

ফেব্রুয়ারী
২০২৫

প্রচ্ছদ - সুরজিৎ সিনহা
প্রচ্ছদঃ সুরজিত সিনহা
লেখক/লেখিকাবৃন্দ

প্রবন্ধ

কাউন্টি লাইব্রেরি থেকে সিডি-টা পেয়েছিলাম - ''The Venerable W.'' একটা ডকুমেন্টারি ফিল্ম। ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা বারবেট শ্রোডার ২০১৭ সালে এটা তৈরি করেন। চমকপ্রদ বিষয়বস্তু - উগ্র জাতীয়তাবাদী এক সন্ন্যাসী কীভাবে এক ঐতিহাসিক সহিংসতার বীজ ছড়িয়েছিলেন। কাহিনীর মূল চরিত্র গেরুয়া পরিহিত মিয়ানমারের বৌদ্ধ ভিক্ষু আশিন উইরাথু। ফিল্মটা দেখতে দেখতে হতভম্ব হয়ে গেলাম: ভরা সমাবেশে, হাজার হাজার অনুসারীদের উদ্দেশ্যে উইরাথু দাবি করছেন, রোহিঙ্গারা "একটি সৌদি-সমর্থিত বাংলাদেশী বিদ্রোহী দল যাদের উদ্দেশ্য হলো মিয়ানমারে অনুপ্রবেশ করা, সেখানকার ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করা এবং ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা।" বার্মিজ জনগণকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলে, ঘৃণাপূর্ণ, সহিংস জাতিগত নির্মূল অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বুদ্ধের পূজারী এক ত্রিচীবর। আন্তর্জাতিক মিডিয়া তাঁকে চরমপন্থী, ইসলামফোবিক হিসাবে চিহ্নিত করেছে। আল-কায়েদার প্রয়াত কুখ্যাত নেতার কথা মনে আছে? হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওসামা বিন লাদেন? ঠিক ধরেছেন। লাদেনের সাথে নাম মিলিয়ে উইরাথুকে আখ্যা দেওয়া হয়েছে "বৌদ্ধ বিন লাদেন"। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? ভাবছেন গুজব? মোটেই তাই নয়। তাঁর বিরুদ্ধে মুসলিম বিরোধী লিফলেট বিতরণ, মুসলমানদের উচ্ছেদের বিষয়ে অগণিত ফ্যাসিবাদী ইন্ধনমূলক বক্তব্য প্রচার, আর ধর্মোপদেশের নামে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর ভুরিভুরি প্রমাণ জ্বলজ্বল করছে। একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার হবে: ২০১৩ সালে এক উপদেশ সভায় উইরাথু বলেছিলেন: ’আপনি দয়া, ভালোবাসায় পূর্ণ হতে পারেন, কিন্তু একটা পাগল কুকুরের পাশে আপনি ঘুমাতে পারবেন না। আমি তাদের (মুসলিমদের) সমস্যা সৃষ্টিকারী বলি কারণ তারা সমস্যা সৃষ্টিকারী। আমি একজন উগ্র বৌদ্ধ বলে গর্বিত। আমরা দুর্বল হলে আমাদের দেশ মুসলমানদের হয়ে যাবে।’’ আবার ধরুন গ্লোবাল পোস্ট পত্রিকায় দেওয়া উইরাথুর এই মন্তব্যটা: ’মুসলমানরা আফ্রিকান ক্যাটফিশের মতো; তারা অত্যন্ত দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে, দারুণ হিংস্র এবং নিজেরাই নিজেদের খেয়ে ফেলে। যদিও তারা সংখ্যালঘু, তবুও তাদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, আর তাদের চাপের মুখে পড়ে আমরা শুধু ভুগেই চলেছি।’
আসুন এক ঝলক চোখ বুলিয়ে নিই উইরাথুর জীবনের সময়রেখার উপর। মায়ানমারের মান্দালে শহরে ১০ জুলাই, ১৯৬৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন উইরাথু। ১৪ বছর বয়সেই তিনি স্কুল ছেড়ে দেন এবং স্থানীয় একটি মঠে একজন কনিষ্ঠ সন্ন্যাসী হিসেবে ভর্তি হন। উইরাথু প্রথম প্রচারের আলোয় আসেন ২০০১ সালে যখন তিনি ‘’নাইন সিক্স নাইন’’ (969) জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সাথে জড়িত হন। সেই সময় থেকেই উইরাথু বৌদ্ধ প্রধান দেশগুলোর মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াতে শুরু করেন, সমস্ত মুসলিম দোকান বর্জন করার জন্য বৌদ্ধদের তিনি আহ্বান জানান। মায়ানমার জুড়ে শুরু হয় মুসলিম বিরোধী সভা সমাবেশ। সেই সব জমায়েতে লিফলেট বিতরণ এবং মায়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদের বিষয়ে হিংসাত্মক প্রচার চালান উইরাথু। এইসব দুষ্কৃতীর জন্য ২০০৩ সালে মায়ানমার সামরিক জান্তা উইরাথুকে ২৫ বছরের জন্য জেলে পাঠিয়েছিল। কিন্তু তাঁর কারাবাসের মাত্র সাত বছর পরেই তৎকালীন প্রেসিডেন্ট থেইন সেনের সরকার ২০১২ সালের জানুয়ারিতে, সাধারণ ক্ষমার আওতায় (general amnesty) তাঁকে মুক্তি দিয়ে দেয়। প্রেসিডেন্ট থেইনের উদ্দেশ্যটা কী ছিল শুনবেন? রোহিঙ্গা মুসলমানদের অন্য দেশে পাঠানোর বিতর্কিত পরিকল্পনার প্রচারকার্যে রক্তলোভী শিকারী কুকুর হিসাবে উইরাথুকে স্রেফ লেলিয়ে দেওয়া। থেইন জানতেন, এর থেকে ভালো লোক আর তিনি পাবেন না। হ্যাঁ, সেটাই হলো, উইরাথু সোৎসাহে মিয়ানমার সফর শুরু করেন এবং প্রতি মাসে পরম নিষ্ঠাভরে, অন্ততপক্ষে ১৫টি করে’ ধর্মোপদেশ দিয়ে যান। কী ছিল সেই ধর্মোপদেশের বিষয়বস্তু? মুসলমানদের বিরুদ্ধে কেবল তাল তাল ঘৃণা ছড়ানো ছাড়া আর কিছুই নয়। জুন মাসে বৌদ্ধ ও মুসলমানদের মধ্যে প্রথম দাঙ্গাটা বেঁধে যায়। এরপর ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে, মান্দালেতে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের একটি সমাবেশের নেতৃত্ব দেন উইরাথু। উইরাথুর দলপতিত্বে ৯৬৯ আন্দোলনের নৃশংস সহিংসতা বহুগুণ বেড়ে যায়। সমাবেশের ঠিক পরের মাস অক্টোবরের ৩০ তারিখে, রাখাইন রাজ্যের ৯০% মুসলিম-অধ্যুষিত মংড়ুতে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে তাদের বাড়িঘর থেকে জন্তুর মতো তাড়া করে বের করে' দেওয়া হয়। ২০১২ সালের জুন এবং অক্টোবরে সহিংসতা, প্রতিশোধ এবং দাঙ্গার দুটি তরঙ্গ প্রধান বৌদ্ধ দেশটিতে শতাব্দী-প্রাচীন সংঘাতকে তীব্র করে তোলার পর, এক লক্ষেরও বেশি মুসলিম রোহিঙ্গা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয় এবং শত শত নিহত হয়।
