কোন খেলোয়াড় আপনাকে চ্যলেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিতেন...
দিলীপ পালিত। উনি বাঁ পায়ের খেলোয়াড় ছিলেন, যেহেতু আমি রাইট আউট ছিলাম। বিপক্ষে দিলীপ পালিত থাকলে ও লেফট ব্যাক খেলত। ও বাঁ পাটা অসম্ভব স্ট্রং ছিল। আমাকে আটকানোর জন্য নানা বিধ উপায়, এমন কি অবৈধ উপায় অবলম্বনেও পিছ পা হতেন না। রেফারির নজর এড়িয়ে লুকিয়ে চু্রিয়ে মারতে পারত। ম্যাচে ও থাকলে আমাকে একটু আলাদা করে ভাবতে হত। অনেক বেশী কন্সেন্ট্রেট করতে হত, না হলে ওকে টপকাতে পারতাম না। ওর পর আর বিশেষ করে তেমন কেউকে মনে পড়ছে না।
১৯৭৪ থেকে ১৯৭৯ এ ইষ্টবেঙ্গলে, তারপর ৮১ থেকে ৮৩ পর্যন্ত মোহনবাগানে ... এরপর খেলা থেকে অবসর। আপনার পরবর্তী সময়ে কোন কোন খেলোয়াড় আপনার মনে দাগ কেটেছে।
অবশ্যই কৃশানু দে। শুধু আমার কেন প্রত্যেক ফুটবল অনুরাগীর মনের মণিকোঠায় ও থাকবে। তাছাড়া বিকাশ পাঁজি, সুদীপ চ্যাটার্জি, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। তরুনও (তরুন দে) ভাল তবে মনার মত নয়। হাফে সুদীপের খেলা খুব ভাল লাগত। পারমিন্দর, গৌতম সরকার, সত্যজিৎ চ্যাটার্জি, মানস ভট্টাচার্য্য ওদের খেলাও খুব ভাল লাগত। আরও অনেকই ভাল খেলতেন। অনেক ভাল খেলোয়াড় ছিলেন সেই সময়।
ইষ্টবেঙ্গল বা মোহনাবাগানে যারা খেলছেন তাদের গুনগত মান এক খারাপ কেন? কর্মকর্তাদের খেলোয়াড় নির্বাচনে কোথায় একটা চূড়ান্ত গাফিলতি নজরে পড়ছে...
কিছুটা হতে পারে। বিশেষ করে বিদেশীদের ক্ষেত্রে আমরা সঠিক খেলোয়াড় নির্বাচন করতে পারছি না। তবে অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে, যেমন টাকা পয়সা সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। তাছাড়া গাফিলতি তো আছেই। শুধুমাত্র নেটে প্রোফাইল দেখে কি আর ভাল খেলোয়াড় নির্বাচন করা যায়! প্রোফাইলে তো আমি আমার সম্মন্ধে অনেক কিছু লিখতেই পারি। তার ভেরিফিকেশন কোথায়, তার ভিত্তিতে খেলোয়াড় নিলে সেটা ফাঁকিবাজিই বলব। বিদেশী খেলোয়াড় নির্বাচনে বেশ ভুলভ্রান্তি বা গাফিলতি নজরে পড়ছে। এটা বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে। আর একটা সিরিয়াস ব্যাপার হল যে এত বছর ধরে আই-লীগ পাচ্ছি না, তার জন্য নূন্যতম লজ্জাবোধ করছি না। তাগিদটা অনুভব করছি না যে এবার পেতেই হবে। এটা খুব সিরিয়াসলি ভাবা উচিত।
নতুন স্পন্সর , কোটি টাকার হাতছানি... এর পরেও কি সাফল্যে তাবুতে উঁকি মারবে আশা করা যায়...
কোটি কোটি টাকাই এলে যা আই লীগ আসবে এমন কোন কথাই নেই। টিমটা ওয়েল ডিসিপ্লিন্ড ও ডেডিকেটেড হতে হবে। ব্যাংগালুরু টিমটার কথা ভাবো। ওরা খুব ডিসিপ্লিন্ড ওয়েতে টিমটাকে চালানোর চেষ্টা করছে। এটা ইষ্টবেঙ্গল বা মোহনবাগানেও সম্ভব। ইষ্টবেঙ্গলের ক্ষেত্রে নীতু বা কল্যাণবাবুরা যতটা সিনসিয়ারলি ক্লাব চালান তাতে খেলোয়াড় বা কোচের মধ্যে একটা শৃংঙ্খলা নিয়ে আসতেই পারেন। অসম্ভব কিছু না, শুধু সদিচ্ছা বা মানসিকতার প্রয়োজন। মানসিকতার পরিবর্তন না হলে শুধু কোটি কোটি টাকা খরচা করলেই যে আই লীগ আসবে তা কিন্তু মনে হয় না। তাবুর পরিবেশ খেলার উপযুক্ত হলে কিন্তু সাফল্য আসতেই পারে। তবে খেলোয়াড় নির্বাচনটাও মাথায় রাখতে হবে, যেটা একটু আগে বললাম।
আপনাদের সময়ে যে ক্লাব পরিচালন পদ্ধতি ছিল, তার সঙ্গে এখনকার পরিচালন পদ্ধতি একটা তফাৎ থেকে যাচ্ছে... কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি নজরে আসছে যাতে সমর্থকরা ডিপ্রেসড হয়ে পড়ছেন...
হয়ত থেকে যাচ্ছে। ম্যাচ হেরে গেলেই একে অপরকে দোষারোপ করছে। এটা একটা খুব খারাপ দিক। ব্যর্থ হলেই কোচদের ভুগতে হচ্ছে কিন্তু খেলোয়াড়দের কিছু হচ্ছে না। একটা অদ্ভুত পরিস্থিতি। কর্মকর্তারা খেলোয়াড়দের প্রতি একটু বেশী স্নেহ প্রবণ হয়ে পড়ছেন।কাজেই শৃঙ্খলা থাকা খুব জরুরী। না থাকলে কিছুই হবে না। দুই দলের কর্মকর্তারা কিন্তু চেষ্টা করছেন না তা কিন্তু নয়। একটু মোটিভেশন আর প্ল্যানিং ঠিক হলে আই লীগ যে কোন দলই পেতে পারে। তবে ইষ্টবেঙ্গলের কর্মকর্তাদের নিজেদের মধ্যে ঝামেলা তুলনামুলকভাবে অনেক কম মোহনবাগানের থেকে। এদের বন্ধন অনেক শক্ত। এই তো কয়েকদিন আগে মোহনবাগান তাবুতে কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি, মারামারিতে জড়িয়ে পড়লেন। এগুলো সত্যি দূর্ভাগ্যজনক। আর ফুটবলের ক্ষেত্রে বেশ ক্ষতিকর।
ইষ্টবেঙ্গল ক্লাবে খালিদ ও সুভাষ ভৌমিকের মধ্যে দূরত্ব ...
খালিদ - আমি যেটা করছি সেটাই ঠিক এই মনোভাব নিয়ে চলত। এই অ্যাচিটিউডটাকে ক্লাব কর্তাদের উচিত ছিল নিয়ন্ত্রণ করার। আমাদের সময় যখন পি কে ব্যানার্জী কোচ ছিলেন তখনও থঙ্গরাজ, শান্ত মিত্র, প্রশান্ত সিনহা এরা সবাই মিলে প্রদীপদাকে পরামর্শ দিতেন। আর প্রদীপদা সেই পরামর্শও নিতেন। ফলে সবাই মিলে বন্ধুত্বপূর্ণভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হত। ওতেই সাফল্য আসত। আজ খালিদ শুধু একাই কেন সিদ্ধান্ত নেবেন? কর্মকর্তারা তো ভাস্কর, মনোরঞ্জন আর তুষার রক্ষিতকে দিয়েছিল পরামর্শ দেবার জন্য। পরে সুভাষকে দেওয়া হল। ওদের কোন কথাই তো খালিদ শুনলো না। এরকম তো আর হতে পারে না। এটা সত্যি খুবই দূর্ভাগ্যজনক। তাই টাকা পয়সার সঙ্গে সঙ্গে যদি একটা সুন্দর সম্পর্ক ক্লাবে ফিরিয়ে আনা যায়, তাহলে সাফল্য আসতেই পারে। অবাক হব না।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে আপনার কিছু সেরা মূহুর্ত...
সাউথ কোরিয়ার বিরুদ্ধে যে ম্যাচটা খেলেছিলাম সেটা মনে পড়ে। আই এফ এ শিল্ড খেলার জন্য ন্যাশেনাল টিমের নাম নেওয়া তখনকার দিনে ইলিগ্যাল ছিল। ন্যাশেনাল টিমটাই এসেছিল, নাম দেওয়া হয়েছিল "কম্বাইন্ড ইলেভেন"। সেই ম্যাচে করা আমার একটা গোল যেটা তিন দশক হয়ে গেল মানুষের মনের মধ্যে রয়েছে। সেটা একটা সুখকর অভিজ্ঞতা বা স্মৃতি আমার। তারপরে '৭৮ সালে ব্যঙ্ককে 'এশিয়ান গেমসে' কুয়েতের বিরুদ্ধে আমি একটা গোল করেছিলাম। সেই গোলটা নিয়ে অমলদা (অমল দত্ত) বহু জায়গায় বলেছেন কিংবা লিখেছেন। কুয়েত খুব ভাল টিম ছিল। সেই টিমে ওয়ার্ল্ড কাপ খেলে আসা দলের সবাই ছিলেন। আমরা হেরে গিয়েছিলাম কিন্তু গোলটার কথা মনে আছে। যদি স্টিল ছবি দেখতে তাহলে দেখতে গোলটার সময় আমি তিনজনকে মাটিতে ফেলে দিয়েছিলাম।
আপনার সময় ভারতীয় দলের কোচ...
পি কে ছিলেন। গোলাম মহম্মদ বাসা বলে একজন ছিলেন। কখনও কখনও মিঃ হোসেন বলে একজন, এক সময় ভারতীয় দলের স্টপারে খেলতেন, তিনি ছিলেন। তারপর রন এসেছিলেন সাত দিনের জন্য, তখন কোচিং করছেন মেওয়ালাল। প্রায় প্রত্যেকের কাছেই কিছু না কিছু আমি শিখেছি।
আপনার স্মরণীয় গোলটাতে আবার ফিরে আসি... শুনেছি এই সট মারার টেকনিকটা নাকি কোচ অচ্যুত ব্যানার্জী আপনাকে শিখিয়েছিলেন।
ঠিক তাই। আমি ওনার কাছে শিখেছিলাম। এই ম্যাচের আগের দিন আমি অচ্যুত ব্যানার্জ্জীর ক্যম্পে গিয়ে প্রায় একশোটা শট মেরেছিলাম। উনি বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন যে ম্যাচে এই ধরনের সটের সুযোগ আমার আসতেও পারে। কাজেই ম্যাচে সুযোগ পেতেই কাজে লাগানোর জন্য মুখিয়েছিলাম, আর ঠিকঠাক ডান পায়ের সট-টাও গোলকিপারকে পরাস্ত করে জালে জড়িয়ে যায়।
শ্রীকান্ত আচার্য্য
বিবিধ ।। মতামত ।। সূচীপত্র
সাক্ষাৎকার
শ্রীকান্ত আচার্য্য
সংগীত শিল্পী
'চলে এস কথা হবে' - ছোট্ট কতগুলো কথা। সে কি আজকের কথা! বেশ কিছু বছর পিছিয়ে যেতে হবে। এক রবিবারের দুপুরে জমিয়ে আড্ডা হল শ্রীকান্তদার বাড়িতে। ছিমছাম পরিবেশে বাগান আর পাঁচিল ঘেরা শ্রীকান্তদার বাড়িতে বসল জমজমাটি আসর। সঙ্গে এক মাসতুত দাদা অশোকদা। নানা গল্প, আড্ডা, হাসি মজার মধ্য দিয়ে দিব্বি কেটে গেল বেশ কিছুটা সময়। 'কথায় কথায় রাত হয়ে যায়' না, রাত হয়ে যায় নি ঠিকই তবে এই দুষ্টূ দুপুর কখন যে তার সময় পেরিয়ে প্রায় বিকেলে কোলে ঢুলে পড়েছিল তা খেয়াল করি নি। শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য্যকে নিয়ে কিছু উপস্থাপনা করার দুঃসাহস আর নাই বা দেখালাম।সেই নব্বইএর মাঝামাঝি থেকে শ্রীকান্তদা সবসময়ই আমাদের কাছাকাছি আছেন, সে জি বাংলার 'সা রে গা মা' তে বিচারকের পদে গৌরব, নোবেল, অঙ্কিতার গানের কাটাঁছেঁড়ার জন্যই হোক কিংবা আপনার ঘরের খোলা জানলা দিয়ে পাড়ার জলসাতেই হোক। আবার কখনও শ্রীকান্তদার দেখা মেলে কবিতার আসরে কলকাতার নামী ব্যাক্তিত্বদের সঙ্গে নানান মঞ্চে। অশোকদার সহযোগিতায় অত্যন্ত অমায়িক এই শ্রদ্ধেয় শিল্পীর সঙ্গে বেশ কিছুটা সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা তাই ভাবলাম আর একবার তুলে ধরি মাধুকরীর পাঠকদের সামনে। ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
এই সাক্ষাৎকারটি পুনঃ প্রকাশিত।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ শ্রীকান্ত আচার্য্য, অশোক দে. ঐন্দ্রিলা ব্যানার্জ্জী দে
যোধপুর পার্ক বয়েজ স্কুলের দিনগুলো...
স্কুলের দিনগুলো খুব ভালো কেটেছে। পড়াশোনার পাশাপাশি গান বাজনা থেকেও খেলাধুলায়ও পাগল ছিলাম। স্কুলে একটু গান, নাটক এগুলো খুব সিরিয়াসলি হত। একবার একটা প্রোগ্রামে যোগেশ দত্তের এক সিনিয়র ছাত্র নিরঞ্জনগোষ্মামীর মাইম শো দেখেছিলাম। তা ঐটা দেখে স্কুলের একটা কালচারাল প্রোগ্রামে ঠিক ঐরক্ম মেকাপ করে মাইম শো করেছিলাম এবং সেটা হাইলি আপ্রিসেয়েটেড হয়ে ছিল। মনে আছে আমাদের অ্যসিস্টেন্ট হেডমাষ্টার পুষ্পেনবাবু ‘প্রফিয়েন্সি ইন ড্রামা’ বলে একটা বই প্রেজেন্ট করেছিলেন। তুমি একজন খুব নাম করা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারের নাম শুনে থাকবে। তেজেন আর আমি হচ্ছি খুব ছোটবেলাকার বন্ধু। ও খুব ভাল সরোদ বাজায়। তেজেনের বাবা শ্রী রঞ্জন মজুমদার প্রাইজ ডিস্ট্রিবিউশন অনুষ্ঠানে মিউজিশিয়ানদের একটা টিম নিয়ে আসতেন। আমি টিমের সঙ্গে গাইতাম। কিছু স্পেশিফিক গান ছাড়াও থাকত রবীন্দ্রসংগীত। তেজেনের আর এক বন্ধু প্রবুদ্ধ রাহা তবলা বাজাতো আর আমি গাইতাম। তেজেনও তবলা ছাড়াও খুব ভাল ম্যান্ডোলিন বাজাতো। এইভাবেই কয়েকজন মিলে আমাদের গান বাজনা চলত।
আর খেলাধুলা বলতে আমি স্কুল টিমের গোল কিপার ছিলাম। আর আমরা সাউথ ক্যালকাটা ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্ট স অ্যাসোসিয়েশন নামে একটা বোর্ডের পরিচালনায় ইন্টার স্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতায় খেলতাম। এর পাশাপাশি ক্রিকেটও চলত। সেন্টজেভিয়ার্স কলেজে পড়ার সময় সি এ বি আয়োজিত সামার স্কুল ক্রিকেট কলেজের টিমেও খেলেছি।
আপনি তো তবলা বাজানো শিখেছিলেন ওস্তাদ আলি আহমেদ খানের কাছে...