প্রসঙ্গত জেনে নিই যে, ৯৬৯ এই তিনটি সংখ্যা বুদ্ধ, বৌদ্ধ অনুশীলন এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের গুণাবলীর প্রতীক। ওদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানরা আল্লার উদ্দেশ্যে গুণগান করার জন্য "আল্লাহর নামে, পরম দয়াময়, পরম করুণাময়” এই শব্দবন্ধগুলো ব্যবহার করেন যার সংখ্যাসূচক মান যোগ করলে দাঁড়ায় ৭৮৬। জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মিয়ানমারের সাধারণ জনগণকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে উৎক্ষিপ্ত করার জন্যই তাঁদের আন্দোলনের নামটিকে ৯৬৯ সংখ্যাতত্ত্বের মোড়কে জড়িয়ে ধুয়ো তোলেন যে, মহাজাগতিক সাংখ্য বিচারের দিক দিয়ে এটা ৭৮৬ এর ঠিক বিপরীত। কেউ কেউ তো এও বিশ্বাস করতে থাকে যে, ২১ শতকে বিশ্ব আধিপত্য অর্জনের জন্য ৭৮৬ সংখ্যাটা রহস্যজনকভাবে এক মুসলিম ষড়যন্ত্রের দিকে ইঙ্গিত করে, যেহেতু ৭+৮+৬ যোগ করলে ২১ হয়। কিন্তু এটা একটা ভুল ধারণা ছাড়া আর কিছুই না। প্রকৃতপক্ষে, বার্মার মুসলমানরা দীর্ঘদিন ধরেই তাদের হালাল রেস্তোরাঁ চিহ্নিত করার জন্য ৭৮৬ প্রতীকটি ব্যবহার করে আসছে।
২০১৩ সালে মধ্য ও পূর্ব মায়ানমার জুড়ে বিভিন্ন শহরে (মেইকটিলা, ওক্কান, লাশিও, কান্তবালু, থান্ডে) একটি ধারাবাহিক মুসলিম বিরোধী সংঘর্ষ জারি ছিল। যেদিকে তাকানো যায় শুধু অসহায় মানুষের লাশ, রক্ত আর আগুনের গন্ধে আকাশ ভারী হয়ে ওঠে। টাইম ম্যাগাজিন তাদের জুলাইয়ের কভার স্টোরিতে উইরাথুকে "বৌদ্ধ সন্ত্রাসের সাক্ষাৎ প্রতিমূর্তি" হিসাবে বর্ণনা করে এবং সেপ্টেম্বরে মিয়ানমারের বৌদ্ধ ধর্ম পরিচালনাকারী রাষ্ট্রীয় সংস্থা ‘’সঙ্ঘ মহা নায়ক’’ ৯৬৯ আন্দোলনকে নিষিদ্ধ করে। এত কিছু ঘটে যাওয়া সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট থেইন কিন্তু উইরাথুকে "বুদ্ধের পুত্র" এবং শান্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ "এক মহান পুরুষ" বলে' বর্ণনা করেছিলেন। উইরাথুর প্রতি থেইনের সমর্থনের বহর বুঝতে কারুরই অসুবিধা হয় না।
২০১৪ সালে, উইরাথু কলম্বো-ভিত্তিক সিংহলি বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী সংগঠন ‘’বোদু বালা সেনা’’ (বৌদ্ধ শক্তির সেনাবাহিনী/বিবিএস) দ্বারা আয়োজিত একটি সম্মেলনে যোগদান করেন। সেখানে তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, ৯৬৯ আন্দোলনের কাজ তিনি অব্যাহত রাখতে চান। এর কিছুদিন পরেই, ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারী, ৯৬৯ আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন যে জাতীয়তাবাদী সন্ন্যাসীরা তাঁরাই মায়ানমারের ‘’জাতি ও ধর্ম রক্ষা সমিতি’’ ওরফে ‘’মা বা থা’’ গঠন করেন। বলা বাহুল্য: এই গোষ্ঠীর মূল মাথা ছিলেন উইরাথু। বিশ্বব্যাপী কট্টরপন্থী উৎসাহীদের সমর্থন পায় এই সংঘটন, সদস্যসংখ্যাও রাতারাতি হুহু করে' বেড়ে যায়। বৌদ্ধ মহিলাদের আন্তঃধর্মীয় বিবাহ এবং ধর্মান্তরকরণের উপর নিষেধাজ্ঞ জারি করার জন্য একটি আইনের প্রস্তাব করে ‘’মা বা থা’’, আইনটি প্রণয়নের জন্য সরকারের উপর কড়া রাজনৈতিক চাপও সৃষ্টি করতে থাকে তারা। এরই মধ্যে, মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়াংহি লি তাঁর ১০ দিনের মিয়ানমার সফরে আসেন। মিয়ানমারে মুসলিম সংখ্যালঘুদের দুর্দশা, ও তাদের প্রতি পদ্ধতিগত বৈষম্যের কথা তিনি জনসমক্ষে তুলে ধরেন। ‘’মা বা থা’’-র প্রস্তাবিত আইনের খসড়াটিরও তিনি সমালোচনা করেন। ব্যস, আর যায় কোথা! উইরাথু মিসেস লি-কে একজন "বেশ্যা" এবং ''কুত্তা'' বলে অভিহিত করেন। উইরাথুর ঘৃণ্য মানসিকতা ও নারী বিদ্বেষের আরেক অকাট্য প্রমাণ এই যৌনতাবাদী মন্তব্য। আশ্চর্য্যের ব্যাপার! ২০১৫তে মিয়ানমারে ওই জাতি এবং ধর্ম সুরক্ষা আইনটি কিন্তু দিব্যি পাসও হয়ে যায়।
‘’মা বা থা’’-র জঘন্য কীর্তিকলাপের এখানেই শেষ নয়। মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৌদ্ধদের দ্বারা পরিচালিত গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল ‘’মা বা থা’’। ২০১২ সালে আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের দ্বারা কথিত রাখাইন বৌদ্ধ মহিলা মা থিদা হত্বেকে ধর্ষণ ও হত্যার একটা বাজে প্রচারণা, একটা মিথ্যা ছড়িয়ে দিয়ে বৌদ্ধ ও মুসলিমদের বিভক্ত করেছিল ‘’মা বা থা’’; রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বার্মিজ জনগণকে তাতিয়ে তুলেছিল । হত্বেকে মোটেই ধর্ষণ করা হয়নি বরং তাকে কেবল হত্যা করা হয়েছিল। যে ডাক্তার তার দেহ পরীক্ষা করেছিলেন তিনি বলেছিলেন যে, তাকে মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণ হয়েছে বলে মিথ্যে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছিল। বলা বাহুল্য এই নৃশংস সহিংসতার ঘৃণ্য কাজে সামরিক সংস্থার পূর্ণ সমর্থন ও সহায়তা ছিল। ধর্ষণের ঘটনাটি সরকারি এজেন্টরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছিল এবং মায়ানমার জুড়ে রোহিঙ্গা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে গণহত্যার তরঙ্গ শুরু করার জন্য এক লঞ্চিং প্যাড হিসাবে এটা ব্যবহৃত হয়েছিল। ২০১৪ সালেও ঠিক একইভাবে, মান্দালেতে একজন বৌদ্ধ মহিলার ধর্ষণের অভিযোগে মুসলিম দোকানদারদের অভিযুক্ত করা হয়েছিল, যার রিপোর্ট ‘’মা বা থা’’ সদস্যরাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছিল, ফলস্বরূপ শহরে তিন দিনের মারাত্মক দাঙ্গা শুরু হয়েছিল।
এরপর ২০১৫ তে অং সান সু চি'র নেতৃত্বে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি/NLD) দেশের শাসন ক্ষমতায় আসে। ৯ অক্টোবর ২০১৬, সশস্ত্র ব্যক্তিরা রাখাইন রাজ্যের বেশ কয়েকটি সীমান্ত পুলিশ পোস্টে হামলা চালায় এবং নয়জন পুলিশ কর্মীকে হত্যা করে। অস্ত্র ও গোলাবারুদও লুট করা হয়। মূলত মংডু টাউনশিপে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা আগুনে ঘি ঢালার সমানই উত্তেজনা ছড়ায়। চরমপন্থী ভিক্ষু গোষ্ঠী তো রোহিঙ্গাদের সাথে জড়িত একটি বিদ্রোহের সম্ভাবনার কথা অনেক আগেই রটিয়ে দিয়েছেন, এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে ফেসবুকে নিহত পুলিশের গ্রাফিক ছবি পোস্ট করতে থাকেন উইরাথু।‘ ’সঙ্ঘ মহা নায়ক’’ ২০১৭ সালের ২৩ মে ‘’মা বা থা''-কে নিষিদ্ধ করে, আর উইরাথুকে তো এর আগে মার্চ মাসেই এক বছরের জন্য ধর্ম প্রচার থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে দিয়েছিল তারা। উইরাথু মুখে "এক্স" টেপ আটকে অনলাইনে নিজের ছবি পোস্ট করে এর প্রতিবাদ জানান। তিনি এও অভিযোগ করেন যে সুচির সরকার বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিকে মুসলমান আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য সামরিক বাহিনীর প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে তুলছেন। ‘’মা বা থা’’ তড়িঘড়ি আবার তাদের নাম পরিবর্তন করে’ হয়ে যায় ''বুদ্ধ ধম্ম চ্যারিটি ফাউন্ডেশন'' এবং পুরানো কার্যক্রমই চালিয়ে যেতে থাকে। আর উইরাথুও ঠিক তেমনই সঙ্ঘের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে মুসলিম বিরোধী ধর্মোপদেশ প্রদানের জন্য তাঁর দেশ জোড়া ভ্রমণ অব্যাহত রাখেন, এমনকি রাখাইনেও হাজির হয়ে যান, যেখানে এক বৃহৎ সংবেদনশীল মুসলিম সংখ্যালঘু গোষ্ঠী বসবাস করছে।
২০১৭’র ২৫শে আগস্ট, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেই ভয়ঙ্করতম জাতিগত নির্মূল অভিযান (যখন প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক প্রতিবেশী বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছিল) শুরু হওয়ার পরপরই, রোহিঙ্গা বিরোধী সহিংসতার কেন্দ্রস্থল উত্তর রাখাইনে উইরাথুকে রাষ্ট্র-চালিত মিডিয়া সফরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক দমন-পীড়নের পুরোদস্তুর সমর্থন করতে দেখা যায়। এখানেই কি শেষ? ২০১৮ সালে, ইয়াঙ্গুন শহরে একটি সমাবেশে জ্বালাময়ী ভাষণ দেওয়ার সময়, উইরাথু বলেছিলেন, যে দিন মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের রোহিঙ্গা বিতাড়নের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সামনে আনা হবে, সেই দিনই তিনি নিজেই বন্দুক হাতে তুলে নেবেন। ভাবা যায়? শব্দগুলো নির্গত হচ্ছে একজন কথিত অহিংসার পূজারীর মুখ থেকে! এই ধরণের অগণিত ঘৃণাত্মক সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের জন্য ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ফেসবুক তাঁর অ্যাকাউন্টটি মুছে দেয়।
আচ্ছা কী অজুহাত দিয়েছেন উইরাথু তাঁর এই চরমপন্থার, বৌদ্ধধর্মে যা গর্হিত? উইরাথু তাঁর কার্যকলাপের ন্যায্যতা দিয়েছেন এই বলে যে, চরম সময়ের জন্য চরম পদক্ষেপেরই প্রয়োজন।অতঃপর, ২০১৯ সালের এপ্রিলে উইরাথুর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে প্রো-মিলিটারি সমাবেশে, তিনি মিয়ানমারের এনএলডি বেসামরিক সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী বক্তৃতা প্রদানের মাধ্যমে ঘৃণা ও অবমাননা উস্কে দিচ্ছেন। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে থাই কর্তৃপক্ষ উইরাথুর দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে এবং পরের মাসে মিয়ানমারের একটি আদালত তাঁর গ্রেপ্তারের জন্য একটি পরোয়ানাও জারি করেছিল যাতে উইরাথুর তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি এক বছরের জন্য আত্মগোপনে চলে যান। এরপর ২০২০ সালের নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের মাত্র কয়েক দিন আগে তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