ছোটবেলায় রোল মডেল হিসাবে কেউ ছিল না। খুব সিরিয়াসলি গান বাজনা কেউ করেনি। আমাদের পরিবারে পড়াশোনা করে চাকরি করতে হবে এটাই গুরুত্ব পেত। যেহেতু ছোটবেলা থেকেই আমি আর আমার দিদি একটু গান বাজনা করতাম, আর মা চাইতেন একটু আধটু গান বাজনা শিখুক, তাই আমাকে দক্ষিণীতে ভর্তি করে দিলেন। আমার তবলাটাই বেশী ভাল লাগত। বাবা আলাউদ্দিন সঙ্গীত সমাজে ভর্তি করে দিলেন। এখানে তবলা ও শাস্ত্রীয় সংগীতের ওপর ক্লাস হয়। ওখানেই ওস্তাদ আলি আহমেদ সাহেব শেখাতে আসতেন। উনি ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সাহেবের আত্মীয় ছিলেন। মূলত সেতার বাজাতেন। ওনার কাছে মাত্র চার মাস শিখেছিলাম। তারপর উনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে উনি মারা যান। আমার তবলা শেখা একদম বন্ধ হয়ে যায়। ঠিক গান করবো কখন ভাবিনি তো তাই এখন মনে হয় ছোটবেলা থেকে যদি একটু পিওর শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম থাকত তাহলে খুব ভাল হত।
রবীন্দ্রসংগীতের ওপর ফরম্যাল ট্রেনিং বলতে যেটা ঐ দক্ষিনীতেই করেছেন। পরে রবীন্দ্রসংগীতও গেয়েছেন। তাহলে কি রবীন্দ্রসংগীতে আপনার স্পেশালাইজেশন ছিল।
না, একদম উলটো। দক্ষিনীতে গান শিখলেও মহঃ রফির গানে প্রভাবিত হয়ে পড়েছিলাম। আমার মামা খড়্গপুর আই আই টিতে পড়তেন। তা মামা একটা এইচ এম ভি রেকর্ড প্লেয়ার কিনে দিয়েছিলেন। রেকর্ডটাতে রফির গাওয়া ‘কোহিণুর’,’দিল দিয়া দর্দ দিয়া’, গ্যাম্বলার প্রভৃতি ছবির গান ছিল। একটু বড় হবার পর সবসময় বিবিধ ভারতী শুনতাম। যা শুনতাম তার আশি ভাগই রেডিও তে। ছোটবেলা থেকেই আমি সবই শুনি। কিশোর, রফি, মুকেশ সব। রবীন্দ্রসংগীত যতটুকু ভাল লাগে ঠিক ততটুকুই গাইছি। তার বেশী নয়।
গান কে পেশা...
কলকাতাতে একটা কন্সাল্টেন্সি ফার্মে মার্কেট রিসার্চের ফিল্ড ওয়ার্ক করতাম। পরে একটা চাকরি নিয়ে গেলাম নর্থ বেঙ্গলে। ওখানে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর কাটিয়েছিলাম। সেলসের কাজ ছিল, প্রচুর ঘুরতে হত। ৯৫ এ শিলিগুড়ি থেকে কলকাতায় চলে এসেছি। হঠাৎই আমার সাথে এইচ এম ভির এক অফিসিয়াল সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অদ্ভুতভাবে যোগাযোগ হয়ে গেল। ইস্কনের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট শ্রী শ্রী প্রভুপাদচরণাগোবিন্দ গীতার অষ্টাদশ অধ্যায় পর্যন্ত বাংলাতে অনুবাদ করেছিলেন। তা ইস্কনের এই প্রজেক্টটা ছিল ঐ বাংলা অনুবাদগুলিকে সুর করে গান হিসাবে বার করা। সোমনাথবাবু একদিন আমাকে ওনার সল্টলেকের বাড়িতে ডেকে পাঠালেন। আমার গান শুনে আমাকে গান করার অফার দিলেন। তখনও আমার সেলসের কাজ চলছে। সবচেয়ে বড় কথা হল এই কাজের সুত্রে সংগীত জগতের খুবই জনপ্রিয় কিছু ব্যাক্তিত্বের সঙ্গে আমার আলাপ হল। সেই আলাপের সুত্রে আর একটা কাজের অফার। কলকাতাতে ইন্ডিয়া লাইফ সেভিং সোসাইটির ব্যবস্থাপণায় ওয়াটার ব্যলেতে গান গাইবার ডাক পড়ল। সেই বছর শ্রীকুমারদা মানে শ্রীকুমার বন্দোপাধ্যায় এইটির ব্যবস্থাপক ছিলেন। ওনার কথাতেই গান গাইলাম। কো আর্টিষ্ট ছিলেন ইন্দ্রানী সেন। এই দুটো কাজ করার পর চাকরিটা ছেড়ে দিলাম।
একদিন রাসবিহারী মোড়ে মেলোডিতে গেলাম। মেলোডির মালিক ছিলেন উৎপলদা। আমরা দুলালদা বলে ডাকতাম। ওনার বলাতেই আমার একটা গানের ডেমো ক্যাসেট নিয়ে এইচ এম ভিতে গেলাম। এইচ এম ভি থেকে পাঁচদিন পর যোগাযোগ করতে বলা হল। কিন্তু কিছু হল না। ঐ দুলালদার কথাতে একবার গেলাম সাগরিকার মতিশীল স্ট্রিটের অফিসে। ওখানকার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার অনুপমদা পাঁচ বছরের কন্ট্র্যাক্টে আমার অ্যালবাম করতে রাজি হলেন। দুটো অ্যালবাম হল, একটি রবীন্দ্রনাথের গান, অপরটি বাংলা আধুনিক গানের। সত্যি বলতে কি আমার ‘মনের জানালা’ অ্যালবামটা যে লোকে শুনছে ভাবতেই পারছিলাম না।
টাইমস এফ এম এ প্রতি রবিবার টপ টেন লিস্ট করত। মনের জানালা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই টপে চলে গেল।ইন্দ্রনীলের অ্যালবামটা দুই নম্বরে চলে গিয়ে আমারটা এক এ চলে এল। কয়েকদিনের মধ্যে আনন্দবাজার থেকে ফোন, আপনার গান খুব চলছে একটা রাইট আপ চাই। তারপর সপ্তমীর দিন রাণীকুঠিতে আমার প্রথম পাবলিক শো, তারপরের দিনই তালতলায়। পুজোর পর ও প্রোগ্রাম চলতে লাগল। এদিকে সাগরিকা বলল পরের অ্যালবাম নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করুন। এইভাবেই শুরু হল।
আপনার প্রথম অ্যালবাম তো রবীন্দ্রসংগীতের ‘হে বন্ধু হে প্রিয়’ আর ‘মনের জানালা’ তো আপনার মাইলস্টোন, এটাতে আপনি গোল্ডেন ডিক্স থেকে আরম্ভ করে প্লাটিনামও পেয়েছেন...
এগুলো সব বিক্রির ওপর হয়। মনের জানালা প্রচুর বিক্রি হয়েছিল। এমন কি এখনো বিক্রি হয়। তারপর ৯৭ এ করলাম ধ্রুবতারা। সেটাও চলেছিল। আর এই দুটোই ছিল পুরোনো বাংলা গানের রিমিক।
৯৭এ আপনি অল ইন্ডিয়া রেডিও থেকে গীতবিতান ও পূজা প্রজেক্ট করেছিলেন...
খুবই প্রেস্টিজিয়াস প্রজেক্ট। গীতবিতানের সমস্ত গান স্বরলিপিবদ্ধ করে বিভিন্ন শিল্পীদের দিয়ে গাইয়ে একটা আর্কাইভ করেছিল। কলকাতার অনেক শিল্পীর পাশাপাশি ডঃ বালমুরারী কৃষ্ণ, জগজিৎ সিং, চিত্রা সিং, অনুপ জলোটা এতে গান গেয়েছেন। আমারও প্রায় ৬-৭ টা গান আছে। ঠিক মত পাব্লিসিটি করতে না পারার জন্য শ্রোতারা জানতেই পারলেন না।
আপনি কবীর সুমন সম্মন্ধে বলেছেন – এ ট্রায়াল ব্লেজার ফর কন্টেম্পোর্যারি বেঙ্গলি সং। কেন বলেছিলেন?
আমার গানের মোটিভেশন কিন্তু সুমনদা। সুমনদার সঙ্গে আলাপ আমার ৮৯-এ। সুমনদা বিদেশ থেকে পাকাপাকি ভাবে চলে এসেছেন। আলাপের পর ভেবেছিলাম দুজনে মিলে একটা দল করব। নানা কারণে সেটা আর হয় নি। আমি মনে করি মৌলিক বাংলা গানের ক্ষেত্রে একটা সময় এসেছিল যে লোকের কৌতূহলটাই চলে যাচ্ছিল। সুমনদা একক প্রচেষ্টায় একটা নতুন রাস্তা খুলে দিয়েছেন। সুমনদার গান যখনই শুনি আমরা মোহিত হয়ে যাই। সুমনদাকে যেখানে রাখি সেখানে আর কাউকে রাখি না। একমাত্র সুমনদাই আমাদের মধ্যে একটা অদ্ভুত মোটিভেশন তৈরী করেছিলেন। তুমি রূপঙ্কর, লোপামুদ্রাকে জিজ্ঞাসা কর ওরাও একই কথা বলবে। সুমনদা কিন্তু একটা জেনারেশনকে ইন্সপায়ার করেছে। আমার গান করার পিছনে কোথাও না কোথাও সেই ইনফ্লুয়েন্সটা রয়েছে।
৯৯ এ করেছিলেন ‘মা আমার’ -
সেই বছরটা কাজী নজরুল ইসলামের বার্থ সেন্টিনারি ছিল। তাই ক্যসেটার সব কটা গানই ছিল কাজী নজরুল ইসলামের শ্যামাসংগীত।
নচির ‘বৃদ্ধাশ্রম’ লেখাটি...
অসাধারণ! খুব ভালো। গায়ক হিসাবে তো খুবই ভালো। আবার দারুন লেখে।
আপনার পরের অ্যালবাম ‘নদীর ছবি আঁকি’ ...
সেটা ২০০১ এ। বৃষ্টি তোমাকে দিলাম এর ঐ একই ফ্লেবার নিয়ে করেছিলাম ‘নদীর ছবি আঁকি’। ওতে ‘ভালবাসা’ বলে গানটা আমার নিজের সুর করা প্রথম গান। কয়েকটা গান শ্রোতাদের ভাল লেগেছে। কোন প্রোগ্রামে গেলে ওনারা শুনতে চান।
"আমার গানের মোটিভেশন কিন্তু সুমনদা। সুমনদার সঙ্গে আলাপ আমার ৮৯এ। সুমনদা বিদেশ থেকে পাকাপাকি ভাবে চলে এসেছেন। আলাপের পর ভেবেছিলাম দুজনে মিলে একটা দল করব। নানা কারণে সেটা আর হয় নি। আমি মনে করি মৌলিক বাংলা গানের ক্ষেত্রে একটা সময় এসেছিল যে লোকের কৌতূহলটাই চলে যাচ্ছিল। সুমনদা একক প্রচেষ্টায় একটা নতুন রাস্তা খুলে দিয়েছেন। সুমনদার গান যখনই শুনি আমরা মোহিত হয়ে যাই।"
"পাঁচটায় সন্ধ্যাদি স্টেজে এলেন। বিশ্বাস কর, লোকে বলে না ক্রেজ, ক্রেজ কাকে বলে সেদিন দেখলাম। বিশ্বাস করবে, শ্রোতারা এসেছেন দিল্লী, বম্বে, আমেদাবাদ, ব্যাঙ্গালোর, মাদ্রাজ থেকে। তা ভুট্টোর (সৈকতের) গান শেষ। এবার আমার পালা। আমি প্রচন্ড টেন্সড। দিদিকে প্রনাম করে ওনার পাশে বসলাম। সন্ধ্যাদির দিকে তাকালাম। উনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। এক সেকেন্ডে আমার টেনশন উধাও। আই ফেল্ট সো রিল্যাক্সড যে তোমার কি বলব। সামথিং সুপার ন্যাচারাল ইন দ্যাট স্মাইল।"
- শ্রদ্ধেয়া শিল্পী সন্ধ্যা মুখার্জ্জী সম্মন্ধে...
‘তিতলির কথায় আসি –
তিতলির সংগীত পরিচালক ছিলেন দেবজ্যোতি মিশ্র। দেবু একজন অসাধারন ভায়লিন প্লেয়ার। ও একসময় সলিল চৌধুরীর অ্যাসিস্টেন্ট হিসাবে কাজ করেছে। নিজেও
সাধনা সরগমের সঙ্গে –
সাধনার সঙ্গে আমি দুটো অ্যালবাম করেছিলাম। একটাতে সমস্ত পুরোনো ডুয়েট গান আর একটাতে পুরোনো হিন্দি গানের বাংলা ভার্সান। ইন্ডিভিজুয়ালি প্রচুর কাজ করছে। খুব তাড়াহুড়োর মধ্যে মাত্র ঘন্টা পাঁচেকের মধ্যেই গানটা তৈরী করতে হয়। ঋতুর লেখা গানটা খুব সুন্দরভাবে ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছিল।
দীর্ঘদিন ধরে বি এফ যে অ্যাওয়ার্ড সারা ভারতবর্ষের ফ্লিম ও ফ্লিম সংক্রান্ত অন্য সব কাজে একটা অ্যাপ্রিসিয়েশনের মূল জায়গা। তাই অনেক অ্যাওয়ার্ড পেলেও এই অ্যাওয়ার্ডটার মুল্য আমার কাছে অনেকখানি।
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম – লীলাময় পাত্রে কথায় ও জয় সরকারের সুরে আপনার এই গানটির কথা তো আমরা জানি। অন্য গানগুলিও বেশ সাবলীল। আপনি এরজন্য আনন্দবাজার অ্যাওয়ার্ড ও ন্যাশেনাল কলাকার অ্যাওয়আর্ড পেলেন...
৯৬এ আমার প্রথম অ্যালবাম ‘মনের জানালা’ ছিল পুরোনো বাংলা গানের একটা রিমিক। ৯৭ এর গোড়াতে ‘এক ঝাঁক পাখি’ আমার নিজের প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম। মনের জানালা আর নীল ধ্রুবতারা এই দুটোই গানের রিমিক, আমার নিজের গান ছিল না। ৯৯এ ‘স্বপ্ন দেখাও তুমি’ নামে আমার নিজের দ্বিতীয় বাংলা গানের অ্যালবামটি করি। সে অর্থে হিট করল কিন্তু ‘বৃষ্টি তোমাকে দিলাম’ ২০০০ সালে। ‘বৃষ্টি তোমাকে দিলাম’ গানটার মুখরা কিন্তু অনেকদিন আগেই হয়ে পড়েছিল। অনেক সময় খুব ক্যাজুয়াল তৈরী করা গান লোকের খুব ভাল লাগে। আমি কিন্তু কথার ব্যাপারে একটু খুঁতখুঁতে। আর এই জন্মের গীতিকার, সুরকারদের নিয়েই কাজ করতে চাই। কারণ তাদের সঙ্গে আমার চিন্তা ধারার একটা ভাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়। আগেই সব ভাল ভাল কথা বা সুর হয়ে গেছে তা আমি মনে করি না। সুমনদা এমন সব গান লিখেছেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় না গৌরিপ্রসন্ন মজুমদারও লেখেন নি। সুমনদার কথার মধ্যে একটা স্ট্রেন্থ থাকে তা অন্যের গানের মধ্যে পাই না। কিছু কিছু নচির গানও আমার খুব ভাল লাগে। ওর কথার মধ্যে একটা পাওয়ার আছে। একটা অসম্ভব বোল্ডনেসের জায়গা আছে। সেই সময় নচি আর সুমনদা কিন্তু অনেককেই ইন্সপায়ার করেছে।
মৃনাল সেনের ছবি ‘আমার ভুবন’ –
এটা দেবুর কাজ। মৃনালদা ডেকেছিলেন। পুরো ডিটেলসে গল্পটা বললেন। গানটার কি সিগ্নিফিকেন্স, কেন আসছে, কি ফিলিংস থাকবে সব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেন। গানটা ছিল একটা রবীন্দ্রসংগীত ‘মম চিত্তে নিতি নিত্তে’। কারোর লিপে থাকছে না। ছবির দৃশ্যে কৌশিকের রেডিওতে গানটা বাজবে আর তার মধ্যে দিয়ে যেন ঐ দরিদ্র কৃষকের সামনে সারা পৃথিবীটা খুলে যাছে। এটা একটা বিরাট সুযোগ আমার কাছে।
ঋতুর আর একটা ছবি ‘খেলা’ তেও থিম গান গাইবার সুযোগ পেয়েছি। কিছুদিন আগেই রেকর্ডিং হয়েছে। সুর করেছে সঞ্জয় ও রাজা বলে দুটি অল্প বয়স্ক মিউজিশিয়ান। ভারী সুন্দর গান লিখেছে ঋতু।
বিদেশের প্রোগ্রাম ..
খুব ভাল লাগে। বিদেশের নানা রকমের অডিয়েন্সের সামনে গান গাইবার সুযোগ পেয়েছি। যারা বয়স্ক তারা পুরনো গান শুনতে চান। ওনারা খুব বেশী নতুন গানের সঙ্গে পরিচিত নন। আমার বয়সী যারা আছেন তারা আবার নতুন গান খোঁজেন। বাংলাদেশের শ্রোতাদের সামনে গান গেয়ে সবচেয়ে আনন্দ পেয়েছি। কারণ ওনারা শুধু যে বাংলাদেশের গান শোনেন তা নয়, কলকাতার বাঙালিদের থেকে অনেক বেশী গানের খোঁজ খবর রাখেন। ওনারা গান সম্মন্ধে এতটাই পরিচিত যে আমি সবচেয়ে আনন্দ পেয়েছি ওনাদের সামনে গান গাইতে। এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার কানাডা, সিডনি, মেলবোর্নে।
ক্যাসেট, সিডি বিক্রি, টিভি তে প্রোগ্রাম আর ফাংশান কোনটা আর্থিকভাবে লাভজনক।ফাংশানে গান। অন্যগুলিতে আয়ের আর কোন উৎস নেই। সময় পাল্টেছে। সাত আট বছর আগেও ব্যাপারটা অন্যরকম ছিল।
এখন পাইরেসির যুগে সব কিছু ধবংস হয়ে গেছে। সি ডি বার করি মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য। কোন আর্থিক সুরাহা হয় না। টেলিভিশনে খুব একটা কন্সট্রাকটিভ ওয়েল ডিজাইন্ড প্রোগ্রাম ছাড়া কোন অর্থনৈতিক লাভ হয় না।
উত্তম সিং এর সুরে আপনার প্রথম হিন্দী ক্যাসেট ইয়ে চাহত...
আমার একটা হিন্দী অ্যালবাম করার ইচ্ছা ছিল। যখন সাগরিকাতে ছিলাম তখনই আমাকে অফারটা করা হয়েছিল। সুরকার উত্তম সিং সুরে গানগুলো হয়েছিল। তবে এই কাজটা করে খুব একটা স্যাটিস্ফাইড হতে পারিনি। আমার পছন্দ, অপছন্দ নিয়ে বলার মত স্কোপও ছিল না। সেইজন্য এই অ্যালবামটা কেমন রেসপন্স পেল সেই নিয়ে মাথা ঘামাইনি। তবে ভবিষ্যতে হিন্দী অ্যালবাম নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে যেখানে নিজের ইচ্ছাটা একটু জানাতে পারব।
গানের জনপ্রিয়তার পিছনে মার্কেটিং, ডিস্ট্রি বিউশনের প্রয়োজনীয়তা বা দক্ষতা...
গানবাজনার একটা বিনোদনের দিক নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু যদি বিনোদনটাকেই গুরুত্ব দি তাহলে প্রজেক্টটা পুরোটাই একটা কমার্শিয়াল ভেঞ্চার হতে থাকে। কাজেই পুরো একশ ভাগ কমার্শিয়াল ইন্টারেস্টটাই ভাবা হয় তাহলে হয় মুশকিল। গান বাজনা তোমার মনের একটা শান্তির জায়গা, এটা কে খালি চোখে দেখা যায় না। অনুভব করতে হয়। যদি অনুভবের জায়গাটাই না থাকে তাহলে আর কি রইল। টেলিভিশনকে দায়ী করা যেতে পারে। ওরা শুধু দেখাবে, শোনাবে না, অনুভবও করাবে না। এরকম চলতে থাকলে আমার তো মনে হয় গান বাজনার কোন লাভ হবে না।
প্রবীণদের মতে বাংলা গানে মান নিন্মমুখি...
সর্ব যুগে এটা সব সময় হয়ে এসেছে। রবীন্দ্রনাথ যখন যুবক ছিলেন তখন প্রবীণরা তার সমালোচনা করেছিলেন। কাজেই এটা কোন ব্যাতিক্রমি ঘটনা নয়। এখনকার প্রবীণরা আমাদের সমালোচনা করেন। একটা বয়েসের পর মানুষের মন বিশেষ কিছু বিশ্লেষণ করতে চায় না। প্রবীণদের সময় গানের কথা খুব সুন্দর ছিল, আবার তার পাশাপাশি অতি সাধারণ মানের গান হয়েছিল। যেমন আমার প্রাণাধিক শিল্পী শ্যামল মিত্রের ‘বাজ পড়লে চমকে উঠে জড়িয়ে ধর আমায় তুমি’ কিংবা ‘পিয়াল শাখার ফাঁকে বাঁকা চাঁদ ওঠে ঐ, তুমি আমি বাসর জেগে রই’ ইত্যাদি ইত্যাদি। খুব অ্যভারেজ কথা। অনেক সাদামাঠা লেখা শুধু বেরিয়ে গেছে অসাধারণ সুর আর গায়কীর ওপর বেস করে। পঞ্চাশ বা ষাটের দশকে সেভেন্টি আর-পি-এম দুটি দিকে দুটি করে গান থাকত। সারা বছর শিল্পীকে চারটে গান গাইতে হত। আর এখন একটা সিডিতে কম করে দশটা গান। যদি গানের সংখ্যা কমনো যেত তাহলে হয়ত গানের মান আরো বাড়ত। দশটা দুর্দান্ত সম মানের গান করে দেওয়া সোজা নয়। কিন্তু খারাপ লাগে যে এখনও কিছু ভাল গান ঐ সব সাধারণ গানের তলায় চাপা পড়ে যাচ্ছে। গান বাজনা কোন স্থবির স্ট্যাগনেন্ট হতে পারে না। ভাঙাচোরা চলবেই। সুমনদা বলতেন যে প্রত্যেক যুগ তার আধুনিকতাকে ভয় করে। সত্তর দশকে একবার সলিল চৌধুরী বলেছিলেন আমরা যে গানবাজনা করে গেলাম সেটাই গান বাজনার শেষ কথা এটা ভেবে নেওয়ার কোন কারণ নেই। এক সময় আসবে আমরা থাকব না, আমাদের গান বাজনাও থাকবে না, নতুন যুগের মানুষ আসবে, নতুন গান তৈরী হবে, নতুন ভাবে সে তার ভাব প্রকাশ করবে। নতুন যুগের মানুষ যে গান শুনবে।
আপনার প্রিয় গায়ক বা সুরকার কে?
কাকে ছেড়ে কাকে বলি বলত। সিনিয়ারদের মধ্যে মহঃ রফি আর মান্নাদা। এই দুজনের মধ্যে হলে মান্নাদা প্রথম। এছাড়া কিশোরকুমার, মুকেশ। মহিলাদের মধ্যে আশা আর লতা। সুরকারদের মধ্যে অনেকই আছেন। রাহুলদেব বর্মণ, মদনমোহন আমার খুব পছন্দ। আর একজন সুরকারকে আমি প্রচন্ড শ্রদ্ধা করি, তিনি হলেন সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। আমি সুরকার হেমন্ত মুখার্জীকে গায়ক হেমন্ত মুখার্জীর থেকেও একটু উঁচুতে রাখি। উনি এমন কিছু গানের সুর করেছেন যা আউটস্ট্যান্ডিং, তার তুলনা হয় না।
এই সময় বাংলার সুরকারদের মধ্যে-
জয় সরকার। জয়ের কাজ আমার অত্যন্ত ভাল লাগে। চিরদীপ দাশগুপ্তও ভাল কাজ করছে। রূপঙ্কর সুগায়ক, তার পাশাপাশি সুরটাও ও খুব ভাল বোঝে। অবশ্যই নচির গানের সুরও আমার খুব ভাল লাগে ।
ব্যান্ডের গান...
ব্যান্ড মিউজিক হল একটা নিউ ফর্ম অফ এক্সপ্রেশন। তরুন তরুনীরা তার মনের কথা এই নিউ ফর্মের মধ্যে পাচ্ছে তাই যাচ্ছে ওদের কাছে। আর সব সময় যে একাই গাইতে হবে এমন কোন কথা নেই। কিছু ব্যান্ড তো ভালই, বিশেষ করে আমি চন্দ্রবিন্দুর অসম্ভব ভক্ত। ভূমির কিছু গান আমার ভালই লাগে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ...
কিছুই নেই। যদি কিছু করি তার মধ্যে যেন কিছু বিষয়বস্তু থাকে।
কোন মজার ঘটনা...
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ২০০৫ সালে একটা প্রোগ্রামে পর এক ভদ্রলোক একটা টিফিন বক্স দিয়ে বললেন এখন খুলবেন না, বাড়ি গিয়ে খুলবেন। সিডনিতে আমার বন্ধু শোভনের বাড়িতে ছিলাম। তা শোভনের বাড়িতে গিয়ে বক্স খুলে দেখি ওর মধ্যে রয়েছে পিস করে কাটা একদম ফ্রেস বাংলাদেশের ইলিশ। গান গাইতে গিয়ে যে ইলিশ পেলাম এটা ভুলতে পারিনি।
কোন বিখ্যাত মানুষের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে অভিজ্ঞতা ...
২০০৫ এ কলকাতার সাইন্স সিটিতে বিশাল একটা প্রোগ্রামের আয়োজন হয়েছিল। আমার ধারণা সেইটাই সন্ধ্যাদির মানে সন্ধ্যা মুখার্জীর শেষ একক অনুষ্ঠান। আমার আর সৈকতের দুটো করে গান করার কথা। আমি গাইব অ্যান্টনী ফিরিঙ্গির ‘চম্পা চামিলী গোলাপের বাগে’ আর চিরদিনের ছবি থেকে ‘আমাকে চিরদিনের তুমি গান বলে দাও’। সন্ধ্যাদির বাড়িতে রিহার্সল। ভীষণ টেনশনে আছেন, শরীরটাও খুব একটা ভাল নেই। আমরা চারটেতে সাইন্স সিটি পৌঁছে গেলাম। পাঁচটায় সন্ধ্যাদি স্টেজে এলেন। বিশ্বাস কর, লোকে বলে না ক্রেজ, ক্রেজ কাকে বলে সেদিন দেখলাম। বিশ্বাস করবে, শ্রোতারা এসেছেন দিল্লী, বম্বে, আমেদাবাদ, ব্যাঙ্গালোর, মাদ্রাজ থেকে। তা ভুট্টোর (সৈকতের) গান শেষ। এবার আমার পালা। আমি প্রচন্ড টেন্সড। দিদিকে প্রণাম করে ওনার পাশে বসলাম। সন্ধ্যাদির দিকে তাকালাম। উনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। এক সেকেন্ডে আমার টেনশন উধাও। আই ফেল্ট সো রিল্যাক্সড যে তোমার কি বলব। সামথিং সুপার ন্যাচারাল ইন দ্যাট স্মাইল। পর পর দুটো গাই গাইলাম। তবে ঐ হাসির কথা আমি জীবনেও ভুলতে পারব না।
সৌরভ গাঙ্গুলী
বিবিধ ।। মতামত ।। সূচীপত্র
সাক্ষাৎকার
বন্ধুরা, মাধুকরীর পুরানো সংস্করণে বেশ কয়েক বছর আগে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। নতুন সংস্করণে যুক্ত করা ও বন্ধুদের আরো একবার অবগত করতে সাক্ষাৎকারটি আবার প্রকাশিত হল। আমাদের সকলের প্রিয় 'দাদা' মানে সৌরভ গাঙ্গুলীকে নিয়ে কোন ভুমিকার প্রয়োজন পড়ে না। মাধুকরীর পাতায় দাদার কথা নিয়ে লেখার ইচ্ছা ছিল অনেক দিনই। ডালাসের এক বন্ধু-সম দাদা দেবব্রত সাহার মাধ্যমে পৌঁছে গেলাম ওনারই এক বন্ধু ন্যাশভিলের রানাদার কাছে। যোগাযোগের শুরু ওখানেই। তারপরে যখন কলকাতায় পৌঁছে সৌরভ গাঙ্গুলীর এক ঘনিষ্ট বন্ধু জয়দীপ মুখার্জীর কাছ থেকে একটা ফোন এল তখনই বুঝলাম যে স্বপ্নটা সত্যি হতে চলেছে। তার আগে অবশ্য একটা ছোট্ট স্ক্রিনিং টেস্ট দিতে হয়েছে।মানে আমি কে, কোন ওয়েব পেজ জন্য এই সাক্ষাৎকার, কেন নিতে চাই... এই ছোটখাটো কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানাতে ছোট্ট একটি বিবরণী জয়দীপবাবুকে পাঠিয়ে দিতে হয়েছিল। তাই একটু দ্বিধায় ছিলাম যে আদৌ সাক্ষাৎকারটি পাবো কিনা। ভয় ছিল তীরে এসে না তরী ডোবে!