২০২১-এর ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানে সু চি ক্ষমতাচ্যুত হন এবং জান্তা সরকার ওই বছরেরই সেপ্টেম্বর মাসে উইরাথুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয় ও উইরাথুকে মুক্তি দেয়, কিন্তু এর পিছনের কোনও কারণ কিন্তু তারা জানায়নি। শুধু বলেছে যে উইরাথু নাকি একটি সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি আছেন কিন্তু সেই চিকিৎসার অবস্থা কারুরই গোচর হয়নি। সকলের বোধ হয় চমকাবার আরও কিছু বাকি ছিল যখন জানা গেলো ২০২২ সালের নভেম্বরে, দেশের সর্বোচ্চ সম্মান ‘’থিরি পিয়াঞ্চি’’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন ভিক্ষু উইরাথু।
সন্দেহ হয় এগুলো সবই কী কাকতালীয় ঘটনা! প্রথমে প্রেসিডেন্ট থেইন, পরে জান্তা সরকার-সকলেই কোনো এক রহস্যজনক কারণে বিতর্কিত উইরাথুকে রাজনৈতিক অনাক্রম্যতার সুরক্ষা প্রদান করেছেন। তাই, ঘৃণ্যতম অপরাধ করেও বেকসুর খালাস পেয়ে যাচ্ছেন উইরাথু বারবার। উইরাথুর বর্ণবাদী, ধর্মান্ধ এবং যৌনতাবাদী রটনা এবং অপরাধমূলক উসকানিকে যদিও অনেক মহলই নিন্দা করেছে, তবু অনেক বৌদ্ধদের কাছেই তিনি খুব জনপ্রিয়, এবং তা শুধু তাঁর জন্মভূমি মিয়ানমারে নয়, শ্রীলঙ্কার মতো জায়গাতেও লক্ষণীয়। মান্দালের বৌদ্ধ মঠ মাসোয়েইনে প্রায় ২,৫০০ ভিক্ষুর সভাপতি উইরাথুর ফেসবুক জুড়ে হাজার হাজার অনুসারী ছিল এবং তাঁর ইউটিউব ভিডিওগুলো কয়েক হাজার বার করে' দেখা হয়েছে।
দেখুন, বৌদ্ধধর্ম সম্বন্ধে বহু মানুষ বিশেষত পাশ্চাত্যবাসীদের মনের মধ্যে যে সাধারণ ছবিটা আঁকা রয়েছে তা হলো: এর অনুগামীরা এতটাই শান্তিপ্রিয়, এতটাই সহনশীল যে, তাঁরা একটা মাছিকেও আঘাত করেন না। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক সক্রিয়তায় সন্ন্যাসীদের অংশগ্রহণের এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মিয়ানমারের ২০০৭ সালের আগস্ট, সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসজুড়ে যে ''স্যাফরন রেভোলিউশন'' শুরু হয়, তা এর এক আদর্শ উদাহরণ। তদানীন্তন জাতীয় সামরিক সরকারের জ্বালানির বিক্রয় মূল্যের উপর ভর্তুকি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্তের কারণে এই বিক্ষোভ দানা বাঁধে। ক্রমে ক্রমে তা সমাজের বিভিন্ন স্তরে উল্কার মতো ছড়িয়ে পড়ে। এই নাগরিক প্রতিরোধের প্রচারণায় ছাত্র, রাজনৈতিক কর্মী, নারী পুরুষ সকলেই সামিল হয়েছিলেন এবং হাজার হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষু এতে নেতৃত্ব দেন। এই প্রতিবাদটি অহিংস থাকলেও সাম্প্রতিককালে, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, এবং মিয়ানমারের মতো জায়গায় সন্ন্যাসীদের প্রতিরোধ অতি-জাতীয়তাবাদী এবং চরমপন্থী রূপ ধারণ করেছে। আসলে, বিশ্ব ধর্মের শিক্ষায় নিহিত নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ যাই হোক না কেন, ধর্মগুলো নির্ভরযোগ্যভাবে এই মূল্যবোধগুলিকে ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় এবং ধর্ম অনুশীলনকারীরা মনুষ্য চরিত্রের বিচিত্রতায় ফিরে যাওয়ার প্রবণতা দেখায়। বৌদ্ধধর্মও এর ব্যতিক্রম নয়। বৌদ্ধ চরমপন্থীরা ইসলামকে একটি "বিপজ্জনক" বা "নৃশংস" ধর্ম হিসাবে গণ্য করে, এবং এই ধারণা পশ্চিমা দেশগুলো থেকেই সরাসরি ধার করা হয়েছে। বৌদ্ধ উগ্রপন্থীদের দ্বারা সংঘটিত চরম সহিংসতার নজিরের মুখে দাঁড়িয়ে পশ্চিমা সমাজ এখনও বৌদ্ধধর্মকে একটা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ধর্ম হিসেবেই ধরে রেখেছে, অথচ, একই সাথে ইসলামের স্টেরিওটাইপগুলোকে একটি সহিংস ধর্ম হিসাবে মান্যতা দিয়ে চলেছে। মুসলিম অধ্যুষিত মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার দ্বন্দগুলোতে পশ্চিমা হস্তক্ষেপ ব্যাপক অশান্তির সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে সংঘর্ষের ব্যাপারে তাদের তেমন কোনো অভিজ্ঞতা হয়নি। দক্ষিণ এশিয়াতেও যদি পশ্চিমা দেশগুলো নিয়মিত, ধারাবাহিক সামরিক অভিযানে সমানভাবে জড়িত থাকত, তাহলে তখন বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা সংঘটিত সহিংসতার সম্বন্ধে তাদের চোখ খুলে যেত। আরেকটা ব্যাপার হলো: দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনগুলো থেরবাদ বৌদ্ধধর্ম অনুশীলন করে। বৌদ্ধধর্মের এই শাখাটি অহিংসা ও শান্তির বিষয়ে বৌদ্ধধর্মের অন্যান্য রূপ থেকে আলাদা। এই অনুশীলনটি বৌদ্ধ ঐতিহ্যের প্রাচীনতম গ্রন্থগুলোকে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠভাবে মেনে চলে এবং সাধারণত বৌদ্ধধর্মের অন্যান্য (মহাযান এবং বজ্রযান) শাখার তুলনায় আরও কঠোরভাবে সন্ন্যাসবিধির পালনের উপর জোর দেয়; জাতীয়তাবাদী মূল্যবোধ এবং ধর্ম ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মধ্যে সংযোগের সাথেও এটি আরও ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। কিছু থেরবাদ সম্প্রদায় তো অ-বৌদ্ধদেরকে অবমানবিক বা দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ হিসাবেই দেখে। বলে রাখা ভালো: প্রায় ৫৪ মিলিয়নের দেশ মিয়ানমারে প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রায় নয় জন মানুষই বৌদ্ধ, এবং কার্যত তারা সক্কলেই থেরবাদ বৌদ্ধ ধর্ম পালন করে।