শেষ পর্যন্ত খুবই ভাগ্যবান যে দাদার সৌজন্যে সাক্ষাৎকারটি নেওয়া সম্ভব হয়েছিল।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার - সৌরভ গাঙ্গুলী - দাদা, জয়দীপ মুখার্জী - কলকাতা, রনিদা - ন্যাশভিল, টেনিসি, দেবব্রত সাহা - ডালাস, টেক্সাস
"Ganguly is a classy left-handed batsman and a right-arm medium-pace bowler. His ability to play shots on the off side is special because there are very few players who can hit the ball in that area as crisply as he does. Former Team India skipper Rahul Dravid once commented, "On the off-side, first there is God, then there is Ganguly. Nobody can dispute that he was India's most successful and aggressive Test captain."
How did you spend your 'Durga Puja' holidays?
For years I have missed out on Pujo, due to my cricketing commitments. I have grown up in a joint family and had loads of fun as kids during this festive season. So, ever since I have retired, I have made sure that the old times are back. Some of my cousins have also left Cal with work, but this is one time of the year that they are back and the fun is unbelievable. Some very close friends join in too which makes it even more special. We play the dhak, eat 'bhog', spends lots of time in the pandal, eat out and do some pandal hopping, although I am confined to my car.
Your fans still find 'something' went wrong behind your back that forced you to take sudden retirement...
I always felt that there is I should leave this game at a time when everyone says 'why' as to 'why not'. I have been playing for India for a long time and the time had come to move on. That's it, to it, really.
You left National Team to save or back some other people... is it true?
I have always backed my players.I was blessed to have had some fantastic cricketers in the team when I was captain. Senior players like Kumble, Tendulkar, Dravid and Laxman with young stars like Sehwag, Harbhajan, Nehra, Zaheer, Yuvraj, Dhoni to follow. I did not play much domestic cricket at the time, but whoever caught my eye and if I got to know about some young players having special talent, I made sure they got a proper look in.
What are you doing after retirement?
I have been busier than ever before. I am in the process of building an educational institution. Apart from that, I am playing in the IPL, host a tv quiz show and there is other work that comes my way. So, all in all, it's been busy.
I heard in school days, you made fun of your teacher and gave hard times by adding something in his drink...
No, all this is not true. I was a bit of a prank star but not to this extent. Our fun was more amongst cousins and friends.
'If you do not have any problem in your job, you are not doing your job"... why did you write this quote on the back of your kits bag?
Again that's not true. I think we will all agree that no matter how good your job is and however well you might be doing, there are always some problem areas that need to be taken care of.
How did you motivate yourself in your rough times, once you were replaced so badly, although it was good to see you came back after accepting that challenge?
Must be good genes that I have inherited, I suppose. This is something that came naturally to me. People who know me from close will vouch for the fact that I am introvert and a quiet person off the field. Its quite something else on the field and it came about naturally to me. International cricket is a tough stage and to survive for a number of years, mental strength is of prime importance.
Why did you meet Board President Mr Shasank Monohar on the next day of your retirement? If I remember correctly, Mr Sunil Gavaskar, Mr Kapil Dev also did not receive such an honour from the Board President when they said 'goodbye' to cricket. Was it just a formal meeting or something else?
Personal.
You brought Greg as an Indian Coach. You had a lot of expectations. We all are familiar with the outcome of your decision. We have seen our "dada" to handle all adverse situations very efficiently, why this exception happened?
Personal.
You are very close to some veteran political leaders, is there any plan to join in politics in near future?
No Comments.
"The selectors had made up their mind to drop Anil Kumble from the 2003-2004 Australia tour. But Ganguly put his foot down and ensured that the legendary spinner makes it to the series. This was disclosed by Ganguly himself during a promotional event
"I like what I see in MSD's captaincy. People say there are a lot of similarities and they might well be right. He also seems to be his own man and has done very well for India. He will be the 1st one to admit that he has inherited a very very good team and Gary Kirsten has done a fabulous job with the squad."
What do you think about MS Dhoni?
I like what i see in MSD's captaincy. People say there are a lot of similarities and they might well be right. He also seems to be his own man and has done very well for India. He will be the 1st one to admit that he has inherited a very very good team and Gary Kirsten has done a fabulous job with the squad.
What was the most difficult decision you had ever taken as a skipper of Indian Cricket Team?
To leave Anil Kumble out of the one day team.
Have you seen any promising cricketer in youngsters, having the ability to show us second "Saurav Ganguly" in near future?
There are a few juniors who look promising. I hope and pray that they go on to become better than me and do the state and the country proud.
Which bowler do you think, gave you tremendous hard time on the ground?
Glen Mcgrath
"Saurav Ganguly of India is bowled by Glenn McGrath of Australia, during the 2nd One Day International between India and Australia, played at Nehru Stadium, Pune, India."
What will be Dada's role in future, a businessman or a successful Board President or Political Leader or cricket commentator?
Have not thought that far to be brutally honest. When I retired I was already committed to Kolkata Knight Riders. The school was always in the pipeline and Dadgiri came along. So things have been happening. I have been out on the road a lot in the past 15 years, so I try and spend as much time with my family as possible. I love Kolkata.
Have you bought a news channel called "Chabbis Ghanta", is it true?
That is not true. Dont believe everything you hear about me !!!
In last IPL your performance was magnificent, you were on fire but your team players were losing their ground.
I think everyone was motivated and beyond. We have had one ordinary and one bad year and we all knew that this was the last time we were all playing together. We gave it all we had, and we did the best is 3 years. We were tied 3rd in points but lost out on the net RR. What people don't think 8 team competition and it is the very cut throat. If a team goes off the boil a bit at a crucial time, it could miss out. We had one bad game v King's 11 at Eden Gardens and that loss came back to haunt us.
Any special game plan for next IPL...
Well, there is a new auction that is scheduled for January/February. The fact that there will be an auction after 3 years was always in the cards, as it was stated when IPL was formed. We will have to wait and watch who lands up where.
Do you have any other offer for hosting a show like "Dadagiri Unlimited"?
Even if I had the offer I don't have the time. I know it looks quite chilled out on tv but its hard work and time-consuming.
'Dada' on the floor of "DadaGiri Unlimited" conducted by Zee Bangla. The reality show is all set to welcome a 100-year-old man in their show.
Dada got huge respect from a 100-year old "young" man.
Why do we need a "Psychologist" like Mr Sandy Gordon in Indian Cricket Team? Do not you think this responsibility can be shared by the Captain and the Coach of the team?
The coach and captain have a lot on their plate. There are lots of areas to cover, not only on the field but off the field too. So, any help that comes your way from the team management is always welcome. I know of a fair number of players who have benefited from such help, so I am game for it.
About Sachin...
I can talk for days about him. God of a player, friend, partner and one that I can always count on. We have had some great times in the middle and some great times outside. We have spent 15 years of our lives together, just to be able to watch him from close and form a partnership that stood the test of time and performance means a lot to me.
Favourite Singers and Music Directors in Bengali and Hindi
Kishore Kumar - Singer Bengali
Lata Mangeshkar - Singer Hindi
Hemanta Mukhopadhyay - Music Director Bengali
Rahul Deb Burman - Music Director - Hindi
Tricks to hold success...
Work hard, follow your dreams and enjoy the ride.
অনীক ধর
বিবিধ ।। মতামত ।। সূচীপত্র
সাক্ষাৎকার
Aneek Dhar
Playback Singer
Sa Re Ga Ma Pa Champion 2007
সা রে গা মা পা... সালটা ২০০৭। উত্তেজনা ভরপুর। ফাটাফাটি প্রতিযোগিতা, ফাইনালে অনীক চাম্পিয়ান হবার পর ওকে ধরতে পৌঁছে গিয়েছিলাম ওর বাড়িতে। জমে উঠল আড্ডা। জানা গেল এই সব রিয়েলিটি শোর এর পিছনে থাকা অনীকের মত অন্যান্য প্রতিযোগীদেরও কি অসম্ভব চাপের মধ্যে নিরন্তর নিজেকে মোটিভেট করতে হয়। কথায় কথায় জানা গেল কিছু অজানা তথ্য। খোলা মনে আড্ডা চলল। বন্ধুরা, মাধুকরীর পুরানো সংস্করণে বেশ কয়েক বছর আগে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। নতুন সংস্করণে যুক্ত করা ও বন্ধুদের আরো একবার অবগত করতে সাক্ষাৎকারটি আবার প্রকাশিত হল।
"I was born and brought up in Lake Gardens (Calcutta). We have a house there. Schooling, music, sports activities, friendship -- all began there. My father is in a medical profession. He is a psychologist and my mother is a housewife. We belong to a joint family. The family have all kinds of professionals like a doctor, engineer, scientist etc. Since my childhood, I have yearned for music."
Tell me about your childhood. Where and how did you spend your childhood?
I was born and brought up in Lake Gardens (Calcutta). We have a house there. Schooling, music, sports activities,friendship--all began there.My father is in a medical profession. He is a psychologist and my mother is a housewife. We belong to a joint family. The family have all kinds of professionals like a doctor, engineer, scientist etc. Since my childhood, I have yearned for music. While my mother sang, I used to listen to her. In fact, my mother started to train me with harmonium as I was growing up. It was somewhat a regular and formal training. At that time my family was facing some problems. Still, I would like to say that I struggled a lot to establish myself as a singer. Truly speaking I started singing from childhood. To get the training I used to meet many people. I learnt Rabindra Sangeet from Mr Pramit Sen, the son of late Sagar Sen, an eminent singer of Rabindra Sangeet. In our locality, Mr Sudeep Roy, a disciple of late Manabendra Mukherjee( great singer of yesteryear) stays. He loves me very much and trained me with the songs of late Manabendra Mukherjee, Late Shyamal Mitra and Manna De(all great singers) Mr Sen trained me also in Mr.Manna De's Classical Songs. At present, I am getting training from Mr.Jayanta Sarkar. From him, I am learning classical music. When I get chance I meet Mr Ajay Chakraborty to get a few tips.He also loves very much. I call him uncle. Just I wish to meet Ostad Rashid Khan for once.
You've not met him yet!
It has not happened yet. I have met all the people I love except Ustad Rashid Khan. Anyway, I attended different competitions. I was a student of Nava Nalanda. The school used to organize Nalandasree Competition. I always joined that and I used to achieve the top position every year and got Nalandrasree Award. Besides these, I used to participate in the competitions organised by Tollywood and TV Channels. I used to be among top three positions.Sometimes I got eliminated too. One such competition was presented by Zee Bangla and produced by Prime Music.It was named Zee Bangla Golden Voice. Mr Mithun Chakraborty was the anchor. There I could not proceed much. I was eliminated out of the top eight. My parents were hurt very much.Naturally grandparents also got hurt. But I was not upset at all and hoped and waited for better. Actually many incidents may happen in your life. Just one and a half month passed away and I saw the advertisement of Zee Bangla Sa-re-ga-ma-pa. This is a great event. You know among all the competitions its vastness surpasses others. Its name implies its creativity. The brand of the singers too is the reason for its vastness. At once I applied to join and gave audition. Competition started. You saw Debajitda was anchor and with the blessings of Almighty I was among top three competitors. And at last I became the champion. After that I was told, for Sa-re-ga-ma-pa you are directly promoted to "Vishvayudha" --(the name of the show as participants across the world joined it.) Still I remember the affection of Mr. Rajeeb Chatterjee,the Business Manager of Zee. He had told me I must win. I assured him that I would try my level best. It was a time of my life. I was called to Mumbai for the competition.In Calcutta I have to appear for My HS(+2) final examination. I requested my father to let me go to Mumbai.I promised him that I would be the champion and I would secure 60% in the examination. For, I did not hope to better than this in the examination which was very tough. But my father was a bit pessimist.He said that a small fry like me would be lost in the vast ocean. I again requested my father to allow me to go to Mumbai to take a chance and try. Besides these I knew that I was one year ahead agewise to appear for HS Final Examination. Taking everything into consideration I thought that if anything went wrong it could be adjusted.(with a smile). You can say thus I made myself tension-free. Then I bought three two-way tickets for Calcutta-Mumbai flight. Thus I planned to appear for Physics,Chemistry and Mathematics examination papers. Went to Mumbai and would return to Calcutta.on the eve of the exam. day and I would fly back in the next afternoon. However I had to stay at Mumbai for two months. One day I was just taken to Brahmashastra(name of a round in the competition). But was greeted by Ismailji in a sarcastic way. He wondered how come I got chance in this Vishwayudha! Anyway,thank God, got a chance to sing.After that I progressed gradually to top four, then to top three. The Zee management took the decision to choose the champion among top three, not between top two.According to them we three: Amanat,Aneek and Raja are all good singers but of different style. With everybody's blessings I became....
How are you doing in St.Xaviers' College? Are you still carrying on?
I could not continue as I had a problem with my attendance. I could not attend a single class. Just attended a fest there.
How do you get the inspiration to compete in the reality show? Hope it is from your family.
You know the support from the family is most important. To establish and succeed the support of one's family is essential.I think myself zero without my family support. I belong to a joint family. In fact, my uncle, parent and aunt all gave me the support. My uncle bought me a synthesizer and a sound system so that I can improve in Music. This kind of gesture from the family make you feel lucky.
The inclusion of and Avijit Kosambee and you in the "Brhmashastra Round" raised a huge controversy. leave alone Mr.Darbar, even your mentor Himesh too questioned your inclusion. Feel you were afraid of not getting a chance.
Look Mr.Ismail Darbar is a legend.It was my first entry and it was an awesome feeling to meet personalities like Himesh Reshmiya, Vishal-Shekhar, Bappida. I was afraid that there might be a possibility, say one in hundred; not to get a chance to enter. I told my fellow competitor Adi to take care of me. He told me not to be tense and everything would be okay.At that time we were on the stage. At last Himeshji requested Ismailji to let me sing. I sang "in Dino.." and the journey started.
Maadhukari: Afterwards we observed that Himesh became a great fan of your songs. You too told him "I love You" ecstatically. Is this the magic of your songs or the credit of the organizers?
Fine, you have raised the issue. I would like to tell you that not only I am the student of Himeshji but also I am a great fan of him. Still, I remember an incident. I was in Golden Voice and I was not as famous as I am now. Then he came to Nicco Park to perform and we mean the Golden Voice was to perform there. We were ten. In the program the last big name was Himeshji. He would come early and leave after his performance. But I came to learn that Himeshji had come and found him in the green room. Still, it made me laugh. I found Himeshji was moving here and there and two of his security guards were shadowing him with arms in their hands.
Perhaps at that time, he was under some threat.
Celebrities always face some kind of danger. As I went to meet him his security person threatened me with dire consequence.I was hurt. But on that day itself, I promised myself that one day I would embrace him in front of his guard. On the day of the final Akshaykumar declared my name as Champion and instantly I embraced him and said: "I love you, sir." And I felt a peace of mind. The viewers did not know these and thought that Aneek did not thank them. But now you know that situation had an old story behind.
In fact, I meet you for this. Do you think that could the good singers like you get this much popularity if there were not the reality show? I feel you owe your achievement to these organizers.
Definitely reality show will not make one a star. Only one's hard work and luck can make one a star. For amateur talents like us, they give a background. I am Aneek and a singer. You think I sing well. They have created a passion in the world. The credit goes to them as they made it possible to project us among the viewers of 132 countries. All the viewers know us. In fact, USA, UK and Canada all are related to India. But, I was really shocked when went to Israel and Kuwait and found that people there also watched our shows. Truly speaking they are literally crying when we're leaving the country. I am very much grateful to Zee for giving me a beautiful platform. Now it depends upon one's own effort. I mean to say to improve the enrichment of my voice and to place myself. I have to keep the public relations. I think all these are primary criteria for success.
May I ask you when you were singing "Jaane keya chaahe man" of "Pyar ke side effect, "you told actor Diya Mirza flirtingly "I love you Diya. Do you love me?" Is this required to exist in the race?
In fact, I was not taught these sort of things. Not even taught by Sa-re-ga-ma-pa people. In fact, Himeshji once aids me that he had not trained me with these sort of stuff. I said him I had seen you, Vineet to make masti in the show of 2005. Then I thought given a chance I would also make some sort of masti. So always made some masti after finishing my song. It may be Diya, Shahrukh or Salman.
Were these pre-planned?
Not at all. It was mere spontaneous. People among the audience and the members of the staff of Zee would love me because of this. So I said those to Diya directly without thinking about the circumstances.
You sang "O, O Jane Na". While I was singing all of a sudden Salman Khan took off your shirt. People say Salman is used to this sort of craziness. Weren't you stunned? How did you control the situation?
It was Salman Khan. If now he took off my shirt, it does not matter. But during the live show this kind of action would make a hype, I thought. for, Salman took off my shirt, He is a bigshot and for him I am nobody. So, I like the attitude of Salman Khan. I like him very much. I also like his angry man attitude.He has got something rather a macho-like thing. For this, I am a fan of Salman Khan.
That embarrassed you were a bit Found that you had tackled the situation nicely. But initially.
At first, I was shocked. Thank God and thanks to my parents.Their blessings made it possible to carry on singing.Hardly anybody can sing in that situation. In front of all the audience, I was half-nude. There were women as well men among the audience. I controlled myself and told myself to think that I was dressed. I told myself not to be nervous and weak. I gained these experiences which had built my mental strength. In my tender days when I attended functions, any adverse comment would make me sad. Became nervous and weak. There, I decided not to be nervous and weak in any situation. I had this sort of determination within me and I controlled myself and began to sing again.
You got 5 million rupees in cash and a Chevy Spark! Anything more?
Besides these (with a pause), look I did not achieve these things. Because anybody can make money and cars. My ambition was the popularity among people. I would tell my mother to note how much I had to slog to reach here. Since my tender age I have been singing and that results in getting the chance to participate in this competition like Sa-re-ga=ma-pa. I know money, cars etc are essential. Money is very much essential in life. To live in metros like Mumbai or Calcutta car is very much essential. To establish oneself these things are required. Above all the fame is more important. People will know me as "Aneek Dhar" and love me---it was my aspiration. I had a dream that people would meet me and take my interview. To me, the album of mine is a great achievement. I meant to say the album, the exposure to the industry was my aim. I have made it possible with the blessings of God. I must be very much grateful to God.
How did you prepare yourself for the competition? What you did when you were into that? how did you spend the whole day?
I had to put in much labour. I worked hard. I kept my all my labour and hard work within myself as I did not want any sympathetic opinion about my performance. I feel I was the most hard-working challenger in the competition. In fact, I can prove it. I knew nine of us: Raja Aamanat, Mauli, Sumedha, Harpreet, Juned, Musharraf and Punam are know to the viewers. We would check the tracks. Track means minus one.(one has to sing with the recorded music) On that, we would sing on the stage. In the beginning, I would check the tracks to listen to my tracks. Nobody else would do that. I visited the place where the tracks were made. I would sit with Mr Sanjay Vidyarthi who was monitoring the tracks. If required I would say to him to change the tone guitar or the string or the tone of the bass guitar. My fellows followed it and they began to check the tracks. I won't disturb anybody. Everybody used to work till four in the morning. Just imagine we had to go to the studio at eight in the morning for the shooting and everybody was working on the tracks. At four o'clock in the morning, everybody except me left the place by car. I would still sit with Sanjayji and that was about six in the morning. I made the track whole night.
Did you do so?
I was preparing the track with Sanjayji. At about six in the morning, I would go the flat where I stayed. Then I won't be helped with a car for I was a mere participant. Within seven I would go the studio. No food, no sleep or rest within last 24 hours. You viewed the show in two episodes; Friday and Saturday. But the shooting was done in a single day. The shooting of Friday's' episode was done in the morning and we remained a bit fresh. But the night shooting was tedious. I tried my best to store my energy for that. For these, I claim myself the most hardworking participant.
Actually, People were not aware of these...
Yea, how could they know!
Once I got the chance to speak to Karunia, the finalist of Indian Idol. He said that he had to slog. He could sleep for four to five hours in a day. Didn't you face such sort of stress situation?
The stress was a great factor. If you can't sleep your voice, mindset, the mood will be affected. Lots of things matter. Under the situation the rest and sleep become secondary.
In fact, priority differs. Within you, the desire to perform excellently becomes utmost important. And, I always wanted this.
How was it possible to carry on without any rest?
It would not. But you had to carry on. I took this as a responsibility. Just I was determined that I was in, I must win. But I always tried to perform well. I readied myself to give my best without the concern for the result. I think everybody possesses this kind of fighting spirit. In case you go to perform this determination will be there. Without this nobody can achieve. You must have the spirit to fight.
You had spent time with the famous musicians like Himeshji, Ismailji, Bishal-Sekhar and Bappi Lahiri and sang songs composed by them. Did you learn anything which will be helpful to you in future?
Where else could I learn? Himeshji, Ismailji, Vishal-Sekhar, Bappida all are great figures in the industry. If they wish you with a few words, you can learn something from that.
What's about the technicality?
I got many tips from them. Vishalji told me "you will be the number one singer in the industry. The Industry wants technical singer like you. You perform like Sonu. On the stage, You are exuberant like Sonu. You are the one who sings a tune properly." Bappida told me " You are Bengali, I am proud of it." Ismailji uttered "Pray God you may be the winner". About Himeshji, I must say he is father-like. Their love had taught me many things which I can't express in words. I hope you will understand that I have learnt a few things when my album will be released.
Before the final, you told that musically Aamanat should win, but Raja may win with the people's vote. But you did not predict anything about yourself. why? weren't you confident.?
Yes, I had confidence in myself. But I can't predict about myself. In fact, I do not believe in prediction or assumption. Rather I can't depend upon those. I always believe where there is a will there is a way. God blessed me to be among the top three challengers. It indicated there was something in my destiny, in my fate. I always loved my fellows. I have respect for others, Heaven knows what I shall get. But always I try to love others. My father always advises me to learn to love others. Aamanat, Raja both are stars. They are big in a sense. I would respect all. Whatever I feel I express.
Aaamanat frustratingly said only ten percent of the population in Pakistan accessed the Net. So, he could not get the online votes. Once he mentioned that almost all his votes came through SMS. What do you think about it?
We didn't have a clear idea about the system of the vote. The singer's job ended with his last song with an appeal to the people to vote for him. We could not know how the system functioned. Still, I feel Zee is a giant network and I hope they do their best in recording the genuine votes.I think it is better to be sure before a comment like this. For, Zee is a huge network. I have no more idea and no more to say. No idea, please.
Are you doing play-back? Are you singing in the Bengali film?
I had sung in Bengali film as well as in Hindi.
What're the names of the films?
I don't know the names of the films. Because I got the call from the music directors. In Bengal, I got the call from Mr Ashok Bhadra. I met him and a sang a song for his film. I got a call from Mr Narayan Roy and I sang two songs for him. I recorded both the songs in a single day. Mr Nawabarzu of Bombay called me and told me "My son, come here". I sang for him too. I sang one song for Bappida. But I don't know the names of the films.
Actually, the names of the films are decided later on.
Yes, you are right. They decide afterwards.
Heard that you sang in "dot com".
No, I did not sing with Sumedha. I sang with Juned to the tune of Bappida.
Once more it is relating to Aamanat. He is a lead singer of a band named " Mikalhassan". Do you have any plan to create a band of your own?
Really I don't cherish the idea. But Aaamanat is a very good singer. He may be in the band, but I don't have the intention. I shall try to establish myself as a solo singer.
It means you don't intend to join any band.
Aneek: (said no to a firm body language)
We watched the judges of Sa-re-ga-ma-pa most of the times indulged themselves in controversies. They used to start the war of words. To be frank with you I can mention the example of the differences between Anu Malik and Alisha Chinoy or the problems arising between Avijit and Bappi Lahiri. Avijit angrily told what he would discuss with him? He blamed Bappi Lahiri of his misbehaviour with RD(R D Burman) etc. You were on the stage and the environment got tense and hot. Didn't you lose the concentration?
Thank God, I faced few situations like that. Frankly speaking, I faced such a situation at the time of my entry. When Ismailji said how I got the entry. Rest of the situations are funnier than controversies. Those were related to Deepika Padukone, Diya Mirza, Salman Khan, Akshay Kumar.
Really those are genuine fun, rather than controversy.
It's true those situations were not controversial. Actually, I don't know what is meant by the controversy. But I think those were not got up. Because all the judges are experienced. They had their own minds. When they gave a remark that conveyed some meaning rather inner meaning which had some sense. I don't think all those controversies were got up. Just a topic came to be discussed. On that, you had to give your opinion. Everybody wants to speak something which is better than others. You speak upon the topic very well, but I shall want to speak the better. And so on. These linger the war of words, not got up.
I don't mean getting up. I want to say when the problems or controversies arose among the judges, it affected the performance the challengers.
Yea, you're right. Ultimately success comes to those who are not affected. Because it may depress the singer. I think one should not be nervous in this kind of situation.
You are very close to Himesh. Please say a few words about Himesh as a mentor and a human being outside his profession.
He is superb, mind-blowing, fantastic and outstanding. He is emotional, an angry person who doesn't mix up with everybody. He has an ego that he is HR-- Himesh Reshmiya and established himself. I appreciate him for this spirit. I love him very much from the core of my heart. Pray God he could get more fame. He has signed five movies where he performs as a singer, music director and actor. I wish him more and more success. For me, I dream to work with him. I always pray God that I could get a chance to work with him. I love him very much and I like him very much as a human being.
You may get chance in his film if you work with him. Isn't it so?
It can't be said with certainty. You don't know your destiny, luck. Suppose I work with Himeshji in a film, but it may be a flop. But with Bishalji my songs may be hit. These things happen in the industry. There are many ups and downs. Pray God, let's hope for the best.
You told you had a dream to do playback in the film of Shahrukh Khan.
Oh! yes, it's true. Still, I tell my friends jocularly if I were a girl I would have proposed him for marriage. Just you see how much crazy I am about him. Because he is aloof from all the controversies as well as of the scandals. Just think he is a superstar but carries no scandal with him. Only he has great activities. He has opened Red Chilli Entertainment and make her wife Gouri the producer. He bought "Kolkata Knight Riders" for the IPL twenty-twenty tournament. He always acts more and talks less. In his interview I read, back home he gave company to his son and would tell her wife that he would cook for them. This points out that he knows the difference between the professional life and personal life. Who can differentiate like him become very much successful? For all these reasons I love Shahrukh.
What Shahrukh Khan about your performance? We watched he was caressing your cheek and.....
Yes, he caressed my cheek and said"My dear son, you sing very well and you are already the winner. Pray God you be the champion." These words matter great for me.
What are the future plans of yours?
The immediate plan is for the release of my album.
What is the name of your album? Is it not decided yet?
The name has not been finalised. I myself will name my album. I hope it to give a name which may satisfy the international market.
Are these Bengali songs?
No, no! all are Hindi songs. There are eight songs.
When do u you expect the release of the album?
Let's hope as soon as possible. Actually, I am very busy with the shows and my voice is not getting the proper rest which is very essential. I plan to do the album first and continue my practice. I will not stop my training. Always I pray God to get a chance for play-back in the films.
Shahrukh showed affection for you, Himesh is always full of praise for you. Within a short period of time you get all the accolades, awards and media are running after you. All these are happening fast. Don't you feel your head is turning and take pride in yourself of making something great?
(with a pause) My dear brother, have you watched those in me?
No, I haven't.
I belong to a family where my father is a psychologist and my mother is a housewife. I know myself and always want to remain as a down to earth person. Always I like myself to be close to the ground zero. For, my experience has taught me a lesson. When anybody wants to fly high beyond his capacity God just cuts his wings. These are the words from an Urdu poetry. I have got this experience from my life or other's life. People say I have made my career. To them I just say I have yet to make, I have just started. Just my first steps are in.Yes, I have the plan to step forward. But sometimes I think I have become the champion singer of Sa-re-ga-ma-pa competition. So, I should not be scolded by my parents. When I hang out with my friends in the evening, a call comes from my mother if it is late. She asks me with whom and where I am and warns me of not allowing to get into the house if I come very late. In fact, with my parents, some sort of quarrels happen, but I think these controls are good for me. I understand you can't go astray if you are under the check of your parents.
Within a short period, your bag is full of innumerable awards. For example, Jatin-Lalit talent hunt etc... But in Taza TV channel you stood second. Who got the first position?
I can't remember the name of the girl who became the winner.
After that, in the programmes of Aakash Bangla, Bhalobasi tai gai you participated.
I was second in those programmes too.
What's about the show of "E to noi shudhu gaan"?
I got the second position in all the shows. And these became blessings to me.
Now I want to know some personal thing. As much as I know about you that you are very much at ease with singing and love. About your singing, we all know. But about your love affair, Debaparna may be the best judge. Singing, love and study are the three most important factors in your life. How do you balance yourself?
I don't have that sort of relationship with the person you just named.
Isn't it so?
I am explaining the matter. Then I was in class XI. At the first sight, I liked her. I am not afraid of saying in front of my father who is sitting with me. I want to face it. I believe in spirit if you are a man accept it. I liked the girl. In fact, I offered her a boquet of the flower. She said to me that the career was the top priority. Yes, it was a good advice. But at that time I didn't understand many things, I thought when I would start my career. I would proceed further in the relation. I couldn't understand the opportunism in those. It was some sort of business. After a week or two, I found her involved with a guy. And the girl threatened her father for money otherwise she would leave her home. She would say she would do anything she liked. I felt bad. I thought about the song "Eisa sila diya tume pyaar kaa"...I then thought that I would mix up with hundreds of girls like her. At that time I was angry and so I thought like that. But now I think I won't go into any sort of affairs.
That means there was no communication.
I had that for a week. In fact, I don't have an affair until today. Because I am very much happy with my relatives, my parents and above all, I am happy with myself as Aneek Dhar
Who are your favourite musicians and singers?
Definitely, my favourite musicians are Himeshji, A R Rahman Saab and R D Burman Saab. For, I want to be a versatile singer and I want to prove my versatility. I don't think to follow anyone in particular. Rahaman Saab has the music of his variation. Himeshji---I'm just crazy about him. Then I am a great an of R D Burman Saab. Vishaal-Sekharji is doing great. All are doing great music.
What's about the singers? Except for Sonu Nigam.