এতক্ষণের আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার যে উইরাথু এবং তাঁর অপরাধী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দল বৌদ্ধ ধর্মকে অনৈতিকভাবে কব্জা করেছিলেন এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক আলোচনাকে বিষিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু কেন? সন্ন্যাসীরা বলেছেন যে, তাদের ব্যাপক উদ্বেগ এবং ভয়ের কারণ এই যে, মিয়ানমারে একটা উগ্র ইসলামের পুনরুত্থান ঘটবে এবং বৌদ্ধ ধর্ম রসাতলে যাবে যেমনটি ঘটেছে শতাব্দী আগে আজকের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশ মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায়। এদিকে, মিয়ানমারের ২০১৪ সালের আদমশুমারির তথ্যের উপর নজর করলে দেখা যাবে যে, বার্মিজ জনসংখ্যার অধিকাংশই ছিল বৌদ্ধ (৮৯.৯%), মুসলমান ছিল মাত্র ৪.৩% ; ৫১৫ লক্ষ মানুষের এই দেশে বৌদ্ধরা যেখানে সংখ্যায় ছিল ৪৫১ লক্ষ মুসলিমরা ছিল সেখানে মাত্র ১২ লক্ষ। এর মধ্যে রাখাইন রাজ্যের আনুমানিক ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিম রাষ্ট্রহীন ছিল কারণ মিয়ানমার তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে এবং তারা আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারের আদমশুমারির অন্তর্ভুক্তই ছিল না। সুতরাং এমতবস্থায় কোনো সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠী কীভাবে একটা প্রভাবশালী ধর্মের জন্য হুমকির কারণ হয়ে উঠেছিল, তার কোন ব্যাখ্যা নেই। আসলে বহু দিন ধরেই, মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতিগত ও বর্ণগত গোষ্ঠীগুলিকে পরস্পরের প্রতি বিষিয়ে দেওয়া হয়েছিল যাতে তারা একে অপরকে ঘৃণা করে, হিংসা করে। শাসনকারী সামরিক বাহিনী যারা শক্তিশালী অস্ত্র কৌশল এবং চরমপন্থী নিয়মনীতি নিয়ে ভগ্ন দেশকে শাসন করছিল সেই সামরিক জান্তা কখনোই চায়নি যে, দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে কোনো পরিবর্তন আসুক, এনএলডি সরকারের গণতন্ত্র কায়েম হোক। এনএলডি সরকারের সাথে সন্ন্যাসীদের যে বিরোধিতা ছিল, তার পূর্ণ সুবিধা নেওয়ার জন্য দেশের অভ্যন্তরে সবসময় একটা জাতিগত বিভেদ বিভাজনের উত্তেজনাময় আবহাওয়া চালু রাখতে যার-পর-নাই ইচ্ছুক ছিল তাতমাদাও জান্তা। সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিশেষ করে’, রোহিঙ্গা জনগণদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও অসহিষ্ণুতার পরিবেশকে দীর্ঘায়িত করার জন্যই সরকার উইরাথু এবং তাঁরই মতো বিদ্বেষপূর্ণ, জেনোফোবিক সন্ন্যাসীদেরকে ব্যবহার করেছিল, ‘’মা বা থা’’ গোষ্ঠীর মতো উগ্র বৌদ্ধদের সমর্থন করেছিল। প্রকৃতপক্ষে “মা বা থা সেনাবাহিনী দ্বারাই বহুলাংশে নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল। একজন বিশেষজ্ঞ তো একথাও জানিয়েছেন যে, সামরিক শাসকরা ‘’মা বা থা’’ সদস্যদের ওয়ার্ড প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ করতে অবধি দ্বিধা করেনি। ২০১৫ তে সু চি এবং এনএলডি'র হাত ধরে মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্টিত হলেও বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী এবং সামরিক বাহিনীর রক্ষণশীল নেতৃত্ব এই দুই শ্রেণীর কাছেই উইরাথুর জনপ্রিয়তা ঠিকই বজায় ছিল। আর সেটাই সু চি'র সরকারকে একটা দ্বিধার মধ্যে ফেলে দেয় কারণ বার্মিজ জনসাধারণের বেশিরভাগই উইরাথুর মুসলিম-বিরোধী প্রোপাগান্ডায় আস্থা ও বিশ্বাস সঁপে দিয়েছে, সুতরাং তাদের সমর্থন বজায় রাখা যায় কীভাবে? সারা মিয়ানমার জুড়ে ইসলামের প্রতি যে অসীম বিদ্বেষপূর্ণ আবহাওয়ার সৃষ্টি করেছিল উইরাথুর সমর্থকরা, তা প্রতিরোধ করতে যথেষ্ট চেষ্টা করেননি সু চি, চলতি হওয়ার মতোই তিনি তার সাথে সায় দিয়েছেন। এর সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ: ২০১৫ সালের নির্বাচনের সময় এনএলডি প্রতিটি মুসলিম প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, যদিও তাঁদের যোগ্যতার কিছুমাত্র কমতি ছিল না। যদিও ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে যে সামরিক দমন-পীড়ন হয়েছিল তার জন্য সু চি দায়ী ছিলেন না, কিন্তু সু চি’র মুখ থেকে সে সম্বন্ধে একটিও নিন্দা বাক্য নিঃসৃত হয়নি। বরং সু চি গলা ফুলিয়ে বলেছিলেন যে, সেনাবাহিনীর ওই সমস্ত পদক্ষেপগুলো আসলে রোহিঙ্গা মিলিশিয়া বিদ্রোহ দমনের একটা প্রতিক্রিয়ামাত্র ছিল। সু চির ধাষ্টামো এখানেই শেষ হয় নি, গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত জেনারেলদেরকে তিনি "বেশ মিষ্টি" বলেও বর্ণনা করেছেন। আসলে, রোহিঙ্গাদের প্রতি সামান্যতম সহানুভূতিও পোষণ করে না যে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠরা তাদের কাছে নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রাখার জন্যই "দ্য লেডি", ওরফে মিসেস সু চি ততদিনে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রতে পরিণত হয়েছিলেন।
তথ্যসূত্র:
1.The Politics of Numerology: Burma’s 969 vs. 786 and Malaysia’s 505. In SE Asia, some numbers are used for political and religious ends. Mong Palatino. The Diplomat. May 16, 2013.