I got a weakness about Sonu Nigam. He is not the only idol to me but an idea. I like some songs sang by Rahman Saab. And I also like some of the songs of Himeshji. At last, I say blindly the most favourite singers are Manna De and Sonu Nigam.
Do you listen to Bangla Band?
No, just listen to it at FM when I travel by car. That's much.
I must convey my thanks to you for giving me your time. Thank you very much.
Thank you.
পুস্তক আলোচনা
বিবিধ ।। মতামত ।। সূচীপত্র
এই বিভাগে আপনাদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেব সেই সকল লেখক/লেখিকাদের, যারা তাদের অনুপম সৃষ্টি কবিতা, প্রবন্ধ বা গল্পের আকারে প্রকাশিত করেছেন বা অদূর ভবিষ্যতে করতে চলেছেন। নিজস্ব কবিতা বা গল্পের এই সম্ভার মাধুকরীর পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেবার ব্রত নিয়ে এই বিভাগের কাজ শুরু করতে চলেছি।
নতুন প্রকাশনার খবর, কবিতা বা গল্পের বইএর বিবরণ, লেখক/লেখিকার পরিচয়, তাদের বক্তব্য, বইগুলির প্রাপ্তিস্থল সবই খবরই আপনাদের কাছে পৌঁছে দেবার আশা রাখি।
কৃতজ্ঞতা: নীলাদ্রী দেব / ড. কোহিনূর কর
আপনাদের প্রকাশিত কবিতা বা কাব্যগ্রন্থ সংক্রান্ত তথ্যাবলী মাধুকরীর পুস্তক আলোচনা বিভাগে যুক্ত করতে হলে কবিতা বা কাব্যগ্রন্থের নাম ও ছবি সহ সংক্ষিপ্ত বিবরণী পাঠিয়ে দিন নিচে ইমেলে। সঙ্গে লেখক/লেখিকার পরিচয় ও ছবিও যুক্ত করে দিতে ভুলবেন না এই ইমেলে - maadhukariarticles@gmail.com
-
গল্প কিছু – অল্প কথায়: শ্রীপর্ণা নিয়োগী শিকদার/ শিশিরকুমার নিয়োগী
-
তিতাস একটি নদীর নাম, একটি নিবিড় পাঠ / অলোক কুমার সাহা
-
Haraprasad Shastri, A study on creative works and literary criticism / অলোক কুমার সাহা
-
উত্তরবঙ্গের কৃষিজীবন / ডঃ নৃপেন্দ্র লস্কর
-
মেঘ মুলুকের কথা / সুপর্ণা পালচৌধুরী
-
অখিলম্ মধুরম্ / লক্ষ্মী নন্দী
-
বসন্তের প্লাটফর্ম / বেলা দাস
-
আমার রূপনগরে লাল ওড়না / সঞ্জয় সোম
-
আমার দ্রোহ আত্মদ্রোহ ও অন্যান্য /সঞ্জয় সোম
-
বিষণ্ণ সময় / নীলাদ্রি বিশ্বাস
-
শুধু তোমারই জন্য / সমীর কুমার দাস
-
জলজ্যোৎস্নার মেয়ে / মানিক সাহা
-
উত্তরজনপদবৃত্তান্ত / সুবীর সরকার
-
সুরমা কলিং / শৌভিক রায়
উত্তরবঙ্গের প্রান্তিক শহরের বই পরিচয়
তিতাস একটি নদীর নাম, একটি নিবিড় পাঠ
অলোক কুমার সাহা
গবেষণার মধ্যে দিয়ে উপন্যাসের কাহিনী বিন্যাস, কথন রীতি, গঠনশৈলী, চরিত্র, জনসমাজ, প্রাকৃতিক-সাংস্কৃতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে "তিতাস একটি নদীর নাম, একটি নিবিড় পাঠ"এ।
গবেষক তাঁর ২য় গবেষণা গ্রন্থ "Haraprasad Shastri, A study on creative works and literary criticism" এ তুলে ধরেছেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী'র জীবন ও কর্মকে। এ দুটি অসাধারণ কাজের গবেষক অবশ্যই ডঃ অলক কুমার সাহা। প্রকাশক - ক্রিয়েটিভ পাবলিকেশন।
মেঘ মুলুকের কথা
সুপর্ণা পালচৌধুরী
সুখ দুঃখের সংলাপ বইটির পাতায় পাতায়। যেখানে কবি নিজেই বৃষ্টি ছুঁয়ে অন্য একটা গল্প হয়ে উঠতে চেয়েছেন। বইটি কবি সুপর্ণা পালচৌধুরী'র প্রথম কাব্যগ্রন্থ ''মেঘমুলুকের কথা'', প্রকাশক - নৈষ্ঠিক আকাদেমি। প্রথম থেকে শেষ কবিতা পর্যন্ত প্রতিটি পৃষ্ঠায় অজানা এক যাদু আছে, এটাই হয়তো কবি ও কবিতার রসায়ন। সংগ্রহে রাখতে পারেন আপনিও।
বসন্তের প্লাটফর্ম
বেলা দাস
শিক্ষকতার পাশাপাশি কবিতা চর্চা করছেন। তাঁর কাব্যগ্রন্থ "বসন্তের প্লাটফর্ম" '১৮, কোচবিহার বইমেলায় প্রকাশ পেল। প্রকাশক- দি সী বুক এজেন্সি।
কোনো এক কবিতায় কবি বলেছেন, "আমরা সব জোকার"। সত্যিই তো তাই! এমনই আরও সব সত্যের ঝলক রয়েছে কাব্যগ্রন্থের অন্যান্য কবিতাগুলোতেও।
বিষন্ন সময়
নীলাদ্রি বিশ্বাস
কোচবিহারে সংস্কৃতির পরিমণ্ডলে অন্যতম পরিচিত মুখ, বিশিষ্ট বাচিকশিল্পী, নাট্যশিল্পী নীলাদ্রি বিশ্বাস। এই কবি তাঁর কাব্যগ্রন্থ বিষন্ন সময়" এ তুলে ধরেছেন সময়ের কথা। প্রকাশক- উত্তর প্রসঙ্গ Uttar Prasanga। এটি সংগ্রহে রাখার মত কবিতাবই, নিঃসন্দেহে।
উত্তরবঙ্গের কৃষিজীবন
ডঃ নৃপেন্দ্র লস্কর
উঃবঃ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ নৃপেন্দ্র লস্কর সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম মুখ। তাঁর সম্পাদিত 'উজান' কৃষি, কৃষ্টি, সাহিত্যের নিয়মিত প্রকাশিত একটি পত্রিকা।
সম্প্রতি প্রকাশ পেল ডঃ Laskar এর একটি তথ্য সমৃদ্ধ উপস্থাপনা, "উত্তরবঙ্গের কৃষিজীবন", প্রকাশক- দি সী বুক এজেন্সী। উত্তরবঙ্গের সমাজ সভ্যতায় উদ্ভাবিত রীতিনীতিকে তিনি দেখেছেন এবং দেখিয়েছেন সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে।
অখিলম্ মধুরম্
লক্ষ্মী নন্দী
লক্ষ্মী নন্দী। মেখলিগঞ্জে বসে সম্পাদনা করছেন অপরাজিতা অর্পণ। ধারাবাহিকভাবে। তিনি সত্যিই সব ঘটনাকে খুব সহজে তুলে ধরেছেন কাব্যগ্রন্থটিতে। এ কবি কবিতাগুলোকে পাঠকের সাথে জড়িয়ে রাখতে পারেন অদ্ভুত মমতায়। তাঁর সাম্প্রতিক কাব্যগ্রন্থ "অখিলম্ মধুরম্"। প্রকাশক- সংস্কার।
আমার রূপনগরে লাল ওড়না
আমার দ্রোহ আত্মদ্রোহ ও অন্যান্য
সঞ্জয় সোম
শিক্ষকতা, সাংবাদিকতার পাশাপাশি কবিতা চর্চা করেছেন নিয়মিত, এখন শুধু কবিতায় ডুবে আছেন। ১২টি কাব্যগ্রন্থ সহ বেশ কিছু গ্রন্থের রচয়িতা সঞ্জয় বাবু অনেক তরুণ কবিকেই কবিতার পথ চিনিয়েছিলেন। তাঁর এ বছর প্রকাশিত দুটি বই "আমার রূপনগরে লাল ওড়না", "আমার দ্রোহ আত্মদ্রোহ ও অন্যান্য"। প্রকাশক- শব্দ প্রকাশনা, বাংলাদেশ।
শুধু তোমারই জন্য
সমীর কুমার দাস
উত্তরবঙ্গের কবিতার এক স্বতন্ত্র আবেগ, অনুভূতি আছে। সেই উত্তরের স্বাদে ভরপুর কিছু কবিতা দিয়ে সাজানো কবি সমীর কুমার দাস এর প্রথম কাব্যগ্রন্থ "শুধু তোমারই জন্য", প্রকাশক - দেশ প্রকাশন। প্রকাশ - ২০১৪। সময়ের প্রতিফলন প্রত্যেকটি কবিতায় স্পষ্ট। বলতেই হয়, এ কবির সরল ও দৃপ্ত কণ্ঠস্বরই এক অনন্য নিজস্বতা।
গল্প কিছু-অল্প কথায়
গল্প কিছু – অল্প কথায়
শ্রীপর্ণা নিয়োগী শিকদার
শিশিরকুমার নিয়োগী
ভূমিকাঃ
বাংলা বা ভারতীয় রচনাশৈলীতে ছোটগল্প নবাগতই বলতে হবে। ইউরোপীয় সাহিত্যের হাত ধরেই ছোটগল্পের এদেশে প্রবেশ। ছোটগল্প সংক্ষিপ্ত হলেও তাতে সবকিছু থাকে - থাকে মানুষ এবং প্রকৃতি। মানুষের সভ্যতা ও সংস্কৃতি গড়ে ওঠার ইতিহাসে নদী, হ্রদ, অরণ্যের যে দান, ছোট ছোট সুখ দুঃখের কাহিনীর ও সেই একই অবদান।
এই বই এর লেখক ও লেখিকা ছোটগল্পকে আরো ছোট আকারে পরিবেশন করতে চেষ্টা করেছেন। সেটা আধুনিক গল্পকারদের 'অণুগল্পের' ধারণাকে আঘাত করতেও পারে।
এই আশংকাটুকু মাথায় রেখেই লেখকদ্বয়ের গল্প রচনার বিনম্র প্রয়াস।
শ্রীপর্ণা নিয়োগী শিকদার
শিশিরকুমার নিয়োগী
পুস্তক-আলোচনা
সমালোচকঃ ড. কোহিনূর কর
সংক্ষিপ্ত পরিচয়:
(ড. কোহিনূর কর, অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি, টেম্পি, অ্যারিজোনা বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি অনুরাগী, যার লেখা কবিতা ও প্রবন্ধ ভারত ও মার্কিন দেশের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত। এর পাশাপাশি সম্প্রতি ছোটগল্পও প্রকাশিত হয়েছে। প্রফেশনাল ইঞ্জিনীয়ার (পরিবহন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ) হিসাবে কর্মরত; সেই সাথে অধ্যাপনা নিয়েও ব্যাস্ত। বেশ কয়েকটি মার্কিন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার উপদেষ্টা। পেশাতে যেমন পথ-দুর্ঘটনা ও মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ বা গবেষণা করেন, প্রকৃতির মধ্যে অনেক সৃষ্টির আনন্দ খুঁজে পান শুধু ছবি তুলে। তাঁর বেশ কিছু ছবি আছে গেটি ইমেজেস, শাটারস্টক ও অ্যালামী ওয়েবসাইটে।)
ছোটগল্প পড়তে গিয়ে যখন মনে হয় শেষ হচ্ছে না, বড্ড বেশী লিখেছে, তখন কিন্তু অনু-গল্পের জুড়ি নেই। ‘গল্প কিছু – অল্প কথায়’ পড়তে পড়তে অনেক কিছু জানা গেল। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে আধুনিক জীবনের প্রেক্ষাপটে লেখা সবগুলো।
শ্রীপর্ণা নিয়োগী শিকদারের লেখা ‘গল্প কিছু’র ব্যাপ্তি চোখে পড়ার মত। মাঝেমধ্যেই কিছু মজার মজার উক্তি বা শব্দচয়ন গল্পে প্রাণ জুগিয়েছে। গ্রামের সব খুটিনাটি যেমন তুলে ধরা হয়েছে, শহুরে জীবনের হালচাল সুন্দরভাবেই ফোটানো হয়েছে। তাছাড়া শ্রীপর্ণার লেখাগুলো পড়তে গিয়ে মনে হল প্রত্যেকটির মধ্যে কিছু না কিছু ভাবানোর মত শক্তিশালী বক্তব্য লুকিয়ে আছে।
শ্রীযুক্ত শিশিরকুমার নিয়োগীর লেখা গল্প আমরা আগেও অনেক পড়েছি। এই ‘অল্প কথায়’ শ্রীযুক্ত নিয়োগী অনেক সংবেদনশীল কিছু অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন। লেখার ভাষা অত্যন্ত সাবলীল, বাড়তি শব্দ নেই বললেই চলে। দু-এটা ব্যাক্তিগত জীবনের স্মৃতিবিজড়িত, বাকিগুলো কাল্পনিক মনে হলেও ভীষণভাবে বাস্তব। ছোটবড় সবার ভালো লাগার মত সঙ্কলন।
সূচিপত্র-সহ দুটি ভাগে ভাগ করা এই সফটকভার বইটির বিনিময় মুল্যের অনুপাতে বেশ কিছু ভালো কাহিনী আর বাংলা সাহিত্যের রসদ পেলাম যা সচরাচর দেখা যায় না।
পুজোর আড্ডা
পুজো তো এসে গেল। আর মাত্র কটা দিন। কিন্তু কি করা যায় বলুন তো? নতুন কিছু ভাবনা - না ভাই, আমার মাথায় তো কিছুই আসছে না। ভিড়ের এই তিলোত্তমা কলকাতা, নাকি একটু দূরের কোন এক নির্জন নদীতট। পঞ্চমীর রাতেই শহরের জনসমুদ্রে মিশে যাওয়া, না শুধুমাত্র দশমী। 'না রে ভাই আর বেড়চ্ছি না এই ভিড়ে -' হাই তলা উদাসী মন্তব্য, না ভিড় এড়াতে মুচকি হেসে 'চললাম রে, এবার আর কলকাতায় থাকছি না।' নাকি আবার ধূমায়িত কাপে এক চুমুক - 'না, না গতবারের মতই - স্রেফ খাওয়া আর ঘুম - '। সে যাই হোক না কেন, মায়ের পুজোয় আমাদের মুল মন্ত্র হল নির্ভেজাল আড্ডা। কি এক মত তো?আর সঙ্গে রইল পেট পুরে খাওয়ার বেসামাল আনন্দ, দল বেঁধে, একেবারে টেবিল জুড়ে।
এ না হয় গেল আমাদের কথা - তা একবার চলুন না, আমার সঙ্গে, কথার ফাঁকে এক ঝলক দেখে নি আমাদের মধ্যেই কয়েকজন অতি পরিচিত মানুষ, আমার আপনার একান্ত নিজের চেনা কয়েকজন ব্যাক্তিত্ত্ব, তারা কি ভাবছেন এই পুজো নিয়ে..
মাধুকরীর এই আড্ডায় রয়েছেন....
-
লোপামুদ্রা মিত্র (শিল্পী)
-
জয় সরকার (সুরকার)
-
মৃণাল বসুচৌধুরী (কবি)
-
রেহান কৌশিক (কবি)
-
বীথি চট্টোপাধ্যায় (কবি ও লেখিকা)
-
বিভাস রায়চৌধুরী (কবি ও সাহিত্যিক)
-
রাজিয়া সুলতানা (কবি)
-
অমিত গোস্বামী (কবি ও লেখক)
-
সোনালি (কবি)
-
শাশ্বতী নন্দী (গল্পকার ও ঔপন্যাসিক)
-
শ্রীকান্ত আচার্য্য (শিল্পী)
-
উপল সেনগুপ্ত (শিল্পী - চন্দ্রবিন্দু)
-
সৌমিত্র রায় (শিল্পী - ভূমি)
-
অর্চন চক্রবর্তী (শিল্পী - এ ফাইব),
-
গৌতম-সুস্মিত (গীতিকার)
-
মিস জোজো (শিল্পী)
-
প্রসেনজিত মুখার্জী (প্রসেন) গীতিকার
-
শাশ্বতী সরকার (সঞ্চালিকা, আবৃত্তিকার)
-
কুণাল বিশ্বাস, তিমির বিশ্বাস (শিল্পী - ফকিরা)
মৃণাল বসুচৌধুরী (কবি ও প্রাবন্ধিক)
কাছাকাছি প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখবো সকালবেলায়। তারপর পেট পুজো। রাত্রে টিভিতে পুজো দেখা। মাঝে পুজোয় প্রকাশিত বন্ধুদের কবিতা পড়বো। এটা আমার রুটিন। বাকীটা ঈশ্বর জানেন।
বিভাস রায়চৌধুরী (কবি ও সাহিত্যিক)
ছোটাছুটিতে জীবন নষ্ট হয়। পুজোর ছুটিতে আবার ধীরতা খুঁজে পাই। আমার নদীপাড়ে, মাঠে, পুরনো পাড়ায়, ফেলে আসা পথে, কলোনির বন্ধুদের কাছে এই কদিন অনুভব করি প্রিয় ছেলেবেলা। মধুর মৃত্যুর ভেতরে ডুবে থাকি একদম।
অমিত গোস্বামী (কবি ও লেখক)
পুজোয় কিচ্ছু করব না। লিখব না। পড়ব না। স্রেফ ঘুমোব। ইসস, এটা যদি লিখতে পারতাম... নাহ, পুজোয় বোধহয় থাকছি না কলকাতায়। থাকব সম্ভবত ঢাকায়। একটা গানের অ্যালবামের কাজে।
রেহান কৌশিক (কবি)
বাঙালির বছর শুরু হয় ১ বৈশাখ। যদিও এটা আনুষ্ঠানিক। আসলে ১ জানুয়ারিই বাকি বিশ্বের সঙ্গে নিজেদের বছর শুরু ক'রে বাঙালি এদিক থেকে আন্তর্জাতিক। ব্যক্তিগতভাবে আমার বছর শুরু হয় প্রতিবছর এই দুর্গা পুজোর সপ্তমীর দিন। একটু ব্যাখা করে বলি, আমার সারাবছরই লেখা থাকে। প্রতিটি দিনই নিয়ম করে লিখতে হয়। পুজো এলে সপ্তমীর দিন থেকে দশমী পর্যন্ত আগামী বছরের লেখার পরিকল্পনা করে রাখি। নিজের লেখার ঘরে বসে কফি খেতে খেতে একদম লিখিত আকারে নোট করে রাখি সামনের ৩৬৫ দিন কী কী লিখব। একটু যে হেরফের হয়
না, তা নয়। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী চলার চেষ্টা করি। আমি পুজো দেখতে বেরোই না। বাইরে যে উৎসব চলে তা কিন্তু আমার লেখার ঘরে এসে আমাকে ছুঁয়ে যায়। অন্তর থেকে উৎসবের রংগুলো ছুঁয়ে থাকি। আনন্দে থাকি। পুজোর এই ক'দিন তাই আমার বছর শুরুর দিন, লেখা শুরুর দিন।
শ্রীকান্ত আচার্য্য (শিল্পী)
এবার পুজোতে বিদেশ যাত্রা। এভাবেই চলছে বেশ কয়েক বছর। অবশ্য বিদেশে পাড়ি দেবার আগে চতুর্থীর সন্ধে অর্থাৎ ২৪শে সেপ্টেম্বর ২০১৭ চিত্তরঞ্জন পার্ক নব পল্লীর হীরক জয়ন্তী বর্ষতে অংশগ্রহণ করছেন। তারপর ২৬শে বিদেশ যাত্রা। ২০১৭-তে এবারে শ্রীকান্তদার ঝুলিতে রয়েছে লস এঞ্জেলস (৩০ সেপ্টেম্বর), ডেনভার (অক্টোবর ১), নিউইয়র্ক - কুইন্স (অক্টোবর ৬), হ্যারিসবার্গ - পেন্সিলভেনিয়া (অক্টোবর ৭) ও আটলান্টা (অক্টোবর ১৪)। তারপরে দেশে ফেরার পথে একটু লন্ডনে ঢুঁ মারার একটা ইচ্ছাও রয়েছে মনের কোনে।
বীথি চট্টোপাধ্যায় (লেখিকা , কবি)
পুজোয় বাড়িতেই থাকি। ঘর ছেড়ে কোথাও বেরোইনা। ঢাকের শব্দ শুনতে শুনতে সমস্ত না পড়া পুজো সংখ্যা পড়ে শেষ করি। অার যেসব দিন ফেলে এসেছি সেসব দিনের কথা ভাবি।
কুণাল বিশ্বাস (মিউজিশিয়ান - গায়ক 'ফকিরা' ব্যান্ড)
এবারের পুজোতে বেশ রিল্যাক্স করে পরিবারের সঙ্গে মহা আনন্দে পুজো দেখবো। হেসে ফুরফুরে মেজাজে কুণালের উত্তর। ওর কথায় জানলাম, ব্যান্ডের মুল গায়ক তিমির বিশ্বাসও পুজো কাটাবেন নিজেদের পাড়ায় আসানসোলে। ব্যান্ডের আর এক সদস্য চয়নও আসানসোলের ছেলে। বান্টি, অপূর্ব ও কুণাল কোলকাতার।
সৌমিত্র রায় (শিল্পী - ভূমি)
'বারান্দায় রোদ্দুর' - এই রোদ্দুরের ছোঁয়া থেকে এমন কোন বাঙালি সঙ্গীতপ্রেমী বঞ্চিত হয়েছেন কিনা আমার তো জানা নেই। সেই ট্র্যাডিশন এখনও বজায় রেখে চলেছেন অসম্ভব জনপ্রিয় এই বাংলা ব্যান্ড 'ভূমি'। এবারের পুজোয় কেমন কাটাবেন প্রশ্নে, সৌমিত্রদা বললেন - 'পুজোতে এবার আমাদের প্রোগ্রাম দিল্লীতে। মোটামুটি রাজধানী শহরের বাঙালি পরিবেশেই পুজোটা কেটে যাবে এবার।' ইন্দিরাপুরমের প্রান্তিক কালচারাল সোসাইটির পুজোতে ভূমি উপস্থিত থাকছে ২৭শে সেপ্টেম্বর। ঠিক পরের দিনই অর্থাৎ ২৮শে দ্বারকাতে দীপান্বিতা কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন এর পুজো, আসর মাতাতে হাজির থাকছেন সৌমিত্রদা, সঙ্গে ভূমি। সুরজকুন্দ বঙ্গীয় সমাজের পুজোতে গান গেয়ে শেষ করছেন এবারের ভূমির দিল্লী যাত্রা শেষ হচ্ছে ২৯শে সেপ্টেম্বর।
প্রসেনজিত মুখার্জী (প্রসেন, গীতিকার)
'না গো, আমার ছোটবেলায় ভীড় ভাল লাগত এখন আর লাগে না' - দিল খোলা হাসির সঙ্গে এই কয়েকটা কথাই মিশিয়ে দিলেন ফোনের অপর প্রান্ত থেকে। 'তাছাড়া ঠিক ফ্রি থাকি না, জান তো, যদি কিছু কাজ এসে যায় বা কেউ গাইতে বলে গাই, নইলে নিজের থেকে কাজ করি না, এই পুজোর কটা দিন।' বলে থামলেন - বাংলা ছবির অত্যন্ত জনপ্রিয় এক গীতিকার প্রসেনজিত মুখার্জ্জী ওরফে প্রসেন। ভেঙ্কটেশ ফিল্মের সঙ্গে চুক্তি থাকায় গীতিকার প্রসেনকে একটা
কাজের বাতাবরণের মধ্যে সব সময়ই চলতে হয়। ওদের ছবির কাজ চলতেই থাকে। তবে এবারের পুজোতে চতুর্থীর দিন এক বন্ধু ঋতমএর সঙ্গে চললেন বোলপুর। ওখানে ঋতমএর লেখা গানের শুটিং-এ যোগ দিতে যাবেন, সঙ্গে থাকছে আড্ডা আর বন্ধু-বান্ধুব। কোলকাতার ভিড় থেকে অনেকটা দূরের একটা সুন্দর লোকেশনে দু-দিন। ভাবা যায় না! প্রসেনদা এক্সাইটেড। খুব সম্প্রতি কয়েকটি বাংলা ছবিতে যেমন 'সব ভুতুড়ে', 'ইয়েতির অভিযান', 'বল দুগগা মাই কি'র কাজ করেছেন। পরিচালক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, তার প্রথম ছবি 'ওপেন টি বাইস্কোপ' এর সফলতার পর কাজ করলেন তার নতুন ছবি 'প্রজাপতি বিস্কুট'-এ। এই ছবিতে প্রসেনকে দিয়ে গাওয়ালেন ঋতম সেনের লেখা একটি গান 'তোমাকে বুঝিনা প্রিয়'। যা ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলে দিয়েছে সঙ্গীত মহলে। মেল ভার্সানটা গাইলেন ও সুর করলেন প্রসেন নিজেই। সফলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই প্রসেনদা হেসে বললেন - ' আর বল না, ঐ অনিন্দ্যদাই বলল, কি বলি বলতো, এই গলায়।' প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি ওপেন টি বাইস্কোপেও প্রসেনদা নিজের লেখা একটা মজার গানেও প্লেব্যাক করেছেন 'পাগলা খাবি কি'। অসম্ভব শ্রদ্ধাশীল আর এক জনপ্রিয় গীতিকার শ্রীজাত-এর ওপর। প্রসঙ্গ উঠতেই কথার প্রতিটি শব্দে শ্রীজাতর প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। বন্ধুত্ব নিয়ে উঠে এল গীতিকার গৌতম সুস্মিতের নামও। শ্রদ্ধাজ্ঞাপন সেখানেও। খুবই ভাগ্যবান বললেন নিজেকে, অসংখ্য গুণী মানুষের সান্নিধ্যে এসেছেন বলেই। তবে নিজে গুণী বলেই হয়ত এটা সম্ভব হয়েছে। বলাতে হেসে ফেললেন। ডাউন টু আর্থ প্রসেনদাকে মাধুকরীর তরফ থেকে শ্রদ্ধা জানাই।
সোনালি (কবি ও সাহিত্যিক)
সারা বছরভর দৌড়ানো মধ্যে এই চারটে দিনের আশায় বসে থাকি। এই কদিন সবার ছুটি। মাস দু তিন আগে থেকেই পুজোর জামা কাপড় কেনা শুরু হয়। আমার কাজ চার জনের জামা আলাদা আলাদা করে গুছিয়ে রাখা, যাতে ষষ্ঠী সপ্তমী অষ্টমী নবমী সকালে কে কি পড়বে খুঁজতে গিয়ে দেরী না হয়। আবার জামার সংগে জুতো, পাঞ্জাবির বোতাম, পাজামার দড়ি, মেয়ের শাড়ির সংগে ঝুমকো, আমার দুলের সংগে মপ চেন, সবই তো সকাল সকাল
খুঁজে পেতে হবে? পাড়ার কুড়ি তিরিশটি বাড়ি মিলিয়ে আমাদের ছোট্ট পুজো। এখানেই সকাল থেকে অঞ্জলি, প্রসাদ দিয়ে ব্রেকফাস্ট, দুপুরে লাঞ্চ, বিকেলে ফাংশন, আবার চা, কার না কারো স্পন্সর করা বিকেলের লুচি আলুর দম ঘুঘনি পায়েস, অনেক রাতে একটু ঠাকুরদেখতে যাওয়া এক এক আধ দিন, তাও সবাই মিলেই হয়ত। কেবল দৌড়ে একেক বার বাড়ি যাওয়া আরেক সেট নতুন ড্রেসের আহ্লাদে। কি আনন্দের উচ্ছ্বাস চলে যে! আর সেই সংগে খুশি থাকে তারাপদ। আমাদের ঢাকি। সে আর তার ছেলে সারাবছর বসে থাকে আমাদের ফোনের অপেক্ষায়। খাওয়া দাওয়া, ঠাকুর এর সামনে যত্নে ঘুমোনোর ব্যবস্থা আমরা করি।ওরা ঢাক বাজানো ছাড়াও এ পুজোর সমস্ত কাজ গুছিয়ে করে দেয়।এমনকি আমার মায়ের দামি পুজোর বাসনের সুটকেস সামলানো পর্যন্ত। লক্ষ্মী পুজো শেষে, সবাই বছরভর জমিয়ে রাখা শার্ট প্যান্ট চাদর, আর ওর রেখে আসা বৌএর জন্য নানা রকম শাড়ি আর টাকা ব্যাগে গুছিয়ে দিই। পুজোর প্রাপ্য ছাড়াও এগুলি ওর বোনাস। নইলে আবার একটা বছর কলকাতা আসা অব্ধি ওদের চলবে কি করে?