2. Correcting The False Narratives of Ma Ba Tha – OpEd. Dr. Habib Siddiqui., Eurasia review. February 9, 2016.
3. Lion’s Roar. What’s the connection between Buddhism and ethnic cleansing in Myanmar? Randy Rosenthal. Sep 10, 2017.
4. Ashin Wirathu: The Buddhist bin Laden. Shehab Sumon. Arab News. July 30, 2019.
5. Wirathu: Myanmar military releases firebrand Buddhist monk. BBC. September 2021.
6. Aung San Suu Kyi: Myanmar democracy icon who fell from grace. BBC. December 6, 2021
7. Hate Speech and Incitement in Myanmar before and after the February 2021 Coup. In: Global Responsibility to Protect. Noel M. Morada. BRILL. Mar 03, 2023.
8. The Unholy Nexus Between the Monks and Military in Myanmar. Sauid Ahmed Khan. Australian Institute of International Affairs. Mar 22, 2023.
9. Buddhist Nationalism: Rising Religious Violence in South Asia. Eva Chappus. DU Undergraduate Research Journal Archive Vol. 4, Issue 2, Article 1. May 10, 2023.
কবিতা
ডক্টর সুব্রত ভট্টাচার্য্য
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
আলো
নিশীথে দীপ্যমান গগন জুড়ি এক আলোক,
যেন অমৃতময়;
ছড়ায় দীপ্তি অসীমের পথে,
আনে প্লাবন সাগর তরঙ্গে
অপরূপ বর্ণচ্ছটায়।
হে জ্যোতি,
উৎস কোথা তব,
ঠিকানা কোন অনন্তে?
আলোক তব, করে মায়াবর্ষণ
এই সাগরের জলে।
আবাহনে বুঝি ভাঙে আঁধার,
এই রজনীতে।
অনন্তের পথে যাত্রা এই স্নিগ্ধতা
করে রচনা সাগরে স্বপ্নময় রূপ।
দীপ্তির সারণীতে নক্ষত্রেরা গায় গান,
জ্যোতিতে হয় পরিমার্জিত
জগৎসংসারের প্রাণ।
হে দীপ,
হে প্রেরণা,
যোগাও শক্তি মোদের,
করিতে সমাপ্তি সকল বেদনা।
আপ্লুত নিখিল সংসার অব,
তব আগমনে।
রহে চরৈবতি চির অভিসার তব
সাগরের বুকে অনন্তকাল,
প্রণতি মোর ইহা,
তাহার চরণে।
নিঃসীম তব আলোকে
যায় বুঝি মিশিয়া মোর অস্তিত্ব
ধীরে ধীরে।
ফিরি আদিম শূন্যতায়-
সেই খোঁজে;
উদিত যেথা হতে এই রশ্মি,
উদিত যেথা হতে মোর এই আমি,
উৎক্ষিপ্ত যান মোর
মানস তীরে।
প্রশান্তি
দক্ষিণ চীন সাগরের এই নির্জন সৈকত যেন
প্রকৃতির এক অপ্রকাশিত কবিতা।
এখানে নীল সমুদ্রের বুকে তুষারশুভ্র পুঞ্জীভূত দুর্বার তরঙ্গে
নিদ্রাচ্ছন্ন ঝিনুকগুলোকে দেখলে মনে হয়,
বুঝি সময় গেছে থেমে,
অনেককাল।
ছন্দময় সমুদ্র যেন মালা গেঁথে
গুঞ্জনের সুরে আপন গল্প শোনায় পাহাড়কে;
সেই গল্পে থাকে অনন্ত তরঙ্গের ক্রন্দন,
রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার মুহূর্ত,
ভালোবাসার চিহ্ন,
আর, হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি।
অনতিদূরে,
গভীর নীলাকাশে কয়েকটি পাহাড় মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে অবিচল,
বহুকাল ধরে।
সূর্যাস্তের সময় তাদের গায়ে লেগে থাকা কুয়াশার চাদর যেন
সময়ের গাঢ় স্মৃতি।
সূর্যাস্তের বুননে দেখি,
পাহাড়ের ছায়ায়
এক জেলে তার ছোট্ট ডিঙি নৌকা নিয়ে এগিয়ে চলেছে সাগরের বুকে।
দু হাতে তার বৈঠার টান,
অনুভবি, শরীরের প্রতিটি রেখায় যেন ফুটে উঠেছে জীবনের লড়াই আর অনন্ত আশা।
তরঙ্গের শব্দে মিশে যায় তার গ্রাম্য গান,
যা হয়তো প্রাপ্ত তার পূর্বপুরুষদের কাছ হতে।
এখানে সূর্যাস্তের শুরুতে
আকাশ হতে ঝরে পড়া মৃদুসোনালি আলো দেখলে মনে হয়,
স্বর্ণালী কিরণ বুঝি দিনের উষ্ণ প্রকৃতিকে স্নান করাচ্ছে,
পরম যত্নে।
খানিক পর
সেই সোনালি রঙ ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হয়ে