গৌতম সুস্মিত (গীতিকার)
এবারের পুজোতে প্রখ্যাত গীতিকার গৌতম-সুস্মিতের বিশেষ কোন পরিকল্পনা নেই। কথায় কথায় জানালেন উত্তরবঙ্গের ছোট্ট ট্রিপ মাথায় থাকলেও যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। কিছুদিন আগেও প্রখ্যাত শিল্পী অভিজিতের নতুন বাংলা গানের রেকর্ডিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। অভিজিতের গলায় কুয়েত
জয় সরকার (সুরকার)
লোপামুদ্রা মিত্র (শিল্পী)
'এবার ভাই চললাম দিল্লী, পুজোর দিনগুলোতে ওখানেই আমার গানের অনুষ্ঠান।' ফোনের ওপারের শিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র। কয়েকদিন ধরেই রিহার্সাল চলছে। একটু ক্লান্ত।
জানলেন ষষ্ঠী থেকে নবমী এই চারদিনই দিল্লীতে থাকবেন। নয়ডাতে দু-দিন, গুরগাঁওতে একদিন আর পরের দিনের অনুষ্ঠানের জায়গাটা মনে করতে পারলেন না। দশমীর দিন সুরকার জয় সরকারকে সঙ্গে নিয়ে পাড়ি দেবেন লন্ডন। ওখানে ক্যামডেন দুর্গাপুজোর আসর মাতাতে হাজির হবে এই জুটি। এই বিশেষ অনুষ্ঠান নিয়ে ওনাকে বেশ এক্সাইটেড মনে হল। কারণও আছে। সাধারণতঃ দু-জনে মিলে অনুষ্ঠান করার সুযোগ এমনিতেই কম আসে। তার ওপর বিদেশে। কথায় কথায় জানালেন পুজোতে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর দেখা হওয়া ভার। এবারেও তাই। উনি গান গাইতে কলকাতার বাইরে, আর জয়দা কাটাবেন কলকাতায়। গত বছর লোপামুদ্রা যখন ডালাসের মাটিতে তখন জয়দা গীটার হাতে নিউইয়র্কের কোন বাঙালি পাড়ায়। এইভাবেই চলে পুজো পরিক্রমা। পুজোতে দিল্লী যাচ্ছেন দীর্ঘ আট বছর পর। থাকবেন এক বাঙালি রেস্ট হাউসে, চলবে গান, আড্ডা আর বাঙালি নানান ধরনের সুস্বাদু ঘ্যাঁট। ব্যাস আর কি চাই পুজোয়। ফোনের ওপারে হাসি। জয়দার কলকাতা কাটবে জাজ হয়ে কোন এক অনুষ্ঠানে, কিংবা ক্যাজুয়াল আড্ডায়। ঠিক করে ভেবে উঠতে পারেন নি এখনো।
শাশ্বতী নন্দী (গল্পকার ও ঔপন্যাসিক)
শাশ্বতী নন্দী- গল্পকার ও ঔপন্যাসিক আমি চিরকালের লেট রাইজার। তাই অভিমান করেই বোধহয় পাখিরা তাদের ভোরের জলসায় কখনও আমায় নেমন্তন্ন করে নি। কিন্তু পুজোর কদিন আমি সারা বছরের বদনাম ঘুচিয়ে খুব ভোর ভোর উঠবো, প্ল্যান করে ফেলেছি। ঠিক সেই সময়গুলো দেখতে চাই, যখন সূর্য লাজুক, ধীরে
ধীরে আবির ছড়াচ্ছে আকাশ জুড়ে। চিরকালই শরৎকালের শিউলি ভোর আমায় খুব টানে। যদি আরও খানিকটা বয়স কমিয়ে ফেলতে পারতাম, তাহলে হাঁটু মুড়ে বসে যেতাম কোঁচর ভরে শিউলি কুড়োতে। তা যাই হোক, পুজোর দিনগুলোতে আরও কিছু পরিকল্পনা আছে। খুব মন চাইছে, গাড়ি ছুটিয়ে ওই কটা দিন বেড়িয়ে পড়ব শহর ছেড়ে দূরে, বেশ অনেক দূরে। তারপর যেখানে কাশের সমুদ্র চোখ পড়বে, ছুটে যাব সেদিকে, কাশের ঢেউয়ে ভেসে বেড়াব, এ সেই ছোটবেলার বাসনা। দেখো কাণ্ড, আমি যেই লিখতে বসেছি, আমার ইচ্ছে খুশির কথা, আরও কিছু নাছোড় ইচ্ছে হৈ চৈ করে আমায় ঘেরাও করল। ওই যে আর একটা স্বপ্ন, প্রায়ই দেখি, কোনও এক রোগা ভোগা বাউলের ঘরে চলে যাব কোনও একদিন, তারপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁর একতারার সুরে বিভোর হয়ে থাকব। দেখি, পুজোর কোনও একটা দিনে এই স্বপ্নটাও পূরণ হয় কিনা।
অর্চন চক্রবর্তী (শিল্পী - এ-ফাইব ব্যান্ড)
পুজো মানেই নির্ভেজাল আড্ডা, খাওয়াদাওয়া। আর শো তো আছেই। সে কোলকাতা হোক আর বাইরে। এভাবেই চলেছ অর্চনের গত দশ বছর। তবে ওর একটাই দুঃখ যে ছোটবেলার পুজোর সেই আনন্দ এখনকার এই কর্পোরেট পুজোর পরিবেশে অনেকটাই হারিয়ে গেছে। ছোটবেলার সেই মজাটা এখন স্মৃতির গালিচায় খুঁজতে হয়। তবে খুবই এক্সাইটেড যে পুজোর আনন্দ পরিবারের সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যাবে। তার ওপর নিজের ব্যান্ড 'এ ফাইব' তো আছেই। চলবে ধামাকা।
উপল সেনগুপ্ত (শিল্পী - চন্দ্রবিন্দু )
বাড়ি ফেরার পথে গাড়িতে ফোন ধরলেন। পুজোর ব্যবস্তার মধ্যেও সময় দিলেন। সংক্ষেপে জানালে খুব রিল্যাস্ক মুডে আছি এবারের পুজোতে। সপ্তমীর ভোরবেলা ফ্লাইট ধরে সোজা ব্যাঙ্গালোর। সপ্তমীতে আর-টি নগরে চন্দ্রবিন্দুর পুজোর ধামাকা। অষ্টমীতে এইচ-এস-আর লেআউট এর বর্ষা ক্লাবের পুজোতে গান গাইবার আমন্ত্রণ। নবমীতে বম্বেতে 'পোয়াই' বেঙ্গলি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনে পুজোতে আসর মাতাতে দৌড়। দশমীতে আবার তিলোত্তমা কলকাতা। প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি চন্দ্রবিন্দুর আর এক পরিচিত নাম অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় কিন্তু কলকাতা ফিরছেন না। ওনার নতুন ছবি 'প্রজাপতি বিস্কুট' এর কাজে বম্বে থেকে সোজা লন্ডন।
রাজিয়া সুলতানা (কবি)
- চার্লসটন, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া
পুজোর কদিন একটা স্মৃতিমেদুরতা নিয়ে আসে উদাসীন ক্যালেন্ডার। ঈদ যেতে যেতেই বারো মাসে তের পার্বণে উৎসবের ঘনঘটায় যে জীবন কেটেছিল একদিন যে দেশে তাকে আর সেভাবে ধরতে পারিনে বলেই হয়তো ঈদ আর
পুজো পরপর এলেই মনটা উদাস হয়ে যায়। ধর্মবিশ্বাস নির্বিশেষে প্রবাসে একাকার বিশ্বের সব উৎসব। কিন্তু বিদেশে কাজের ব্যস্ততার জন্য সবসময় সম্ভব হয় না পুজো দেখতে যেতে। এবার যেমন ঈদের পার্টিও মিস করেছি একই কারণে। কিন্তু স্মৃতির রত্নভাণ্ডার খুলে বসতে সময় লাগে না কোন। নদীর ওপারে পূজোমন্ডপ নদী ঘেঁষে - ভোর হতে না হতেই ঢাকের বাড়ি-কিশোরী মন চঞ্চল - আহা আজ পুজো হিন্দুদের। এই তো ঈদ গেল - মানিক, শংকর, আলো, রাধা, টুলু, বুলু, দুলু, নমিতা, সবিতা, উজ্জ্বল, উৎপল, গান্ধী মামা, বাদল মামা, সাধন মামা - সবাই এসেছিলো আমাদের বাসায়। পাড়ায় সবার বাসায়। নতুন শাড়ি মামীদের জন্য, পাঞ্জাবি মামাদের জন্য সাধ্যমত সারা বছর টাকা জমিয়ে কিনতাম, আর নিজেদের জন্য গরুর মাংস রাঁধলেও ওদের জন্য আলাদা করে রাঁধা হতো মুরগী কিংবা খাসির মাংস। পাশাপাশি বসে খেতাম। আমার ইউনিভার্সিটির সহপাঠী স্নিগ্ধা চক্রবর্তী। ও আমাদের বাসায় না আসা পর্যন্ত আমার ঈদ যেমন অপেক্ষা করতো - তেমনি- পুজোর সময় মাসীমা আমার জন্য অপেক্ষা করে থাকতেন। স্নিগ্ধার ছোটভাই শাওন বারবার খোঁজ নিতো- অস্থির হয়ে থাকতো আমার অপেক্ষায়। ওদের বাসায় যাওয়ার পর আনন্দের হাট বসে যেত। পাশে বসে খাবার তুলে দিতেন মাসীমা। নারকেলের নাড়ু, সন্দেশ, পায়েশ, লুচি, সবজি, খাসির মাংস, পোলাও, খিচুরী-কতো রকমের খাবার যে থাকতো- ভাবলে এখনও জিভে জল এসে যায়। -বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে পুজো দেখা, প্রসাদ খাওয়া – আরতি নৃত্য, শেষে নদীর জলে প্রতিমা বিসর্জনের দিন নদী তীরে হিন্দু মুসলমান সবার ভিড় লেগে থাকতো। কতশত স্মৃতি এসে ভিড় করছে যে এখন মনের কোণে- সেই যে সুখের দিনগুলি-আহা আমার নানা রঙের দিনগুলি-আর কী ফিরে পাবো কোনও দিন!
শাশ্বতী সরকার (সঞ্চালিকা, আবৃত্তিকার)
স্কুলে পড়ানো, অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করা, আবৃত্তি করা ও আবৃত্তি শেখানোর মাঝে কখনোই হাঁফিয়ে উঠি না, কারণ এই সবকিছুই পেশার সাথে সাথে নেশায় পরিণত হয়েছে। তবে বছরের শুরুতেই ক্যালেন্ডার পেলে প্রথমেই চোখ চলে
যায় জোর তারিখগুলোর দিকে....শুরু হয়ে যায় মানসিক প্রস্তুতি। আমার কাছে পুজো মানে শুধুই ছুটি। পুজোর কয়েকটা দিন সময়ের সাথে আমি ছুটি না। বরং আলসেমি এসে চেপে ধরে। সপ্তমী অবধি নানা অনুষ্ঠান থাকলেও.... তারপরের তিনটে দিন আমি নিজের মতো করে গুছিয়ে আড্ডা দিই.... সাথে পরিবার আর বন্ধুরা, অন্তহীন আড্ডা আর ভুরিভোজ। কলকাতার পুজো এখন যে শৈল্পিক রূপ ধারণ করেছে তা একদিন মাঝরাতে বেরিয়ে দেখে নিতেও আমার কার্পণ্য নেই... চক্ষু সার্থক। আমি প্রবাসী বন্ধুদের অনুরোধ করব - যারা এখনও এ রসে বঞ্চিত, তারা এই শিল্প একবার উপভোগ করে যাবেন। শরতের আকাশে কখনও মেঘ কখনও রোদের হাতছানি, কাশ আর শিউলির যুগলবন্দী, নতুন জামাকাপড়, উপচে পড়া ভিড়, নতুন জুতোয় ফোস্কা পড়া পায়ে খুঁড়িয়ে হাঁটা.... ঢাক আর শঙ্খ , ভোগের গন্ধ, উঠতি বয়সের প্রথম প্রেম..... এসব নিয়েই আমার পুজো। যা লিখলাম তার কিছু কিছু এখনও সাথে আছে, বাকিটা সুখস্মৃতি.... সারাজীবনের পাথেয়।
অরিন্দম চ্যাটার্জী (ব্যান্ড - কায়া)
এবার পুজোতে বিদেশ যাত্রা। এই প্রতিবেদন লেখার আগেই বিদেশে হাজির। অরিন্দমের কথায় জানা গেল ৯ সেপ্টেম্বর ফিলাডেলফিয়ার পর ১৫, ১৬ এবং ১৭তে নিউইয়র্ক-এ প্রোগ্রাম। এরপর ২৩শে অরল্যন্ডো-ফ্লোরিডার শো সেরে ২৯ আবার নিউইয়র্ক। তারপর পরপর ২৯শে চেরিহিল, নিউজার্সি, ৩০শে লউডারডেল, ফ্লোরিডা, অক্টোবরের ৭ ডেট্রয়েট, ৮ বোস্টন হয়ে ১৪তে আবার ঢুকে পড়বে ফিলাডেলফিয়াতে।
মিস জোজো (শিল্পী)
এবারের পুজো কাটাবেন কোলকাতায়। সব পুজোতে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। দিল্লী, বম্বে, ব্যাঙ্গালোরে গানের অনুষ্ঠানে যেতে হয়। এবারে সপ্তমীর দিন বাড়ির লোকের সঙ্গে বেড়াবেন, ঠাকুর দেখবেন। যেহেতু পরিবারের লোকজন বাইতে থাকেন তাই সেইভাবে পরিবারের সকলকে নিয়ে ঠাকুর দেখা হয়ে ওঠে না। অষ্টমী থেকে দশমী পর্যন্ত কলকাতার নানা জায়গায় নানা অনুষ্ঠানে গান গাইবার আমন্ত্রণ। জানালেন এখন খুব ব্যস্ততার মধ্যে কাটছে। তাছাড়া বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের শুটিংএ যেতে হচ্ছে। ২৪ ঘন্টা, এ-বি-পি আনন্দ, ই-টিভি, মিউজিক চ্যানেল, আর-প্লাস, নিউজ-টাইম চ্যানেলের শুটিং প্রায় শেষ। পুজোর পাঁচ দিন টিভিতে এই অনুষ্ঠানগুলি সম্প্রসারিত করা হবে। জানালেন - 'কাজেই সত্যি বলতে কি, পুজোতে আমার কোন ছুটি নেই।' সঙ্গে রইল এক টুকরো হাসি।
প্রবাসী সুরকার শুভাশিস ভট্টাচার্য্যের সুরে গান লিখেছেন গৌতমবাবু। প্রজেক্টের নামকরণ 'ট্রাও ভট্টাজ'। এছাড়াও মানিক ভট্টাচার্য্য (পেশায় পাইলট), বেবি কর্মকার (আই টি), বম্বের মৌ ব্যানার্জীদের জন্যও কথা ডালি সাজিয়েছেন এই পুজোর আগেই। ওনাদের গান এই পুজোতেই রিলিজ করছে। একটি পুজোর গান, বাকি দুটি আধুনিক। মাকে হারিয়েছেন এক বছরও হয় নি, তাই এবারের পুজো নিয়ে খুব একটা ভাবছেন বলে তো মনে হল না। বন্ধু বান্ধব আর আড্ডা, সঙ্গে খাওয়া দাওয়া, মোটামুটি এটাই প্ল্যান। কিছু টক শো কিংবা পুজো উদ্বোধনে ডাক পড়লে ভেবে দেখবেন।
কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনঃ
যাদের সহযোগিতা না পেলে মাধুকরীর তরফ থেকে এই 'পুজোর পাঁচ দিন' প্রকাশিত করা সম্ভব হত না।...
-
কবি ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
-
অর্চন চক্রবর্তী (ব্যান্ড এ-ফাইব)
-
অরিন্দম চ্যাটার্জী (ব্যান্ড কায়া)
-
রাহুল চক্রবর্তী (রানাদা)
-
উপল সেনগুপ্ত (ব্যান্ড চন্দ্রবিন্দু)
-
অশোক দে
-
জিৎ ব্যনার্জী
সর্বপরি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই অংশগ্রহণকারী সকল শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বদের। মাধুকরীর সকল পাঠকদের তরফ থেকে আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের আগামী পুজোর দিনগুলি আনন্দময় হয়ে উঠুক এই কামনাই করি।
অনেক ধন্যবাদ।
Please mention the "name of the articles" you would like to comment in the following box... Thank you.
মতামত