তার কোমল ও উষ্ণ কমলা আভা
মেঘ ও আকাশে ছড়িয়ে দিলে মনে হয়,
কোনো শিল্পী বুঝি তুলির আঁচড়ে কমলা রঙের আলপনা এঁকে দিচ্ছেন,
আকাশ জুড়ে।
ক্রমশ: সূর্য দিগন্তের কাছে নামতে থাকলে,
কমলা রঙ হয় আরও গাঢ়, এবং
এক সময় তা রক্তিম লাল আভা হয়ে আকাশে মেঘের ক্যানভাসে মিশে গিয়ে
প্রকৃতিতে ছড়িয়ে দিয়ে সৃষ্টি করে
এক মোহময় উষ্ণতা।
এরপর সূর্য যখন একেবারে দিগন্তে অস্ত যেতে থাকে,
তখন আকাশে দেখা দেয় গোলাপি ও হালকা বেগুনি রঙ।
এই সময়ের রঙে মিশে থাকে শান্ত ও কোমল এক আবেশ,
যা মনকে দেয় এক পরম প্রশান্তি।
অস্তগামী সূর্য তার অবর্ণনীয় বর্ণচ্ছটা পাহাড়ের গাত্রে ছড়িয়ে দিয়ে
দিনকে বিদায় জানায়।
সূর্য অস্ত গেলে
নেমে আসে নীলচে ধূসর রঙের ছায়া।
এই রঙের আবির্ভাব প্রকৃতিকে জানান দেয়
রাতের আগমনের।
ধীরে ধীরে নামতে থাকে আঁধার,
আর দিনের রঙিন চিত্রকলা মিলিয়ে যায়
গোধূলির নিস্তব্ধতায়।
গোধূলি বেলায়,
রুপালি বালুর বুক জুড়ে ছড়িয়ে থাকে
দিনের অন্তিম আলো।
পাথরে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের পুঞ্জীভূত বাষ্প
মনকে করে সিক্ত,
পরিতৃপ্ত।
আঁধার নামলে,
কোথায় যেন লুকিয়ে থাকে এক অব্যক্ত সৌন্দর্য
যেখানে প্রকৃতি আর মানুষের জীবন হয় একাকার।
সৈকতের এই নিঃসঙ্গতা,
পাহাড়ের নিস্তব্ধতা, আর
জেলে ডিঙির অনন্ত যাত্রা -
সবই মিলে সৃষ্ট এক আশ্চর্য মায়াময় মুহূর্ত,
ফেলে যায় অদৃশ্য এক প্রশান্তির ছাপ
হৃদয় গভীরে।
বেশ ভালোই লাগে, প্রখর গ্রীষ্মে -
হঠাৎ বসন্তের মৃদু বাতাসের মতন।
ভুলের মায়ায় জাড়িত হয় দেহমন,
কাঁঠালচাঁপার পাপড়িতে প্রতিফলিত সূর্যকিরণ
কুয়াশা সরায় সর্পিল পাকদন্ডীর।
পৃথিবীর সব কঠোর নিষ্ঠূর ঠিক ও সত্যির ভিড়ে
ছোট ছোট ভুল সময়ের ঘড়িতে ঘন্টাধ্বনি করে,
নিস্তরঙ্গ মনসাগরে প্রানোচ্ছাসের ঢেউ তোলে -
তারপর সামান্য বুদ্বুদ তুলেই মিলিয়ে যায়।
তবু রেশ রেখে যায় মনের গভীরে, প্রাণের মাঝে,
ভালোবাসার তারে দোয়েল এসে বসে -
পূরবীর সুরে মূর্ছনা ওঠে অস্তাচলের প্রান্তে,
জীবন বয়ে চলে অন্য জীবনে
কপোতাক্ষের ছন্দে।
কবিতা
নিলয় দত্ত
কেষ্টপুর, কলকাতা
ভুলের পরে
ভুলের পরে এখনও কিছু ভুল হয়েই যায় -
বড় নয় তেমন, অকিঞ্চিৎকর সব ভুল -
ছোট বড় বৃত্তের জন্ম দেয় নিস্তরঙ্গ জীবনে।
বিত্তচূড়োয় বিদ্যমান কিছু অর্বাচীন বা
উন্নাসিকের কাছে -
এই তুচ্ছাতিতুচ্ছ ভুলই হয়ত,
কখনও তাদের হৃদয় তাপিত করে
বা বাকরুদ্ধ হয়ে ওঠে দুঃসহ ভ্রান্তিতে -
ভুলের খাঁড়া নেমে আসে
কোনও এক জীবনের যূপকাষ্ঠে।
আবার অনেকেরই হয়তো এই সামান্য ভুলগুলো,

কবিতা
সুকান্ত পাল
ফরাক্কা, পঃ বাংলা
কবিতা/গান
কে বলে ফাগুন মাসে ফোটে শুধু ফুল
দেখোনি কি ঝরে যেতে পলাশ শিমুল।
দেখেছো রঙের মেলা ফাগুন জুড়ে
কতটা হৃদয় কার গিয়েছে পুড়ে—
দেখতে যদি তুমি ভেঙে যেত ভুল
কে বলে ফাগুন মাসে ফোটে শুধু ফুল।
শুনেছো কোকিলের কুহু কুহু গান
বোঝো নি বুকেতে তার কত অভিমান।
কতটা বেদনা পেলে ধূলায় লুটায় বলো
বিরহী বকুল
কে বলে ফাগুন মাসে ফোটে শুধু ফুল।
ফাগুনের কি যে জ্বালা রাধাই জানে
কানুর পীরিতি গাঁথা ভাসে যমুনার গানে।
যে ফুল ফাগুনে ফুটে সুরভি হারায়—
বলো তার কি গো ছিল ভুল
কে বলে ফাগুন মাসে ফোটে শুধু ফুল।
নাগরিক গ্রাম
গ্রামগুলি আর নাই সেই গ্রাম বদলে গিয়েছে কতকিছু
নাই মেঠো পথ কুঁড়েঘরগুলি নিকানো উঠান যতকিছু।
গেছে একতারা গুবা ও খমক চোখের বালি পাতানো সই
বাঁক কাঁধে নিয়ে বেচে না কেউ আর ঘরে পাতা সেই সরের দই।
বুড়ো বটগাছ কেটে নিয়ে গেছে নামটুকু আছে বটতলা
গরু-মোষ-গাড়ি টাঙ্গা টমটম— বন্ধ তাদের পথ চলা।
হারিয়ে গিয়েছে প্রাণেশ বিজলী আদরের দীনু চুনীবালা
এসেছে বিট্টু বিকি রনি মাহী পুরানো নামেতে দিয়ে তালা।
এ বাড়ির ডাল ও বাড়ি যায় না —বন্ধ হয়েছে কড়ি খেলা
কাঁচের চুরি কেনে না কেউ আর জমে না আগের সে মেলা।
ঘুচে গেছে কবে শাস্ত্র রসনা টিভি মোবাইলে আটকে চোখ
কংক্রিট বুকে নাগরিক গ্রাম ইতিহাস মুখে লুকায় শোক।


একদিন ঝোড়ো ঝড় আছড়ে পড়ল
শণ্শণে বাতাস গাছের বৃত্তকে ফেলল ঘিরে;
হাওয়ার দমকা আঘাতে তার কাণ্ড
পড়ল ভেঙ্গে। আমাদের যাওয়ার পথে।
পরদিন উঠল রোদ। ভিজে চারপাশ
চক্চকে রোদের ফলায়। এল যন্ত্রমানব্।
তার শক্তিশালী করাত—বেগুনী মাথা
আলাদা করল ধড় থেকে।
অনেকদিন পর। সেই পথে যেতে দেখলাম।
তুমি নাই। শুকনো কাণ্ড থেকে মাথা তুলেছে
তোমার অন্ত্যজ। বেগুনী ভবিষ্যতের আশায়—
তাকিয়ে রইলাম শুধু।
বেগুনী ফুলের গাছ
সেইখানে একটা গাছ ছিল,
রঙীন বসন্তে হালকা বেগুনী ফুল মাথায় ভরে
দাঁড়িয়ে থাকত। আর ফুরফুরে হাওয়ায় মাথা ঝাঁকাত।
আড়াইফুটি ব্যাসার্ধের গোল জায়গা
ভরে থাকত বেগুনী ফুলে।
হাতে হাত ধরে পাশ দিয়ে যেতে যেতে—
বার বার ফিরে তাকাতাম।
তাকাতে তুমি কপট রাগে
বেগুনী আভা তোমার ভ্রূভঙ্গীতে।
কাঁপা হাওয়ায় ফুল ঝরিয়ে স্বীকৃতি দিত সে।
কবিতা
রথীন্দ্রনাথ বড়াল
ডঃ নগেন ঘোষ লেন, কলকাতা

কবিতা
এহিয়া আহমেদ
বরথল কছারী গাঁও, মৈরাবারী, মরিগাঁও, অসম
আমরা একটা পাথর
আমরা নির্যাতিত, নিপীড়িত,
লাঞ্চিত-বঞ্চিত এবং শোষিত
নিস্তব্ধ আমরা,
আমরা ধৈর্য্যশীল, কর্মশীল,
শত বছর পেরিয়েও রয়েছি চুপ, থেমেছি চুপচাপ,
কেউ ছুঁয়ে যায়, কেউ এড়িয়ে যায়,
কেউ ভাঙতে চায়, কেউ গড়তে চায়।
আমাদের বুকে লেগে থাকে সময়ের ধুলো,
আলোর উষ্ণতায় ছাপ রেখে যায় দিন।
মেঘের ফোঁটা, বৃষ্টির রেণু—
আমাদের শরীরের ওপরে রেখে যায় চিহ্ন।
আমরা জেগে থাকি পাহাড়ে, নদীর পাশে,
আমরা ভাঙি ধীরে, তবু টিকে থাকি,
আমরা পাথর—শতাব্দীর সাক্ষী,
আমরা স্থিরতার প্রতীক, এক অনন্ত আঁচল।
দুগগা মাইকি
আশ্বিনের এই শারদপ্রাতে
পড়াশোনা সব উঠল লাটে
মা দুর্গার আশীর্বাদে সবাই খুশি আজ
খিচুড়ি লাবড়া মিষ্টিমুখ, নেই কিছুই কাজ
পাঞ্জাবি ও ধুতিপরা ছেলেরা সব হিরো,
পাড়ার কর্তারা বলছে ডাঁটে--
যা-যা, আজকে তোরা জিরো।
শাড়িপরা মেয়েরা হাঁটে, যেন র্যাম্পের ধাঁচে,
বন্ধুর সাথে রাতভর আড্ডা, বাড়ি ফিরে হাঁচে
সন্ধ্যা-আলোর আলপনাতে, সবাই খুশি আজ
চপ-ফুচকার লম্বা লাইন, নেই তো ক'দিন কাজ
দেখতে দেখতে এল দশমী, সিঁদুর খেলায় মাতি
রাতদুপুরে দুগগা মাইকি-- দিনটা ফাটাফাটি!
দুর্গাপুজো এমনই তো, আনন্দে আত্মহারা
আবার অপেক্ষা, পরের বছর হবই পাগলপারা।
কবিতা
দেবার্ঘ্য মুখার্জী
উৎসব সব শেষ, তাই পড়ার বোঝা বেশ
উৎসবের সব দিনগুলো শেষ, খুশিতে মোড়া ক্ষণ,
দুর্গাপুজো, কালীপুজো একে একে সবই হলো নিস্প্রাণ।
প্যান্ডেল ঘোরা, আলোর ঝলক সবাই নিলো বিদায়,
এখন শুধু বইখাতা আর পড়ার বোঝা মাথায়।
দুর্গা গেলো কৈলাশেতে, মা কালী তার মন্দিরে,
তাই আমাদের জীবন আবার বইয়ের পাতার ভিড়ে।
সামনে আবার টেস্ট পরীক্ষা, শত চিন্তার জাল,
উৎসব শেষে পড়তে বসা! এতো কাঁচা মরিচের ঝাল!
কদিন আগেও চারিদিকে পুজো পুজো গন্ধ
এখন বইয়ের পাতা দেখে মনটা লাগে দম বন্ধ।
মা বলছেন, আর পড়বি কবে সময় এতো কম,"
আমার মাথায় ঘুরছে শুধু পুজোর গান আর ঢাকের দমাদম!
বন্ধুরাও সব হতাশ মুখে,
দিনগুলো সব, কাটবে দুখে।
উৎসব শেষ তাই পড়াই বাকি, সময়টা নিদারুণ,
সাদা পাতায় অঙ্ক কষ যোগ বিয়োগ আর গুণ
